গরু ছাগলের প্রসাব আটকে যাওয়া বা ইউরোথিলিয়াসিস রোগ

গরু

গরু ছাগলের প্রসাব আটকে যাওয়া বা ইউরোথিলিয়াসিস রোগ। ছাগলের প্রসাব আটকে গেছে এটা খুবই পরিচিত ঘটনা। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মতে বছরে ৫ লাখ গবাদিপশু প্রসাব আটকে যাওয়া বা ইউরোথিলিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পশু হাসপাতালে আসে। এই রোগের সহজ সমাধান না থাকায় এর অধিকাংশই মারা যায়। মুত্রনালীতে পাথর, কিডনিতে পাতর, শরীর কষা প্রভৃতি নামে এ রোগ পরিচিত।

প্রসাব আটকে যাওয়া বা ইউরোথিলিয়াসিস রোগের লক্ষণ

প্রসাব আটকে যাওয়া বা ইউরোথিলিয়াসিস রোগে আক্রান্ত গরু, ছাগল বা ভেড়া তিন থেকে পাঁচ দিন বা তারও বেশি সময় প্রস্রাব করতে পারে না। প্রচণ্ড ব্যথা ও যালা যন্ত্রণা অনুভব করে। মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমে থাকায় পেট ফুলে যায়। একপর্যায়ে মূত্রথলি ফেটে প্রাণীটির মৃত্যু হয়। চিকিৎসায় অল্প সংখ্যক ছাগল গরু কিছুদিনের জন্য এই রোগ থেকে নিরাময় হলেও পুনরায় মূত্রনালিতে পাথর জমতে দেখা যায়।

প্রাথমিক ক্লিনিকাল লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-

  1. প্রসাবে রক্ত
  2. প্রস্রাব করা স্ট্রেইন
  3. প্রস্রাব উত্পাদন হ্রাস
  4. বেদনাদায়ক প্রস্রাব
  5. দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রস্রাব করা
  6. প্রস্রাব ড্রিবলিং
  7. লেজ পতাকাঙ্কিত করা
  8. পেটে ব্যথা (চারটি অঙ্গ প্রসারিত করা, পেটে লাথি মেরে, পাশের দিকে তাকানো)
গরু ছাগলের প্রসাব আটকে যাওয়া বা ইউরোথিলিয়াসিস রোগ

দেরীতে ক্লিনিকাল লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-

  1. ক্ষুধামান্দ্য
  2. অলসতা
  3. পেটের ফোলাভাব
  4. প্রিপুসের চারপাশে ফোলা
  5. প্রাণীটি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে এবং উঠতে পারে না। অবশেষে হঠাৎ মারা যায়।

কোন কোন গবাদিপশুতে এরোগ দেখা যায়?

প্রসাব আটকে যাওয়া বা ইউরোথিলিয়াসিস রোগ সাধারণত স্মল রুনেন্টস যথা ছাগল, ভেড়া, বাছুর, শুকর ইত্যাদি প্রানীতে বেশি দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত গরুর বাছুর এবং ছাগলের মৃত্যুর হার শতভাগ। পরিণত বয়সের ছাগল ও গরুর সাধারণত এ রোগ হয় না। ছয় থেকে আট মাস বয়সী খাসি ছাগলের এই রোগ বেশি হযতে দেখা যায়।

গরু ছাগলের প্রসাব আটকে যাওয়া

কেন হয়?

গরু-ছাগলের প্রসাব আটকে যাওয়া বা মুত্রনালীতে পাথর হওয়ার কারণ হলো খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পুষ্টিগত ত্রুটি হওয়া। ছাগল, ভেড়া ও বাছুরকে সবসময় বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সশ্য যেমন ধান, চাল, গম, ভুট্টা, ছোলা, খেসারী ইত্যাদি খাওয়ালে এবং আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমন খড়, ঘাস ইত্যাদি কম খাওয়ালে এ রোগ হওয়ার ঝুকি বৃদ্ধি পায়।

খাদ্যে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকলে মুত্রনালীতে পাথর হতে পারে। কিম বয়োসী গবাদিপশুর খাদ্যে বেশি পরিমানে পসফরাস থাকলে তা প্রসাবের ফসফরাস লেভেলকে বাড়িয়ে দেয়। এই ফসফরাস ছাগলের আকাবাকা এবং দীর্ঘ মুত্রনালী হতে সম্পূর্ণ অপসারিত হতে পারে না এর ফলে পাথর তৈরী হয়।

মূত্রনালীর পাথর বা ক্যালকুলি সাধারণত খাসি ছাগলদের বেশি প্রতিফলিত হয়। যদিও কয়েকটি ক্ষেত্রে পাঠি ছাগলেও এই পাথর থাকতে পারে কিন্তু এটা মধ্যে বিরল। খাসি ছাগলের দীর্ঘ মূত্রনালী রয়েছে যা এই অবস্থার জন্য কারণ। কিন্তু মহিলা ছাগলের মূত্রনালী সোজা এবং ছোট।

আরো পড়ুন: গরুর মুখের রুচি বৃদ্ধির ঔষধ ও রুচি কমে যাওয়ার কারণ