চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার

চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার

চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার। চিটাগুড় বা মোলাসেস (molasses) সুগার মিলের একটি উপজাত পন্য। চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ এটি একটি বহুমুখি পুষ্টিদায়ক ও মুখরোচক তরল খাদ্য যা প্রানির খাদ্যের মাধ্যমে অনেকগুলো দরকারি পুষ্টি সরবরাহ করে। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ চিটাগুড় কে প্রাণী খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে আসলেও বর্তমান সময়ে এর বহুমুখী ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে।

চিটাগুড়ের বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে “চিটাগুড়/লালিগুড়/রাব/মোলাসেস কী এবং গবাদি প্রাণীর খাদ্য হিসেবে এর বহুমুখি ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত” শীর্ষক আমার আরেকটি আর্টিকেল রয়েছে আপনারা চাইলে সেটি পরতে পারেন।

চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ

চিটাগুড় মুলতঃ কার্বোহায়ড্রেট বা স্টার্চ জাতীয় খাদ্য হলেও এটি বহুমুখী পুষ্টিগুনের অধিকারী। জার ফলে চিটাগুড়ের ব্যবহারিক ক্ষেত্রও অনেক বেশি। নিম্নে একটি সংক্ষিপ্ত নিউট্রেশনাল এনালাইসিস দেওয়া হলো।

  1. ড্রাই ম্যাটার- ৭১%
  2. শক্তি/ক্যালোরি- ৯.৬ মেগাজুল/কেজি
  3. প্রোটিন- ৫.৫%
  4. ফ্যাট- ১.০%
  5. ফাইবার-০.১%
  6. অ্যাশ-১৪.৬%
  7. ক্যালসিয়াম- ৯.২ গ্রাম/কেজি
  8. ফসফরাস- ০.৭ গ্রাম/কেজি
  9. পটাশিয়াম- ৫১.০ গ্রাম/কেজি
  10. ম্যাগনেসিয়াম- ৪.০ গ্রাম/কেজি
  11. ম্যাঙ্গানাজ- ৭৪.০ গ্রাম/কেজি
  12. জিংক- ১৮ গ্রাম/কেজি
  13. আয়রণ- ১৭৩ গ্রাম/কেজি

চিটাগুড় ব্যবহারে উপকারিতা

  • চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ অন্যান্য উপাদানের চেয়ে অনেক বেশি। প্রচুর এনার্জি (শক্তি) সরবরাহের মাধ্যমে প্রাণিকে মোটাতাজা করে বা উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • প্রাণির শরীরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রণ সহ সকল দরকারি পুষ্টির ঘাটতি পুরণ করে।
  • খাদ্যের স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে।
  • খাদ্য গ্রহনের রুচি ও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • পরিপাক তন্ত্রের উন্নতি ঘটায়।
  • গাভী গরুর দুধের উৎপাদন রৃদ্ধি করে।
  • ছাগল ও ভেড়ার দ্রুত দৈহিক ওজন বৃদ্ধি করে।
  • মহিষ, ঘোরা ইত্যাদি কর্মঠ প্রাণির কাজ করার শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • দুবর্ল প্রাণির শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
  • দানাদার, ইউএমএস, ইউএমএমবি, সাইলেজ ইত্যাদি তৈরির অত্যবশকীয় উপাদান।
  • পুকুরের পানিতে ব্যবহারে পানির মান ও প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • খামারের খাদ্য খরচ কমায়।
চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ

চিটাগুড়ের ব্যবহার বিধি

চিটাগুড় সরাসরি আহারযোগ্য পশু খাদ্য হলেও এর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। চিটাগুড়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হচ্ছে ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র (ইউএমএস) তৈরিতে।

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান খামারীদের কে ইউএমএস তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করছে।রেডি ফিড মিলে চিটাগুড়ের ব্যপক ব্যবহার হয়ে থাকে।

এছারাও কাচাঘাস বা খড়ের সাইলেজ তৈরিতে চিটাগুড় ব্যবহার হয়।

গবাদীপশুকে চিটাগুড় খাওয়ানর সাধারণ নিয়ম

  1. বড় প্রাণি(গরু, মহিষ, ঘোড়া)- ১০০-২০০ গ্রাম/প্রতিবার খাবারের সাথে/প্রতিদিন।
  2. ছোট প্রাণি(ছাগল, ভেড়া০- ৫০-১০০ গ্রাম/ প্রতিবার খাবারের সাথে/প্রতিদিন।
  3. রেজিস্ট্রাড প্রাণি চিকিৎশক বা পুষ্টিবিদের পরার্মশ অনুযায়ি।

চিটাগুড় ব্যবহারের নির্দেশনা

  1. প্রাণি চিটাগুড় খেতে উৎসাহি না হলে প্রতিদিন খুব সামান্য পরিমানে খাওয়ার অভ্যাস করুন এতে খুব তারাতারি তার প্রিয় খাদ্যে পরিনত হবে।
  2. প্রাণিকে সঠিক নিয়মে কৃমি মুক্ত করুন এবং প্রতি ৩-৬ মাস অন্তর অন্তর কৃমি নাষক ঔষধ প্রয়োগ করুন।

চিটাগুড় সংরক্ষণ

চিটাগুড় মাটির, সিলভারের, স্টিলের, প্লাস্টিকের বা যেকোনো পরিস্কার পাত্রে বায়ুরোধী অস্থায় সংরক্ষণ করা যায় এবং এটি দুই বা ততোধিক বছর সংরক্ষণ করা যায়। চিটাগুড় সবসময় ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করুর।

আরো পড়ুন- ইউরিয়া বা নন প্রোটিন নাইট্রোজেন

6 thoughts on “চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার”

  1. রফিকুলইসলাম

    প্রানিসম্পদের জন্য চিটাগুড়ের গুরুত্ব অপরিসীম তাই প্রযোজন মাপিক চিটাগুড় আমরা আমাদের পশুকে খাওয়াবো ডক্টরের পরামর্শ মোতাবেক।

  2. জুয়েল

    চিটাগুর কি পুকুরে প্রয়োগ করা যাবে। ১,০০,০০০ লিটার পানিতে কি পরিমান দিতে হবে।

  3. ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য।

  4. ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য

Comments are closed.