ভুট্টা | গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য উপাদান

ভুট্টা

ভুট্টা | গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য উপাদান। ভুট্টা গবাদিপশুর কার্বোহায়ড্রেট এর চাহিদা পুরনের প্রধান উৎস। দাম কম এবং অধিক পুষ্টির জন্য পৃথিবী জুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত খাদ্যের উপাদান। অধিক পরিমানে স্টারর্স সঞ্চিত থাকায় অধিক পরিমানে শক্তি পাওয়া যায়। খাদ্যে কার্বোহায়ড্রেট এর উৎস।

ভুট্টার পুষ্টিগুণ

পাকা কর্ণ সংগ্রহ করার পরে শুকানো এবং আধা ভাঙা করে গরুকে অন্যান্য দানাদার খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। দুধের গরুকে দৈনিক দানাদার খাদ্যে সর্বোচ্চ ৪০% এবং ষাঁড় গরুকে সর্বোচ্চ ৫০% দেয়া যেতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে দৈনিক দানাদরের ৩০% পর্যন্ত সুষম পরিমান হিসাবে ধরা হয়।

গরুর প্রধান স্বাথ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাবার হচ্ছে ঘাস ও খড় এবং মাত্রাতিরিক্ত স্টারর্স জাতীয় খাবার যেহেতু গরুর জন্য ক্ষতিকর। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার গরুর পাকস্থলীতে অম্লতা বা এসিডিটি সৃষ্টি করে।

প্রচুর বাইপাস প্রোটিন থাকায় এটি দুধের মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একই সাথে মোটাতাজাকরণের জন্যও একটি উত্তম সহযোগী খাবার হিসাবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। গরুর জন্য পরিবেশিত খাদ্যে নিন্মলিখিত পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়ঃ

  • ড্রাই ম্যাটার : ৮৭%
  • স্টার্চ : ৬৫-৭০%
  • হজ্বমযোগ্য এনার্জি : ৮৫-৯০%
  • তেল : ৪-৪.৫%
  • ক্রুড প্রোটিন : ৮-১২ %
  • ক্রুড ফ্যাট : ২.০%
  • এ ডি এফ : ৩.৫%
  • শোষিত এনার্জি : ৩.১ মেগাজুল/কেজি
  • ক্যালসিয়াম : ০.০২ %
  • পটাসিয়াম : ০.৩৫%
  • ম্যাগনেসিয়াম : ০.১২ %
  • ক্যালসিয়াম : ০.৪২
  • সোডিয়াম : ০.০২%

ভুট্টা সংরক্ষণ

সংরক্ষণ করতে প্রথমে ভালো ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর চটের বস্তায় ঢুকিয়ে সেলাই করে আলো ও বাতাস চলাচল করে এমন ঘড়ে মাচার উপর সংরক্ষণ করতে হবে। ইদুর যাতে বস্তা কেটে তা নষ্ট না করতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। নিয়মিত ইদুর দমন করতে হবে।

গরুকে ভুট্টা খাওয়ানোর নিয়ম

আমরা যারা গরুকে ভুট্টা খাওয়ায় এবং অনেককেই বলতে শুনি গরুর বদ হজম হচ্ছে, গরুর পেট ফাঁপছে বা গোবরের সাথে দানা দেখা যাচ্ছে এই সব নানা বিধ অভিযোগ। আসলে গরুকে তার রেশনে বা খাদ্যে কিভাবে ও কতটুকু এই খাদ্য উপাদানটি দিবো সেটাই হচ্ছে আসল ব্যাপার। গরুকে এমন ভাবে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে যাতে সেটা তার পাকস্থলী বা রুমেনে ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রুমেনের কার্যকারিতা ভালো থাকে।

আমরা যদি গরুর জন্য সরবরাহকৃত দানাদার খাদ্যে এ টিকে মিহি গুড়া বা পাউডার যোগ করি তাহলে সেটা পাকস্থলীতে যেয়ে দ্রুত দ্রবীভূত হয়ে যাবে। আর এই গুড়া কে দ্রুত হজম করানোর জন্য পাকস্থলী অতিরিক্ত এসিডের নিঃসরণ ঘটাবে। আর এই মাত্রাতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের ফলে গরুর রুমেন বা পাকস্থলীতে দেখা দিতে পারে ব্লোট বা পেট ফাঁপা, এসিডোসিস, খাদ্য গ্রহনে অনীহা, বদ হজম ইত্যাদি নানান রোগ।

আমরা যদি ভেংগে ৩-৫ টি টুকরা করে গরুর খাদ্যে সরবরাহ করি তাহলে উপরের কোন সমস্যাই আর সৃষ্টি হবে না। এবং পরিপূর্ণ পুষ্টি গরু তার খাদ্যের মাধ্যমে পাবে। এই কর্ণ ভাংগা গরু জাবর কাটার সময় পুনরায় মুখে নিয়ে আসবে এবং ভালো ভাবে চিবিয়ে সেটা পাকস্থলীর উপযোগী করে পাকস্থলীতে ফেরত পাঠাবে।

ভুট্টা

ঈস্ট দিয়ে ফারমেন্টেশন করা

ঈস্ট দিয়ে ফার্মেন্টেশন করা ভুট্টা গরুর জন্য একটি অভিনব খাবার। এটি একটি ফিড প্রোসেসিং সিসটেম। সঠিক নিয়মে ফারমেন্টেশন করলে খাদ্য সহজ পাচ্য হয় এবং পাকস্থলীর উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এ প্রোক্রিয়ায় সৃষ্ট কর্ণ কে ফারমেন্টেড কর্ণ বলে।

ভুট্টা কে ফারমেন্টেশন করার পদ্ধতি

  • স্টেপ-১ঃ প্রথমে ১ কেজি ভুট্টার গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে সেটাকে মাখা মাখা করে একটি পাত্রে রাখতে হবে।
  • স্টেপ-২ঃ এবার কাচের গ্লাসের এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি চিটাগুড় ও ৩/৪ গ্রাম বেকারি ঈস্ট বা স্যাকারোমাইসিস সারেভেসিয়া গুলিয়ে নিতে হবে এবং ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে।
  • স্টেপ-৩ঃ ১০ মিনিট পর ঈস্ট মেশানো পানি মাখা মাখা করে রাখা কর্ণ এর গুড়ার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে একটা পাত্রে এয়ারটাইট করে রেখে দিতে হবে ১০-১২ ঘন্টা।

১০-১২ ঘন্টা পর সেটা গরুর দানাদার খাদ্যে মেশানোর উপযোগী হয়ে যাবে। এবং দানাদার খাদ্য বা ঘাস বা উভয়ের সাথে মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতে হবে। এই সমযে ঈষ্ট বা ছত্রাক ফর্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় ভুট্টার গ্লুকোজ বে ভেংগে সুকরোজ ও এলকোহলে পরিনত করে। অর্থাৎ খাদ্র কে ভেংগে গরুর সহজে হজম উপযোগী হিসাবে তৈরী করে।

ঈস্ট ফারমেন্টেশন করা কর্ণ খাওয়ানোর নিয়ম

১০০ কেজি লাইভওয়েটের একটা ষাঁড়কে সারাদিনে দানাদার খাদ্য দিতে হবে ১ কেজি, যার মধ্যে, ঈস্ট দিয়ে ফারমেন্টেশন করা কর্ণ থাকবে ৫০০ গ্রাম আর দানাদার থাকবে ৫০০ গ্রাম। এছাড়া ১৫০ গ্রাম চিটাগুড়, ৩০ গ্রাম লবণ আলাদা হিসাবে যোগ করা যেতে পারে।

এভাবে প্রতিদিন খাওয়াতে হবে। আধা কেজি করে সকাল বিকাল দুই বার খাওয়ালে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

পাশাপাশ প্রতিটা ১০০ কেজি লাইভওয়েট সম্পন্ন ষাঁড়ের জন্য ৬/৭ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ১ কেজি খড় ১ ইঞ্চি সাইজে চপিং করে খাওয়াতে হবে।

