মুরগির ফাউল কলেরা (Fowl Cholera in Poultry) রোগ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন

মুরগির ফাউল কলেরা

মুরগির ফাউল কলেরা (Fowl Cholera in Poultry)। মুরগির ক্ষেত্রে এটি ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্ট একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। মুরগির ফাউল কলেরা রোগের জীবাণুর নাম পাস্তুরিলা মালটোসিডা (Pasteurella multocida)। আমাদের দেশের মুরগির খামার গুলোতে প্রায়ই  মরক আকারে এ রোগ দেখা যায়। 

দুই থেকে চার মাস বয়সের মুরগিতে এই রোগ বেশি দেখা যায়। অতিরিক্ত গরম পড়লে মুরগির ফাউল কলেরা রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া পরিবেশে বেশি পরিমান আদ্রতা থাকলে ও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০-৭৫% পযন্ত হতে পারে। এতে খামার অধীক ক্ষতি সম্মুখীন হয়।

মুরগির ফাউল কলেরা রোগ পরিচিতি

রোগের নামমুরগির ফাউল কলেরা (Fowl Cholera in Poultry)
রোগের ধরণমুরগির ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ
জীবাণুর নামপাস্তুরিলা মালটোসিডা (Pasteurella multocida)
সংক্রমণপোল্ট্রি
মৃত্যুর হার৫০-৭৫%
সংক্রমন সময়যেকোন বয়সে তবে ২-৪ মাস বয়সে বেশি।
চিকিৎসাআছে
মুরগির ফাউল কলেরা (Fowl Cholera in Poultry) রোগ
পাস্তুরিলা মালটোসিডা (Pasteurella multocida)

রোগ ছড়ানোর মাধ্যম

  1. সাধারনত দূষিত পানি ও দূষিত খাদ্যের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
  2. রোগাক্রান্ত মুরগির  পায়খানা, অন্যান্য মিশ্রিত পদার্থ, মুরগির লিটার, ফার্মের ব্যবহৃত খাদ্য পাত্র, পানির পাত্র ও মানুষের জুতার মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে এবং সুস্থ মুরগির আক্রান্ত হতে পারে।

মুরগির ফাউল কলেরা রোগের লক্ষণ

তীব্র আকারে আক্রান্ত হলে হঠাৎ সেডের মধ্যে মুরগি মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃদু আকারে আক্রান্ত হলে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সবুজ বা হলুদ বর্ণের পাতলা পায়খানা করতে দেখা যায়।

  • সবুজ হলুদ বর্ণের পাতলা পায়খানা করে। 
  • মুরগির পাখা বাডানা ঝুলে পড়ে নাক ও মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে।
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
  • মোরগ-মুরগির ক্ষেত্রে মাথার জুটি ও কানের লতির নিলাম রং ধারণ করে।
  • ডিম পাড়া মুরগির ডিম কমে যায় বা ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
  • মোরগ ও মুরগি  ঝিমাতে থাকে।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট

  • লিভার, প্লীহা, বৃক্ষ ইত্যাদি অংশে রক্তের ফোটা দেখা যাবে।
  • লিভার বা যকৃত কিছুটা বড় হয়ে যাবে এবং ছোট ছোট অসংখ্য সাদা দাগ পরিলক্ষিত হবে।
  • অন্ত্রে রক্তক্ষরণ দেখা যাবে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা বা দমন

নিচে উল্লেখিত যেকোনো একটি ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। ওষুধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট বা প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।

মুরগির ফাউল কলেরা

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

মুরগির খামার সর্বদা স্বাস্থ্যসম্মত অবস্থায় রাখতে হবে। অসুস্থ মুরগিকে তাৎক্ষণিকভাবে আলাদা করে চিকিৎসা দিতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সব মুরগিকে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে এবং ঘরটি সম্পূর্ণরূপে জীবানুনাশক দিয়ে শোধন করা উচিত। মুরগিকে নিয়মিত মুরগির ফাউল কলেরা রোগের টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

  • মুরগির খামারে গরম বেশি পড়লে ভিটামিন সি / বিটেইন হাইড্রোক্লোরাইড দেয়া যেতে পারে।
  • ফাউল কলেরা রোগের ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • খামারে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
  • খামারে ইদুর ও বন্য প্রাণির উপদ্রুপ সম্পুনরুপে বন্ধ করতে হবে।
  • সব সময় একজন ভাল রেজিস্টার্ড ভেটরিনারিয়ানের পরামশ নিতে হবে।

মুরগির কলেরার ভ্যাকসিন বা টিকা

মুরগির ফাউল কলেরা রোগ প্রতিরোধের অন্যতম মাধ্যম ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদান। মুরগির কলেরা রোগের ভ্যাকসিন সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পাওয়া যায়। এসিআই এনিমেল হেল্থ মুরগির ফাউল কলেরা রোগের ভ্যাকসিন আমদানি ও বাজারজাত করে। এছাড়াও সরকারি ভাবে দেশের উপজেলা ও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসগুলোতে এ টিকা পাওয়া যায়। সরকারি ফাইল কলেরা রোগের ভ্যাকসিনের দাম ৩০ টাকা প্রতি ১০০ ডোজ।

মুরগির কলেরা রোগের চিকিৎসা

এটি একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ। তাই এন্টিবায়টিক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ তাই যে কোন একটি ভালো এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। সে হিসাবে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, জেন্টামাইসিন, এমক্সাসিলিন দেওয়া যেতে পারে। এবং ৩-৫ দিন দেয়া যেতে পারে। এছাড়া যেহেতু পায়খানার সমস্যা আছে তাই একটি সালফার গ্রুপের ঔষধ দিতে হবে।যেমনঃ  Ati vet suspension/ Sulphatrim powder/S-trim vet ৩-৫ দিন এন্টিবায়োটিক এর সাথে দিতে হবে।

মুরগির কলেরার ঔষধ

এছাড়াও-

  • Cotroa-Vet Powder ( কট্ট-ভেট পাউডার )
  • Cotrimi- Vet Suspension ( কোট্রিম-ভেট সাসপেনশন )
  • Enrofloxacin-Vet Sulution ( এনফ্লুক্র- ভেট সলিউশন ) ইত্যাদি থেকে যে কোন একটি ব্যবহার করুন ।
  • সাথে, একটি  লিভার টনিক ( Liver Tonic) এবং এলেকট্রলিটি পাউডার ( Electrolyte powder ) ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রয়লারে এ রোগ কেম দেখা যায়। লেয়অর মুরগিতে এই রোগ হলে ডিমের উৎপাদন কমে যায় ও মুরগি কিছু কিছু করে মারা যেতে থাকে।

আরো পড়ুন- গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি।