গমের ভুষি একটি উৎকৃষ্ট মানের পশু খাদ্য বা গো-খাদ্য। রুমিনান্টদের জন্য গমের ভুষি সবচেয়ে ভালো। গমের ভুষির পুষ্টিগুণ ও হজমের দিক থেকে এটি অদ্বিতীয়। এই ভুষি দাম তুলনামূলক বেশি। তাছারা এই পন্যে প্রচুর ভেজাল বাজারে দেখা যায়। তাই উৎকৃষ্ট মানের ভুষিই গো খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। আমদানি করা ভুসির গুণগত মান খুব বেশি ভালো হয় না। দেশি মোটা ভুসি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ভুসির সাথে ভুট্টা ও রাইচ ব্রাণ মিশিয়ে খাওয়ালে খরচ যেমন কম পরে তেমন ফলাফলও বালো পাওয়া যায়।
গমের ভুষির উপকারিতা
বিশ্বব্যাপি পশুখাদ্য হিসাবে সবচে স্বাস্থ্য সম্মত এবং বহুল ববহৃত উপাদান হচ্ছে এই ভুষি। গম বীজের বাইরের পাতলা আবরণ বা খোসা হচ্ছে তার ভুষি। পুষ্টিগুণ বিচারে এই ভুষি পশুখাদ্য হিসাবে অদ্বিতীয়। সাথে রয়েছে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্যকর কার্যকারিতা।
আর রয়েছে বিশেষ পানি শোষণ ক্ষমতা। যে কারণে গমের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এই ভূষিতে রয়েছে সুষম এমাইনো এসিড এবং যথেষ্ট পরিমান বিশেষ ধরণের ফসফরাস যা গরুর রুমেন সহজেই শোষণ করতে পারে। এই ভুষির সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব হচ্ছে এতে আছে নন স্টার্চ কার্বোহাইড্রেট যা গরুর অতিরিক্ত এসিড সৃষ্টি করেনা, যা ভুট্টা করে থাকে।
গমের ভুষি কি?
একটি গমের কর্নেল তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত: ব্রান, এন্ডোস্পার্ম এবং জীবাণু। ব্রান হ’ল গমের কর্নেলের শক্ত বাইরের স্তর, যা বিভিন্ন পুষ্টি এবং ফাইবারের সাথে জ্যামযুক্ত। কলকারখানা প্রক্রিয়া চলাকালীন, তুষটি গমের কর্নেল থেকে দূরে সরে যায় এবং উপজাত হয়।
গমের তুষের মিষ্টি, বাদামের স্বাদ রয়েছে। এটি রুটি, মাফিনস এবং অন্যান্য বেকড সামগ্রীতে টেক্সচার এবং একটি পূর্ণ দেহের স্বাদ যুক্ত করতে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি অনেক পুষ্টি এবং প্রোটিনের একটি ভাল উত্স এবং তুলনামূলকভাবে কম ক্যালোরি। এটি ডায়েটারি ফাইবারের খুব ভাল উত্স।
গমের ভুষির পুষ্টিগুণ
এর পুষ্টিগুণ অত্যান্ত ভালো। গমের ভুসিতে প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার ও শক্তি সুষম মাত্রায় থাকায় গরুর খাদ্য হিসাবে এই ভুসির ব্যবহার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক বোশি। এর পুষ্টিগুণ খামারি না জালেও এটি ব্যবহার করে খামারি ভালো ফলাফল পেয়েছে বলেই এই ভুসির ব্যবহার জনপ্রীয় হয়েছে। নিম্নে পুষ্টিগুণ সম্পর্কে একটি ধারনা দেওয়া হলো।
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
শুষ্ক পদার্থ | ৮৭% |
হজম যোগ্য পুষ্টি | ৬৫-৭০% |
ক্রুড প্রোটিন | ১২-১৬% |
ক্রুড ফাইবার | ১৩-১৫% |
এন,ডি,এফ (NDF) | ৬৫% |
এ,ডি,এফ (ADF) | ১৪.৫% |
লিগনিন | ৩.৬% |
ক্যালসিয়াম | ০.১৭% |
ফসফরাস | ০.৯৩% |
ম্যাগনেসিয়াম | ০.৫৩% |
পটাসিয়াম | ১.৩২% |
সোডিয়াম | ০.০৪% |
ক্লোরিন | ০.১৬% |
সালফার | ০.২১% |
আয়রন | ১৫৭ ppm |
ম্যাঙ্গানিজ | ১২২ ppm |
জিংক | ৮৫ ppm |
মেটাবলিক এনার্জি | ৯.৫ মেগাজুল/কেজি |
সকল ভুসির পুষ্টিগুণ যে একই হবে তার কোন ঠিক নেই। বাজারে যে ভুসি পাওয়া যায় তার অধিকাংশের গুষ্টিগুণ খুব খারাপ থাকে।

গমের ভুষির প্রকার ভেদ
এই ভুষি সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি মোটা ভুষি আর অপর টি চিকন ভুষি। সাধারণত ৩৭ কেজি বস্তায় বাজারে পাওয়া যায়। পুরাতন হলে গমের ভুষির পুষ্টিগুণ কমে যায়। বাজারে দেখা যায় মোটা ভুষির মান ভালো।
চিকণ ভুষিতে কাঠের গুড়া, চাউলের কুড়া ইত্যাদি মিশ্রিত ভেজাল এখন বাজার ছয়লাভ। চিকন ভুসিতেই যতো ভেজাল দেখা যায়। চিকন ভুসি তে ভেজাল মেশান টা খুব সহজ, খমারি বুঝতে পারে না। মোটা ভুসিতে ভেজাল কম পাওয়া গেলেও ভুষি অবশ্যই টাটকা হতে হবে।
গমের ভুষির দাম ২০২১ সাল
গবাদিপশুর খামারিদের সকলেই ভুষির দাম সম্পর্কে কম বেশি ধারণা থাকে। এবং সকলেই গমের ভুষির দাম নিয়ে চিন্তিত। প্রাই দেখা যায় প্রতি কেজি ৪০৳ দড়ে বিক্রি হতে। তবে 2021 সালে এর গড় দাম হতে পাড়ে 35৳ প্রতি কেজি।
গমের দানা থেকে আটা উত্তোলনের সময় গম ব্র্যান একটি উপজাত উত্পাদন করা হয়। প্রযুক্তিগত ভাবে বলতে গেলে বলবো অ্যানিমাল ফিড হুইট ব্র্যান বা হিউম্যান ফুড হুইট ব্রান নামে কোনও পণ্য নেই।
ক্রেতারা যখন অ্যানিম্যাল ফিড গম ব্র্যান নামে পরিচিত শব্দটি ব্যবহার করেন, উত্পাদকরা পণ্যের ব্যয় হ্রাস করতে এবং একই জন্য দামের জন্য ভেজাল ব্যবহার করে। ভেজাল ভিত্তিক গমের ভুট্টা ব্যবহার করা প্রাণী ও পাখির ক্ষতি করতে পারে। বিভিন্ন সরবরাহকারীদের মধ্যে গমের ভুসির দামে পার্থক্যের মূল কারণ এটি।
ভুষি কিভাবে তৈরি হয়?
ফ্লাওয়ার মিল বা আধুনিক অটো মিল থেকে এটি উৎপন্য হয়। গম প্রসেস হয়ে আটা, ময়দা ও সুজি তৈরি হয় আর বাই প্রডাক্ট হিসাবে তৈরি হয় হুইট ব্রান। উৎপাদিত বাইপ্রডাক্ট বস্তা বন্দি হয়ে বাজারজাতের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আজকাল গ্রামেও ভেজাল ভুষি তৈরি মিল দেখা যায়। আমদানি করা কম দামের গম জাতি ম্যাসিনে পিষে এর সাথে চাউলের কুড়া, ভুট্টা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এই ভুষির পুষ্টিগুণ খুবই নিম্ন মানের। তাই ভেজাল ভুষি থেকে সাবধান।

ব্যবহার, মাত্রা ও সতর্কতা
যেহেতু এটি গরুর পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিডিটি সৃষ্টি করেনা, তাই অন্য খাদ্য উপাদানের তুলনায় বেশি পরিমানেও খওয়ানো যেতে পাড়ে। স্বাভাবিকভাবে সুষম খাবারে ৫০% পর্যন্ত এই ভুষি ব্যবহার করা যায়।
তবে অতিরিক্ত খাওয়ালে পেট গরম বা পাতলা পায়খানা হতে পারে একই সাথে হজমে সমস্যা হতে পারে। গবাদিপশুর জন্য 15-20% হারে ব্যবহার করাই মূল্য বিবেচনায় ভালো। গমের ভুসি পুরাতন ও পোকামাকড় যুক্ত হলে গরুর পেটে সমন্যা হয়।
আর তাই গমের ভুসির পুষ্টিগুণ ভালো ও টাটকা গমের ভুসি গরুর জন্য ক্রয় করতে হবে।
গরুর খাবার হিসাবে সরাসরি ব্যবহার
গরুর খাবার হিসাবে সরাসরি এটি ব্যবহার করলে গরুর কোন ক্ষতি হয় না। বাংলাদেশের অনেক খামারে গরু কে সরাসরি এই ভুসি খাওয়নো হয়। যেহেতু এই ভুষির দাম তুলনামূলক বেশি তাই আই অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওযানোই শ্রেয়। আমাদের দেশের প্রায় সকল খামারি খড় ও ঘাসের সাথে ভুসি ছিটিয়ে গরুকে খাওয়ায়। এতে গরু খড় ও ঘাস খেতে আগ্রহী হয় এবং খাবারের পুষ্টিগুণও বৃদ্ধি পায়। পারিবারিক খামার গুলোতে শুধু খড় ও ভুসি খেইয়ে গরু লালন পালন করা হয়।
আমদানি করা ভুসির পুষ্টিগুণ
ইদানিং এই ভুষির দাম বৃদ্ধির কারণে কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ থেকে গমের ভুষি আমদানি হচ্ছে। বাজারে এই ভুসির দাম হম হওয়ায় অনেক খামাির এই ভুষি কিনতে আগ্রহি কিন্তু আমদানি করা ভুষির পুষ্টিগুণ বিবেচনা করলে আমাদের দেশের টাটকা ভুসির তুলনায় খুব কম। সেজন্য খামারিদের কাছে আমার পরামর্শ হলো দামে বেশি হলেও দেশিয় গমের মোটা ভুসি গরুর জন্য সবচেয়ে উপযোগি।
গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহার
গরু মোটাতাজাকরণ করতে গরুকে সুষম দানাদার খাদ্য সরবরাহের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু ছোট ও পারিবারিক খামার গুলোতে যেখানে একটি বা দুইটি গরুকে মোটাতাজাকরণ করা হয় সেখানে খামারি দানাদার খাদ্য তৈরীর ঝামেলা নিতে চান না বা সময়ও থাকে না। সেক্ষেত্রে খড় বা ঘাসের সাথে শুধু গমের ভুসি খাওয়ানো হয়। কেননা গমের ভুষির পুষ্টিগুণ এমন যে এটি সরাসরি একটি গো খাদ্য। গরুর দানাদার খাদ্যে যতটুকু প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার ও ক্যালোরি দরকার হয় তার সব গুলোই কাছাকাছি মাত্রায় এই ভুসিতে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন- ভুট্টা | গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য উপাদান