ভুট্টার সাইলেজ

সাইলেজ এখন শুধু কাঁচা ঘাস সংরক্ষণের প্রক্রিয়ার নাম নয়, এটা এখন গবাদিপশুর জন্য অধিক পুষ্টিকর আঁশ জাতীয় খাদ্য হিসাবে সারাবিশ্বে ব্যপক সমাদৃত। আপনারা হয়তো জেনে অবাক হবেন ভালো মানের সাইলেজে ড্রাই মেটার ব্যাসিসে ৯-১২ মেগাজ্যুল/কেজি এনার্জি বা শক্তি এবং ১৬% পর্যন্ত প্রোটিন থাকে।

সাইলেজ
ভুট্টার সাইলেজ

ভুট্টা সাইলেজের পুষ্টিগুণ

  • প্রোটিন- ১৬%
  • শক্তি- ১০-১২ মেগাজুল

তাই এখন সব খামারীর উচিৎ তাদের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকায় সাইলেজ অন্তর্ভুক্ত করা। কর্ন সাইলেজ একটি উচ্চ প্রোটিন ও ক্যলোরির প্রক্রিয়াজাত ঘাস যা গরুর মাংস এবং দুধ উভয়ের জন্য দুর্দান্ত খাদ্য হিসাবে কাজ করে।

ভুট্টা ঘাস

কর্ণ গাছের কান্ড ও পাতা গবাদিপশুর একটি উৎকৃষ্ট ঘাস। পৃথিবীতে যত প্রজাতির ঘাস রয়েছে তার মধ্যে এই ঘাস সবার সেরা। অন্য যে কোনো ঘাসের তুলনায় এই ঘাসের ফলন বেশি। পুষ্টিমান বিচারেও এই ঘাস সেরা। সবচেয়ে বেশি কার্বহায়ড্রেট ও প্রোটিন যুক্ত ঘাস এটি। গরু সহ সকল গবাদিপশু এই ঘাস খেতে পারে ও গবাদিপশুর জন্য নিরাপদ। এই ঘাসের উৎপাদন বা ফলনও অন্যান্য ঘাসের তুলনায় অনেক বেশি।

হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি তে ভুট্টা ঘাস তৈরী

ইবানিং হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে ঘাস চাষ বেশ জনপ্রীয় হয়ে উঠছে। আর অধীক ঘাস ও পুষ্টিকর ঘাস হিসাবে এই ঘাস চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে মাটি ছাড়া ট্রেতে কম সময়ে, কম খরচে অধীক ঘাস উৎপাদন করা সম্ভব। যখন প্রান্তিক পর্যায়ের একজন ডেইরী খামারি এই হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি তে ঘাস উৎপাদন করে খামার পরিচালনা করে তখন ভালোলাগার যেন শেষ থাকে না।

কর্ণ স্টেপ লাইকার

বিভিন্ন বেবি ফুড ও গ্লুকোজ উৎপাদন ইন্ডাস্ট্রিজ এ প্রধান কাঁচামাল হিসাবে ভুট্টা ব্যবহার করা হয় আর এই মিল থেকে যে চিটাগুড়ের মত বাইপ্রোডাক্ট উৎপন্ন হয় তার নাম এটি।

এই কর্ণ স্টেপ লাইকার খুবই উৎকৃষ্ট মানের গো খাদ্য। যা গরুর শরীরে নানা রকম ভাবে উপকারে আসে। গরুর দানাদার খাবারেও এই কর্ণ স্টেপ লাইকার ব্যবহার করা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এটি ব্যপক ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশে সম্প্রতি নাসির গ্রুপের মাধ্যমে এটির উৎপাদন শুরু হয়েছে। আপনারা চাইলে এটি এখন ব্যবহার করতে পারেন।

ভুট্টার দাম

প্রীয় খামারি ভুট্টা দাম নিয়ে কিছু খথা বলতেই হয়। কেননা এই উপকরনের দাম বেড়ে গেলে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংশ সকলের ই দাম বেড়ে যায়। কেননা এটিই খাদ্যের প্রধান ও অন্যতম ফিড ইনগ্রেডিয়েন্ট। বর্তমান ২০২০ সালে করোনা পরবর্তি সময়ে ভুট্টা ৭০০৳-৮৫০৳ মন হিসাবে বিক্রি হচ্ছে।

আরো পড়ুন- চিটাগুড়ের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার