শাহীওয়াল গরু | Sahiwal cow -এশিয়ার একটি জনপ্রিয় গরুর জাত।

শাহীওয়াল গরু Sahiwal cow

শাহীওয়াল গরু | sahiwal cow -এশিয়ার একটি জনপ্রিয় গরুর জাত। শাহীওয়াল গরুর আদ্যপান্ত শীর্শক এই আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম। আপনারা নিসচয় জানেন যে শাহীওয়াল জাতের গাভী ও ষাঁড় এশিয়ার একটি জনপ্রিয় গরুর জাত। শাহীওয়াল জাতের গাভী পরিচিতি ও পালন কতটা লাভজনক সেই সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারনা থাকা দরকার।

শাহীওয়াল গরুর গড় ওজন খুব বেশি না বলেই এর খাদ্য খরচ তুলনামুলক কম ও উৎপাদন বেশি। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই গরু ব্যাপক জনপ্রীয়। এই জাতের ষাঁড় গরুর গড় ওজন- ৫০০-৭০০ কেজি আর গাভীর গড় ওজন ৪০০-৫০০ কেজি। দুধ ও মাংস দুটোই উৎপাদন করতে পারে। আমাদের দেশেও এই গরুর ভালো চাহিদা রয়েছে।

শাহীওয়াল গরুর জাত পরিচিতি

জাতের নামশাহীওয়াল / Sahiwal cow breed
জাতের ধরনমাংস এবং দুধ
উচ্চতাষাঁড়- ১০০-১২০ সেন্টিমিটার
গাভী- ৮০-১০০ সেন্টিমিটার
গড় ওজনষাঁড়- ৫০০-৭০০ কেজি
গাভী- ৪০০-৫০০ কেজি
বাছুর- ২৫ কেজি
আদি বাসস্থান মন্টোগোমারি জেলা, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত।
বিস্তৃতিভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া।
(শাহীওয়াল গরুর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি)

শাহীওয়াল গরু চেনার উপায় কী?

  • এই গরুর গায়ের রং হালকা বা গাড় লাল রং এর হয়ে থাকে।
  • গরুর পা খাট প্রকৃতির।
  • শিং খাট ও মোটা।
  • গলকম্বল বড় যা ঝুলে থাকে।
  • মাথার অংশ চওড়া
  • লেজ খাটো হয় না।

শাহীওয়াল গরুর দাম কত?

এই গরু আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রীয় ও সবচেয়ে বেশি পালনকৃত গরু। বাজারে অন্য জাতের গরুর চেয়ে এই গরুর দাম সবসময় বেশি থাকে।

এই গরু শান্ত প্রকৃতির হয় বলে পারিবারিক ভাবে সহজে পালন করা যায়।

আপনি আপনার গরু মোটাতাজাকরণ খামারে অনায়াসে এই গরু রাখতে পারেন। বাজারে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখের মধ্যে ভালোমানের ষাঁড় গরু পেয়ে যাবেন।

শাহীওয়াল গাভীর দাম কত?

বর্তমান সময়ে বাজারে শাহীওয়াল গাভীর দাম খুব একটা বেশি না। কেননা অধীক দুধ উৎপাদন গাভী হিসাবে ফ্রিজিয়ান গরুই বেশিরভাগ খামারি পছন্দ করে। বাংলাদেশে দুধ উৎপাদনে ফ্রিজিয়ানের পরেই আছে শাহীওয়াল। গ্রামের পারিবারিক খামার গুলোতে এই গরু বেশি পালন করা হয়। এই গাভীর বযস ও প্রডাকশন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এর দাম। বাজারে ৫০ হাজার থেবে শুরু করে ১ লাখ বা তারও বেশি দামের গাভী পাওয়া যায়।

শাহীওয়াল বাছুর

শাহীওয়াল বাছুরের গড় ওজন ২০-২৫ কেজি। পারিবারিক খামার গুলোতে এই বাছুরের কদর বেশি। গাভী হীটে আসলে কৃত্রিম প্রজনন কর্মী কে হরহামেসাই খামারিকে বলতে শোনা যায় এবার শাহীওয়াল বাছুর দিয়েন। আপনার খামারের জন্য এই জাতের বাছুর সংগ্রহ হরতে চাইলে পাবনা, শিরাজগন্জ, কুষ্টিয়া, যশোর এসকল এলাকার হাট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। দাম তুলনামুলক কম পাওয়া যাবে।

শাহীওয়াল গরুর বৈশিষ্ট্য সমুহ

  • শাহীওয়াল জাতের গরু সাধারণত ধীর ও শান্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  • এজাতের গরু সাধারণত লাল, হালকা লাল ও গাড় লাল বর্নের হয়ে থাকে।
  • এই গরু মোটাসোটা ভারী দেহ , ত্বক পাতলা ও শিথিল হয়ে থাকে।
  • শাহীওয়াল গরুর সাধারণত পা খাটো, শিং ছোট ও পুর, মাথা চওড়া প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  • এ জাতের গরুর গলকম্বল বৃহদাকার যা ঝুলে থাকে এবং লেজ বেশ লম্বা হয়ে থাকে।
  • এই জাতের গাভীর ওলান বড়, চওড়া, নরম ও মেদহীন হয়ে থাকে।
  • এছাড়াও বাটগুলো লম্বা, মোটা ও সমান আকৃতি বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
  • শাহীওয়াল জাতের ষাঁড়ের দৈহিক গড় ওজন ৫০০ -৭০০ কেজি হয়ে থাকে।
  • শাহীওয়াল জাতের গাভীর গড় ওজন ৪০০-৫৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
শাহীওয়াল গরু
sahiwal breed

শাহীওয়াল জাতের গাভী

শাহীওয়াল গাভী দুধ উৎপাদনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট জাত বলে সর্বোজন সিকৃত। এ জাতের গাভী স্বাভাবিক অবস্থায় পালনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৬-৮ লিটার দুধ পাওয়া সম্ভব। একটি শাহীওয়াল বক্না ২৪-২৮ মাস বয়সে প্রথম বারের মতো গর্ভধারণ করে। শাহীওয়াল জাতের গাভী পালনে ৩ টি বিষয়ে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা,
  • ওলানের বিশেষ পরিচর্যা এবং
  • খাবার ব্যবস্থাপনা।

প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সামগ্রিক বিষয়ের উপর নজড় দেয়ার চেয়ে গাভীর খাদ্যে যাতে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা। অতিরিক্ত চর্বি প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। আর গাভীর শরীরে যেন কোন ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব না থাকে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

ওলানের বিশেষ পরিচর্যা

ওলানের বিশেষ পরিচর্যা নিতে হবে। যদি ওলান অপরিষ্কার থাকে এবং ঠিক ভাবে দুধ দোহন করা না হয় তাহলে ওলান ও বাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ম্যাস্টাইটিস দ্বারা আক্রান্ত হয়। শুধু শাহীওয়াল গরু নয় সকল অধিক উৎপাদনশীল গাভীর-ই ওলানের বিশেষ পরিচর্যার দরকার আছে।

খাবার ব্যবস্থাপনা

শহীওয়াল গরুর খাবার বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা ভালো না হলে আশানুরূপ উৎপাদন আসবে না। আর তাই সুষম খাদ্যের পাশাপাশি দরকারি ভিটামিম ও মিনারেল দিতে হবে।

শাহীওয়াল জাতের গাভী হিটে আসার পর একেবারে সঠিক সময়ে বীজ দিতে হয়, সঠিক সময় বলতে ১২-১৮ ঘন্টা। ক্ষেত্র বেশেষে ডাবল ইন্সেমিনেশন করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ব্রাক ও সরকারি শাহীওয়াল গরু জাতের সিমেন গুলি অত্যন্ত ভালো মানের পাওয়া যায়।

কোনও খামারে যদি ৬/৮ লিটার দুধ উৎপাদন করে এমন ৫ টি এই জাতের গাভী থাকে তাহলে বছর শেষে খামারির নীট ২ লাখ টাকা আয় করা কোন ব্যাপারই নয়। তবে অনেক সময় উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলি মেনে চলতে হবে।

শাহীওয়াল জাতের ষাঁড়

এই জাতের ষাঁড় মাংস উৎপাদনে খুবই জনপ্রিয়। সারা পৃথিবীতে মাংস উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। মজার ব্যাপার হলো একটা ভালো মানের শাহীওয়াল ষাঁড় বাছুরের মূল্য একই বয়সের একটি ফ্রিজিয়ান বা জার্সী ক্রস বক্নার চাইতে নিশ্চিত ভাবে বেশী।

চোখ প্রশান্তির একটা ব্যাপার আছে। শাহীওয়াল জাতের ষাঁড়ের চাহিদা কোরবানি ঈদের বাজারে সবচাইতে বেশী অন্যান্য জাতের ষাঁড়ের চাইতে,তাই দামও ভালো পাওয়া যায়। যেহেতু কোরবানি ঈদে সৌন্দর্যের আলাদা একটা দাম আছে। শাহীওয়াল গরুর সৌন্দর্য দেখলে চোখটা আসলেই জুড়িয়ে যায়।

শাহীওয়াল ও সিন্ধীর মধ্যে মিল অমিল

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গরুগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জাত হলো শাহীওয়াল। শাহিওয়াল জাতের গরু পছন্দ করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়াই দায়। সৌন্দর্যে শাহীওয়াল গরুর সাথে সমানতালে লড়াই করার মত আরেকটি জাত হল সিন্ধি। রংয়ের দিক দিয়ে দুটিই জাতই লাল। এদের মাঝে শরীরের গঠন ও আকারে কিছু পার্থক্য আছে। আমাদের মাঝে লাল গরু দেখলেই শাহীওয়াল গরু ভাবার প্রবনতা সকলেরই।

আর পিওর শাহীওয়াল গরু বা সিন্ধী গরু আমাদের দেশে সেভাবে পাওয়াও যায় না। এর প্রধান কারণ পিওর ব্রীডের গরুগুলো আমাদের বাংলাদেশে সেভাবে সংরক্ষনই করা হয় নি। এতে অপরিকল্পিত ব্রিডিং হয়ে শাহিওয়াল, সিন্ধি ও দেশী সবগুলো জাত একসাথে ক্রসব্রিডিং হয়ে একাকার হয়ে গেছে। শাহীওয়াল ও সিন্ধী জাতের মধ্যে পার্থক্য –

শাহীওয়াল গরুর কালার হবে লাল বা বাদামী লাল, আর সিন্ধী গরুর কালার হবে ডিপ বা কালচে লাল। এই গরুর চোখের চার পাশে থাকবে ধূসর রিং, আর সিন্ধী গরুর চোখের চারপাশে থাকবে কালচে রিং। গরুর কপালের অংশটা সিন্ধিরর চেয়ে থাকবে প্রশস্ত। শিং হবে ভোঁতা প্রকৃতির ও ছোট আর সিন্ধী গরুর শিং হবে চোখা ও লম্বা। সব গরুতে এসব বৈশিষ্ট্য ১০০% মিলবে এটার কোন গ্যারান্টি নেই।

আরো পড়ুন: গির জাতের গরু (Gir) – ইন্ডিয়ান যে গরুটি পৃথিবীব্যাপী সবচে বেশি জাত উন্নয়নে ব্যবহার হয়েছে