টব ও চাষাবাদের মাটি- ধরণ, গঠন ও অম্লত্ব

টব ও চাষাবাদের মাটি

 পৃথিবীর লম্বচ্ছেদ পরীক্ষা করলে কয়েকটি স্তরের অবস্থান স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন  অংশে জৈব থাকার দরুন মাটি দেখতে কিছুটা কাল বর্ণের। কাজে অংশটি খুব উপযোগী। নিচের অংশে জৈব পদার্থের পরিবর্তে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ জমা থাকে। মাটি ভূপৃষ্ঠ  অংশটিকে বোঝায়। ক্রমাগত চাষের মাধ্যমে এই অংশের পরিচর্যার হলে মাটি বেশি চাষ উপযোগী হয় ওঠে। অর্থাৎ চাষের কাজে জৈব পদার্থের ব্যবহারে ও চাষে উৎপন্ন উদ্ভিদ কিছু অংশ মাটিতে যুক্ত হওয়ার ফলে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মাটির ধরণ

 চাষ উপযোগী মাটিতে কাদাকণা, পলিকণা ও বালিকণা বিভিন্ন অনুপাতে যুক্ত থাকে এবং ওই অনুপাতের উপর মাটির ধরণ ও স্বরূপ নির্ভর করে। যেমন, মাটিতে কাদা কণার পরিমাণ বেশি থাকলে মাটি হবে ভারী। বিপরীত পক্ষে,  বালির পরিমাণ বেশি থাকলে মাটি হবে হালকা। মাটি খুব  আঠালো হালকা মাটি খুব ঝরঝরে।

দো-আঁশ  মাটি

 যে মাটিতে কাদা কনা ও বালি সম পরিমাণে থাকে তাকে দো-আঁশ  মাটি বলা হয়। ফুল ফল ও সবজি চাষে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী।ভারী মাটিতে কাদার ভাগ বেশি থাকার দরুন জল শুইয়ে নিচের দিকে যেতে পারে না।

পলিমাটি

পলি কনার গুন বালির কণা ও কাদা কনার মাঝামাঝি। এটি এপ্রকার স্ফটিক জাতীয় পদার্থ।কাদা কর্নার গঠন; কারণ কাদা কনা হচ্ছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম, বালি তার তুলনায় অত্যন্ত মোটা। তাই মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি হলে মাটির গঠন হবে মোটা।

বেলেমাটি

মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি হলে মাটির গঠন ও হবে মোটা। মাটিতে বায়ুর স্থান থাকে না। কাজেই মাটির বাতায়ন শিকড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুব দরকারি। 

সাধারণত মাটির গঠন বোঝাতে কয়েকটি বিশেষ শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন দোআঁশ মাটি, হালকা দোআঁশ মাটি, বেলে মাটি, হালকা বেলে মাটি, ভারী মাটি, এটেল মাটি ইত্যাদি। দোআঁশ মাটি বোঝাবে যে মাটিতে শতকরা 50 ভাগ কাদা ও বাকি 50 ভাগ থাকে বালু কণা ও পলি কনার  মিশ্রণ। ভারী দোআঁশ মাটিতে কাদা কণার ভাগ আনুপাতিক হারে বেশি থাকে। হালকা দোআঁশ মাটিতে কাদা কণার পরিমাণ কম ও বালির পরিমাণ বেশি, তাই কাদা ও বালিকে প্রধান অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

 এটেল মাটি কে ভালো দোআঁশ মাটি করতে হলে ওতে প্রয়োজনমতো বালি মিশিয়ে নিতে হবে। পক্ষান্তরে হালকা মাটিকে কিছুটা ভারী করতে হলে ওতে পরিমাণমতো কাদা মিশিয়ে নিতে হবে।

মাটির গঠন

মাটির ভালো গঠন স্বীকৃতির পক্ষে খুব সহায়ক। মাটির ঝুরঝুরে পা দানা দানা গঠন আনতে হলে যথেষ্ট পরিমাণে হিউমাস বা বদ মিশাতে হবে। মাটির হিউমাস বাড়ানোর জন্য কম্পোস্ট সার, পাতাসার, গোবর সার প্রভৃতি জৈব সার ব্যবহার করা হয়। টবের মাটি তৈরির জন্য বাতাসার সবচেয়ে বেশি দরকারী বলে বিবেচিত হয়।

 পাতাসারের অভাবে কম্পোস্ট গোবর সার ব্যবহার করা যেতে পারে। মাটিতে চুন প্রয়োগ করে মাটির গঠন এর উন্নতি সাধন করা যায়। এমনকি চুন প্রয়োগ করে আঠালো এটেল মাটি কে দানাদার করে তোলা যায়। ওই দানাদার গঠন মাটির বাত্মন ও জল নিকাশের পক্ষে সুবিধাজনক।

মাটির অম্লত্ব

 কোন মাটি অম্ল, ক্ষারীয় বা প্রশম ধর্মী হতে পারে। অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্ধারণের মাপকাঠি হলো পিএইচ ভ্যালু। পিএইচ এর মান 1 থেকে 14 পর্যন্ত হয়। মাটির পিএইচ 7 হলে এটি প্রশম। 7 এর নিচে মাটি অম্ল ও 7 এর উপরের মাটি ক্ষারীয় বলে ধরা হয়। সাধারণতঃ পিএইচ 5.5 এর উপরে মাটিতে ব্যাকটেরিয়া সুষ্ঠুভাবে বংশবৃদ্ধি ও জীবন ধারণ করতে পারে। জীবাণুরা অ্যামোনিয়া কে অনায়াসে নাইট্রোজেন এ রূপান্তরিত করতে পারে।

 মাটির অম্লত্ব প্রশমনের জন্য চুন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন প্রকারের বাজারে পাওয়া যায় যা এ কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন লাইমস্টোন, ডলোমাইট, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা চক পাউডার।

আরো পড়ুন: টবে জবা ফুল যেভাবে করতে হয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *