ব্রাহমা গরু -সবচেয়ে জনপ্রীয় বিফ ব্রিড

ব্রাহমা গরু

ব্রাহমা গরু (Brahman cattle) -সবচেয়ে জনপ্রীয় বিফ ব্রিড। যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুসারীদের নামকরণ করা হয়েছে, ব্রাহ্মণ গরু যে এখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মাংস গরু হিসাবে জনপ্রিয়, তারা আসলে দেশীয় জাত নয়। এটি জেবু (বস ইন্ডিকাস) জাতের 4/5 গরু প্রজননের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান ব্রাহমা জাতের গরুর উৎস দেশ আমেরিকা।

ব্রাহমা জাতের গরুর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জাতের নামব্রাহমান / Brahman
জাতের ধরণমাংশ / Meat
গড় ওজনষাঁড়ঃ ৮০০-১১০০ কেজি
গাভীঃ ৫০০-৭০০ কেজি
বাছুুরঃ ৩০-৩৫ কেজি
আদি বাসস্থানআমেরিকা
বিস্তৃতিআমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত সহ সমগ্র পৃথিবী

ব্রাহমা গরুর উৎস দেশ

ব্রাহমা জাতের গরু এখন পৃথিবীর প্রায় সব গরু পালনকারী দেশ গুলোতে পাওয়া যায়। এই গরুর আদি উৎস দেশ ইন্ডিয়া হলেও বর্তমানে যে ব্রাহমা গরু দেখতে পাওয়া যায় সেটার আদি উৎস আসলে ভারত নয়।

আর এটার নাম ব্রাহমান হলেও এটা মূলত ‘আমেরিকান ব্রাহমা ব্রীডারস এসোসিয়েশন’ কর্তৃক উদভারিত গীর, সাহিওয়াল, কংকরেজ সহ বস ইন্ডিকাস জাতের আরো কয়েকটি গরুর একটি সম্মিলিত রূপ বলা যায়।

‘আমেরিকান ব্রাহমা ব্রীডারস এসোসিয়েশন’ এর প্রথম সেক্রেটারি জনাব স্টার্টওয়েল এ সম্পর্কে বলেন : ‘এটা মাংসের জন্য সম্পূর্ণ নতুন জাতের একটি গরু। আর এ কারনেই উৎস দেশ আমেরিকা বলা হয়।

ব্রাহমা জাতের গরুর ইতিহাস

ব্রাহ্মণ অতি পুরানো জাতের গরু বলে এর সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। গবাদিপশু ইতিহাসবিদদের ধারণা অনুযায়ী আজ থেকে ৪০০০ বছর আগেই থেকেই ভারতে এই জাতের গরু পালন হয়ে আসছে।

ভারতের পবিত্র গরু বলে পরিচিত ইন্ডিয়ান আদি জাত। বর্তমানে যে জাতটি এখন পৃথিবীর সকল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি মূলত নতুন জাতের একটি ক্রস গরু। যেটা শুরু হয়েছে ছিলো ১৮০০ সালের পরে ব্রাজিলে।

সেখানে গির, অঙ্গল, কংকরেজ এর সমন্বয়ে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ‘ইন্দুব্রাজিল’ নামের এক গরুর জাত তৈরি করে পালন করা হতো। সেই গরুর সাথে নতুন জাতের ক্রস করিয়ে আমেরিকাতে এর উন্নয়ন করা হয়।

২০০০ খ্রিস্টপূর্ব : ইনডিয়াতে এ জাতের গরু পালন।
১৮৪৯ সাল : ডঃ. ডেভিস এর মাদ্ধমে প্রথম আমেরিকায় এই গরুর আগমন হয়।
১৮৫৪-১৯২৬ : বিভিন্ন জাতের ২২৬ টি ষাঁড় এবং ২২ টি গভীর মধ্যে ক্রস করে জাত উন্নয়ন করা হয় এবং নামকরণ করা হয়।
১৯২৪ : মার্কিন ব্রাহমা ব্রীডারস এসোসিয়েশন গঠন করা হয়।
১৯৪৬ : অস্ট্রেলিয়ান ব্রাহমা ব্রীডারস এসোসিয়েশন গঠন করা হয়।
১৯৫৪ : প্রথম সাউথ আফ্রিকা তে আমেরিকা থেকে এই জাতের গরু আমদানি করা হয়।

ব্রাহমা গরু
ব্রাহমা জাতের গরু

এ জাতের গরু পালনকারী দেশ সমূহ

আদি জাত ইন্ডিয়ান হলেও পৃথিবীর খুব কম গরু পালনকারী দেশ আছে যেখানে নতুন জাতের ব্রাহমা গরু পৌঁছে নাই। যদিও এটা এক এক দেশে এক এক নামে পরিচিত। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পালনকারী দেশ হচ্ছে : আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ইন্ডিয়া, নিউজিলান্ড, সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া। অস্ট্রেলিয়ার মাংস উৎপাদনের প্রায় ৫০% মাংস এই গরু থেতে আসে।

ব্রাহমা জাতের গরুর বৈশিষ্ট ও সুবিধা

এর আদি জাতের রং সাদা হলেও বর্তমান সময়ে অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন রং এর হয়ে থাকে। তবে মার্কিন ব্রাহমন গরুতে সাদা এবং কালো রং এর আধিক্য বেশি দেখা যায়। এটি আসলে অত্যন্ত রোগ প্রতিরোধী এবং শক্ত জাতের গরু থেকে উন্নয়ন করা হয়েছে বলেই এই জাতের গরুর রোগ বালাই খুব কম দেখা যায়। মাংসের জন্য দুনিয়াজোড়া খ্যাতিিএই গরু খুব সহজেই গরম ও আদ্রতা সহ্য করতে পারে।

এই জাতের গরুর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে অতি গরমের সময় এই গরু ঘেমে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে পারে। গবেষণায় আরো দেখা যায় এই জাতের গরু শরীরে তুলনামুলক কম তাপ উৎপন্ন হয়।

প্রচন্ড সূর্যের তাপেও এই গরু খোলা জায়গা ঘাস খেতে পারে বলে পৃথিবীর অনেক স্থানে এই গরু ছেড়ে ঘাসের উপর নির্ভর করে পালন করা হয়। আরো দেখা যায় ক্ষতিকর পরজীবী এই গরুকে সহজে আক্রমণ করতে পারেনা।

দুধ ও মাংস উৎপাদন সক্ষমতা

মাংস উৎপাদনে এই নতুন সৃষ্ট ব্রাহমন গরু পুরো পৃথিবীতে খ্যাতি ছড়ালেও দুধ উৎপাদনে ঠিক বিপরীত অবস্থায় আছে। ছোট দুধ উৎপাদন সময়ের এই গরুর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সন্তোষজনক না। ৩-৫ লিটার। তবে দুধের মান খুবই উন্নত। অধিক মিল্কফ্যাট এবং মিল্ক প্রোটিন বিদ্যমান থাকায় এই জাতের গরুর দুধ খেতে খুেই সুস্বাদু।

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বা দেশে ক্রস ব্রাহমা গরু থেকে উন্নয়ন করা বিভিন্ন জাতের গরু :

১. ব্রাঙ্গুস (ব্রাহ: + আঙ্গুস)
২. ব্র্যাফোর্ড (ব্রাহ: + হেরাফোর্ড)
৩. বীফমাস্টার (ব্রাহ: + হেরিফোর্ড+ মিল্কিং শর্টহর্ন )
৪. ছাড়বড়ে (ব্রাহ: + কারোলাইস)
৫. সিমব্রা (সিমেন্টাল + ব্রাহ:)
৬. শান্তা গেরট্রুডিস (ব্রাহ: + বীফ শর্টহর্ন)

মংস উৎপাদনে

মাংস উৎপাদনে এই গরুর জুড়ি মেলা ভার। প্রথিবীর শ্রেষ্ঠ মাংস উৎপাদন কারী জাত এটি। এই গরুর মাংস অত্যান্ত সুস্বাদু। এই গরুর এফসিআর অনেক বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলে পালনে কোন সমস্যা হয় না। একটি ষাঁড় গরুর গর ওজন হয়ে থাকে ১১০০ কেজি।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

যেহেতু পৃথিবীর মাংসের বাজার মার্কিন ব্রাহমা গরু এবং এটা থেকে উন্নয়ন করা গরু নিয়ন্ত্রণ করে তাই অর্থনৈতিকভাবে এই গরুর গুরুত্ব অপরিসীম। মাংসের জন্য এই গরু পালন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া তে উন্মুক্ত মাঠে ছাড়া অবস্থায় পালন করা হয় এবং তারা কম খরচে অধীক মাংস উৎপাদন করে। আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই গরুর অর্থনৈতিক েএকেবারে কম নয় বলে আমার মনে হয় না।

বাংলাদেশের আবহাওয়া ব্রাহমা গরু পালনের উপযোগী। তাই এ জাতে গরু দ্রুততম সময়ের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমাদের আমিষের ঘাটতি পূরণে যেমন সহায়ক হবে একইসাথে অন্যদেশ থেকে আর আমাদের গরু আমদানী করতে হবেনা। বাংলাদেশের এক খামারে ব্রাহমা গরুর বীজ দিয়ে যে বাছুর এসেছে তার ১৭ মাস বয়সে ওজন দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কেজি অর্থাৎ ১১ মণ ১০ কেজি।

এই বয়সে আমাদের দেশি বা অন্যান্য জাতের গরুর ওজন ১০০-১৫০ কেজি ছাড়ায় না। এখানেই তো এই গরুর জাতটির বিস্ময়। খামারি বলেন প্রাকৃতিক সব খাবারই খায় গরুটি, সঙ্গে একটু দানাদার খাদ্য দিলেই চলে। দিনে ওজন বাড়ে প্রায় এক কেজি।

ব্রাহমা জাতের বীজ বা সিমেন

বাংলাদেশে এখন খুবই এভেইলেবল অরিজিনাল আমেরিকান ১০০% বীজ। এসিআই কম্পাণি সহ বেস কয়েকটি কম্পাণি বর্তমানে এই বীজ আমদানি করছে। বীজের দাম ও হাতের নাগালে আমার দেখা মতে প্রজনন কর্মি গণ এই বীজ দ্বারা প্রজনন করিয়ে ১২০০৳-১৫০০৳ নিয়ে থাকে। সম্প্রতি আমাদের দেশের কিশোরগঞ্জে দেশি গাভিতে কৃত্রিম প্রজনন করে ব্রাহমা জাতের চারটি ষাঁড় গরু পেয়ে ছিলেন মোহাম্মদ আলী নামের এক কৃষক। তিন বছর পরিচর্যার ও লালন পালন করার পর প্রতিটি গরুর গড় ওজন হয়েছে ২৭ মণ। ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় গরু গুলো বিক্রি করা হয়েছে।

ব্রাহমা গরু পালনে সমস্যা

যেহেতু Brahaman মাংসের গরু এবং মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। এই গরু যেহেতু খোলা জায়গা ঘাস খাওয়ানোর মাধ্যমে বেশির ভাগ দেশে পালন করা হয় সেহেতু আমাদের দেশে এই গরু পালন লাভজনক নাও হতে পারে। আমাদের দেশে সরকারি ভাবে এই ব্রিড কে অনেক সময় গ্রামীন জনপদে নিরুৎসাহিত করা হয়।

আরো পড়ুন- শাহীওয়াল | এশিয়ার একটি জনপ্রিয় গরুর জাত।