গাছের খাদ্য উপাদান ও সার

গাছের খাদ্য উপাদান ও সার

গাছের খাদ্য উপাদান ও সার সম্পর্কে কিছুটা পরিচিতি থাকা আমাদের সকলেরই প্রয়োজন। গাছ মাটি ও বাতাস থেকে তার শরীরের পুষ্টির জন্য গাছের খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে থাকে। এজন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজন হয়। আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, ক্লোরিন ও সিলিকন অল্প মাত্রায় গাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

গাছের অনুখাদ্য

 অতি অল্প মাত্রায় লাগে কপার, জিংক,  বোরন ইত্যাদি এবং যে কারণে এগুলি অনুস্বার নামে পরিচিত। যদি গাছ ক্লোরিন ও সিলিকন গ্রহণ করে তা গাছের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় নয়। গ্যাস বায়ুমন্ডলে থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।

গাছের খাদ্য উপাদান গ্রহণ পদ্ধতি

এসব সব উদ্ভিদ খাদ্যের উপাদান প্রকৃতির মাধ্যমে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। একে অপরের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। উদ্ভিদ কিন্তু এগুলিকে যৌগ অবস্থায় তাদের কাজে লাগায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বায়ুমণ্ডলের অধিকাংশ নাইট্রোজেন থাকা সত্বেও রাস্তা শরীরে কাজে লাগাতে পারে না।

কিন্তু যখন নাইট্রোজেন অক্সিজেন এর সঙ্গে গ্রুপে নাইট্রেট বা হাইড্রোজেনের সঙ্গে গ্রুপে এমোনিয়া তৈরি করে তখন তা গাছের খাদ্যে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে গাছ ফসফরাস কে ফসফেট ও পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কি তাদের লবণ রূপে গ্রহণ করে।

এই রাসায়নিক যৌগ গুলি যা গাছ গ্রহণ করে তা গাছের খাদ্য উপাদান বলে পরিচিত। কার্বন (যা গাছ সবুজ পাতার সাহায্যে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে গ্রহণ করে) ছাড়া অন্যান্য খাদ্য উপাদান গুলি গাছ মাটি থেকে জলের সাহায্যে গ্রহণ করে। কিন্তু এই খাদ্য বস্তু মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও তার খুব অল্প অংশ গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় পাওয়া যায়। তার প্রধান কারণ উদ্ভিদ খাদ্য মাটিতে দ্রবণীয় অবস্থায় না থাকলে গাছ তা গ্রহণ করতে পারে না।

মাটির প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদের অধিকাংশই অদ্রবণীয় যৌগ হিসেবে থাকে। প্রতিনিয়ত রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওই সঞ্জিত অদ্রবণীয় যৌগ গুলি ধীরে ধীরে গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় আসে এবং ওইটুকুই গাছকে পুষ্টি যোগায়।

একটি গাছ তার সারা জীবনে সামগ্রিকভাবে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করতে সক্ষম। মাটিতে দ্রবণের ঘনত্ব একটু বেশি হলেই তা হবে কাছে প্রাণ ধারণের পক্ষে বিপদজনক। তাই মাটিতে গাছের জন্য কৃত্রিম খাদ্য প্রয়োগের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যাতে দ্রবণের ঘনত্ব কোন অবস্থায় বিপদজনক না আসে।

গাছের কয়েকটি অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান

 নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম হচ্ছে গাছের তিনটি প্রধান খাদ্য। গাছের বৃদ্ধির ব্যাপারে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ভালোভাবে আমাদের জানা দরকার।

নাইট্রোজেন

নাইট্রোজেন একটি অতি প্রজোনিয় গাছের খাদ্য উপাদান। গাছের যে বৃদ্ধি আমাদের চোখে সহজে ধরা পরে তা মূলত নাইট্রোজেনের জন্যই। পাতার সবুজ রং, পাতা ও পর্বের লক্ষনীয় আকার ও দ্রুত বৃদ্ধি মাটিতে নাইট্রোজেন এর প্রাচুর্য নিশ্চিত করে। প্রয়োজনীয় ফসফরাস ও পটাশের তুলনায় যদি নাইট্রোজেন অধিক মাত্রায় শোষিত হয় তাহলে গাছের পক্ষে তা বেশ ক্ষতিকারক।

কারণ এ অবস্থায় গাছের বৃদ্ধি হয় খুব নরম ও রসালো যা ছত্রাক ও কীটপতঙ্গ আক্রমণের পক্ষে অনুকূল। শুধু তাই নয়, গাছে ফুল ও ফল আসতে বিলম্ব ঘটে। ফুলের মানও নষ্ট হয়। নাইট্রোজেনের অভাব ঘটলে পাতা হালকা সবুজ থেকে হলুদ রং ধারণ করে। পাতার আকার ছোট হয় বৃদ্ধি একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ফসফরাস

নাইট্রোজেন এর দ্বারা নরম বৃদ্ধিকে ফসফরাস মজবুত করে, চারার শিকড়ের ভালো বৃদ্ধি ঘটায়। হলদে আভাযুক্ত সবুজ পাতা, জলদি থেকো ও অকালপক্কতা ফসফরাসের আধিক্য নিশ্চিত করে। ফসফরাসের অভাবে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং চারা গাছের পাতার সবুজ রং আদৌ উজ্জল দেখায় না।

পটাশ

গাছে শর্করা, স্টার ও তন্তু তৈরীর কাজ করে পটাশিয়াম। সুন্দর সবুজ ও শক্ত বৃদ্ধির জন্য পটাশিয়াম একান্ত প্রয়োজন। জমিতে চাষের অভাব থাকলে ফুল ও ফলের মান উন্নত করা সম্ভব নয়। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানো ও পানির অভাব থেকে রক্ষা করার কাজে পটাশিয়ামের ভূমিকা রয়েছে। এদের মধ্যে কোন একটি উপাদান গাছের প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদানকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে সাহায্য করে।

গাছের খাদ্য উপাদান ও সার সম্পর্কে সামান্য ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি। পাঠকের কাছে মতামত আশাকরছি।

 আরো পড়ুন: টব ও চাষাবাদের মাটি- ধরণ, গঠন ও অম্লত্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *