গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি

গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি

গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি কী ও বৃদ্ধির উপায় শীর্ষক আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম। গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বলতে বোঝায় পশুর দেহে কোনো রোগ সংক্রামক জীবাণুর আক্রমন প্রতিরোধ করার সামর্থ্য কে। যদি কোনো রোগ সংক্রামক জীবাণুর আক্রমণ থেকে গরু সহজে আক্রান্ত হয় তাহলে বুঝতে হবে ঐ পশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি ভালো না।

আর গরু যদি আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত ধকল সহ যেকোন স্বাভাবিক ধকল সহজে মানিয়ে নিতে পারে তাহলে বুঝতে হবে ঐ পশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি ভালো।

গরুর রোগ সংক্রামক জীবাণুসমূহ

গরুর রোগ সংক্রামক জীবাণু হচ্ছে এমন কিছু অনুজীব যা গরুর শরীরে আক্রমণ ও বংশবিস্তার করে রোগ উৎপন্ন করে এবং কখনো কখনো মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। জীবাণুর পশ্চিমা পরিভাষা হচ্ছে প্যাথোজেন। গরুর শরীরে সাধারণত নিম্নোক্ত জীবাণুর সংক্রমণ দেখা যায়।

  • ভাইরাস,
  • ব্যাকটেরিয়া,
  • প্রোটোজোয়া ও
  • অন্য কিছু অণুজীব

গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার গুরুত্ব

গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে আমরা যদি আমাদের গরু-ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বা তাদের ইমিউনিটি সিস্টেম ডেভেলপ করতে না পারি তাহলে যতই ভ্যাক্সিন বা বিভিন্ন রোগের জন্য ঔষধ প্রয়োগ করি না কেনো কখনোই স্থায়ী সমাধান অসবে না। ঐ গরু-ছাগল গুলি তখন ঔষধ নির্ভর হয়ে পরবে, ফলে খামারে ওষুধ খরচ তো বাড়বেই এবং সাথে সাথে উৎপাদনেও সেটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এর ফলে ধীরে ধীরে আপনার খামার লোকসানের পথে এগিয়ে যাবে। কাজেই লাভজনক এবং টেকসই খামার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে গরু-ছাগলের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আপনার খামারের গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি ভালো থাকে তাহলে ক্ষুরা রোগ বা এফ,এম,ডি এর মতো ভয়াবহ রোগ হলেও দেখবেন সেগুলি সাধারণ চিকিৎসায় দ্রুত সেরে উঠবে। নচেৎ ক্ষুরা রোগ বা FMD সারতে বহু সময় লেগে যাবে। ম্যাস্টাইটিস বা অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
গরুর ইমিউনিটি

গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি বা ভালো করার উপায়

সাধারণত ভালো স্বাস্থ্য সম্পন্ন গরু-ছাগল গুলির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হয়ে থাকে। গরু-ছাগলের খাদ্যে যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই ভালো হবে। গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে অনুসরণ করতে হবে।

কাচা ঘাস

গবাদিপশুকে পর্যাপ্ত কাচা ঘাস শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করলে তাদের উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে স্বাভাবিকভাবেই। কাচা ঘাস থেকে গরু হাই কোয়ালিটি ডাইজেস্টেবল ফাইবার ও ভিটামিন-মিনারেল পেয়ে থাকে। যা গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কে ভালো রাখে। যদি পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাসের অভাব থাকে তাহলে ভিটামিন ও মিনেরাল সাপ্লিমেন্টারী খাদ্যে সরবরাহ করতে হবে।

সুষম দানাদার খাদ্য

গরুকে তার খাদ্য চাহিদার ৪০% দানাদার খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এবং সেই দানাদার খাদ্য টি সূষম হতে হবে। খাদ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত থাকতে হবে। এতে গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

খাদ্যে প্রোটিনের সরবরাহ থাকতে হবে কমের পক্ষে ২০%-২৫%। প্রোটিন বা আমিষ পশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।এই প্রোটিন কিন্তু হতে হবে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। আবার একচেটিয়া কার্বোহাইড্রেট বাড়ানো যাবে না গবাদিপশুর খাদ্যে, এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমার সাথে সাথে সংক্রামক অনুজীবের আক্রমন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

ভিটামিন-সি

ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট আকারে গবাদিপশুর খাদ্যে সরবরাহ করলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে বহুলাংশে।

ভিটামিন সি তে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা প্রকারান্তরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বা গবাদিপশুর দেহের ইমিউনিটি সিস্টেম ডেভেলপ করে।

আর এই ভিটামিন সি কিন্তু ন্যাচারালি আমচিটাগুড়া পেতে পারি লেবু, আম-কাঠালের চোচা, পেঁপের চোচা, বিভিন্ন সবজি ও সবজির অবশিষ্ট, টমেটো যা মৌসুমে স্বস্তায় পাওয়া যায়।

ফিড সাপ্লিমেন্টস ও এডিটিভস

খাদ্যে বিভিন্ন ফিড সাপ্লিমেন্টস ও ফিড এডিটিভস ব্যবহার করলে খাদ্যের গুনগত মান বৃদ্ধি পায়। এতে গরুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গরুর খাবারের গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লিমেন্টস ও এডিটিভস গুলো হলো-

  1. ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট (DCP)
  2. ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স
  3. ডিএল-মিথিওনিন
  4. এল-লাইসিন
  5. এনজাইম
  6. টক্সিন বাইন্ডার
  7. মল্ড ইনহিবিটর
  8. প্রোবায়োটিক

গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি গরুর স্বাস্থ্য ও উৎপাদনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখতে গরুকে সূষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গরুর শরীরে যাতে কোনো প্রকার দরকারী উপাদানের ঘাটতি না থাকে সে জন্য দানাদার খাদ্যে ফিড সাপ্লিমেন্টস ও ফিড এডিটিভস যুক্ত করতে হবে।

আরো পড়ুন- গবাদিপশুর ক্ষুরা রোগ বা এফএমডি ভাইরাস