মুরগির কৃমি রোগঃ লক্ষণ ও চিকিৎসা

মুরগির কৃমি রোগঃ লক্ষণ ও চিকিৎসা

মুরগির কৃমি রোগঃ লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি মুরগি পালনকারিদের জানা থাকা জরুরী। মুরগি সহজেই কৃমিতে আক্রান্ত হয়। ফার্মের ব্রয়লার, লেয়ার বা সোনালী মুরগি ও দেশি মুরগির কৃমি রোগে আক্রান্ত হওয়ার হর শতকরা ১০০ ভাগ। লেয়ার মুরগির খামারে মুরগির কৃমিনাশক ঔষধ মাঝে মধ্যে খাওয়ানো হলেও ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির খামারে কৃমিনাশকের ব্যবহার খুবই কম।

মুরগির গোল বড় কৃমি (Ascaridia galli)

সাধারনত Ascaridia galli নামক বড় গোলকৃমি দিয়ে এ রোগ সৃষ্টি হয়। এ ধরনের কৃমি মুরগির ক্ষুদ্রান্তে বসবাস করে। এগুলো লম্বায় 2 থেকে 5 ইঞ্চি হয়। দীর্ঘ দিন আক্রান্ত হলে এই কৃমি মুরগির মারাত্বক ক্ষতি করে।

গোল বড় কৃমি সংক্রমণের মাধ্যম

পরিপক্ক বয়সের কুমি মুরগির খাদ্যনালীতে ডিম দেয় এবং পায়খানার মাধ্যমে কৃমির ডিম বের হয়ে আসে। এগুলো থেকে লিটার, খাদ্য ও পানি দূষিত হয়। এ দূষিত খাদ্য-পানি, লিটার এর মাধ্যমে সুস্থ মুরগির দেহে প্রবেশ করে এবং সুস্থ মুরগি কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়।

মুরগির কৃমি রোগের লক্ষণ

  1. মাথার জুটি সাদা বা আকাশে দেখা যাবে।
  2. চোখে মুখে রক্ত শূন্যতার অভাব পরিলক্ষিত হবে।
  3. বুকের হাড় বের হয়ে যাবে।
  4. আক্রান্ত মুরগি শুকিয়ে যেতে থাকবে।
  5. মুরগির পালক উস্কোখুস্কো হয়ে যাবে।
  6. দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হবে না।
  7. ডিম পাড়া মুরগির ডিম প্রদান প্রায় বন্ধ করে দেবে।
  8. মাঝেমধ্যে মুরগি পাতলা পায়খানা করবে।
মুরগির গোল বড় কৃমি (Ascaridia galli)
চিত্র: Ascaridia galli (Wikipedia)

মুরগির কৃমি চিকিৎসা ও ঔষধ

নিম্নলিখিত যেকোনো একটি পাইপারজিন গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার করে মুরগির কৃমি রোগ নিরাময় করা যায়।

  1. পাইপারভেট পাউডার (স্কয়ার)- ৪২ দিন বয়সের ১০০ টি বাচ্চা অথবা ৩০ টি পূর্ণবয়স্ক মুরগির জন্য 10 গ্রাম পাউডার ৫ থেকে ৮ লিটার খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  2. সকারেক্স পাউডার (এসিআই)- একই নিয়মে খাওয়াতে হবে।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

মুরগির বয়স যখন 42 দিন সে সময়ে থেকে পাইপারভেট/এসকারেক্স পাউডার ঔষধ প্রথমবার উপরে বর্ণিত নিয়মে খাওয়াতে হবে। 90 থেকে 100 দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার। ডিম পাড়া সময়ের মধ্যে দুই মাস অন্তর এ ওষুধ খাওয়াতে হবে।

মুরগির বৃহদান্ত্রের কৃমি (Heterkis gallinarum)

Heterkis gallinarum নামক গোলকৃমি থেকে সৃষ্ট মোরগ মুরগির রোগ কে হিটারাকিয়াসিস বলে। এরা সাধারণত এক থেকে 1.5 সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। সাদা রংয়ের সুতোর মতো দেখতে হয়। এ ধরনের কৃমি সাধারণত খাদ্যনালীর সিকামে অবস্থান করে।

সংক্রমণের মাধ্যম

পরিপক্ক বয়সের কৃমি মুরগির খাদ্যনালীতে ডিম দেয় এবং পায়খানার মাধ্যমে এই কৃমির ডিম বের হয়ে আসে। এ ডিমগুলো থেকে লিটার, খাদ্য ও পানি দূষিত হয়। এ দূষিত খাদ্য, পানি ও লিটার এর মাধ্যমে সুস্থ মুরগির দেহে প্রবেশ করে এবং সুস্থ মুরগি কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়।

রোগের লক্ষণ

  1. বাদামী রঙের পাতলা পায়খানা করে।
  2. আক্রান্ত মুরগির খাদ্য খাওয়া কমে যায়।
  3. আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে একপর্যায়ে মারা যায় ডিম পাড়া মুরগি ডিম একবারে কমে যায়।
  4. পালক উস্কোখুস্কো হয়ে যায়।

চিকিৎসা ব্যবস্থা

মুরগির গোলকৃমি রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে এ রোগ নিরাময় করা যায়।

মুরগির ক্যাপিলারিয়া রোগ

এ ধরনের কৃমি মুরগির খাদ্য নালীর উপরের অংশে এবং খাদ্য থলি অংশ থেকে এরা লম্বা এক থেকে ছয় সেন্টিমিটার হতে পারে। এ কৃমি মুরগির জীবন যাত্রায় ব্যপক প্রভাব ফেলে। উৎপাদন কময়ে দেয় এবং মুরগির শারীরিক অবনতী ঘটে।

সংক্রমণের মাধ্যম

‍মুরগির অন্যান্য কৃমির মতই এরা সংক্রমিত করে। পরিপক্ক বয়সের কৃমি মুরগির খাদ্যনালীতে ডিম দেয় এবং পায়খানার মাধ্যমে এই কৃমির ডিম বের হয়ে আসে। এ ডিমগুলো থেকে লিটার, খাদ্য ও পানি দূষিত হয়। এ দূষিত খাদ্য, পানি ও লিটার এর মাধ্যমে সুস্থ মুরগির দেহে প্রবেশ করে এবং সুস্থ মুরগি কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়।

মুরগির কৃমি রোগঃ লক্ষণ ও চিকিৎসা

মুরগির কৃমির লক্ষণ

  1. বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না
  2. আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে
  3. ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়
  4. পাতলা পায়খানা করে
  5. রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং অবশেষে মারা যায়

চিকিৎসা

‍মুরগির ক্যাপিলারিয়া রোগেও নিম্নলিখিত যেকোনো একটি পাইপারজিন গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার করে এ রোগ নিরাময় করা যায়।

  1. পাইপারভেট পাউডার (স্কয়ার)- ৬ সপ্তাহ বয়সের ১০০ টি বাচ্চা অথবা ৩০ টি পূর্ণবয়স্ক মুরগির জন্য 10 গ্রাম পাউডার ৫ থেকে ৮ লিটার খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  2. এসকারেক্স পাউডার (এসিআই)- একই নিয়মে খাওয়াতে হবে।

মুরগির ফিতা কৃমি 

মুরগির ফিতা কৃমি হচ্ছে অনেকটা সমতল ধরনের কৃমি। এগুলো কোনটা এক মিটার থেকেও ছোট আবার কোনোটা 235 মিলিমিটার এর মত লম্বা হতে পারে। এ কৃমি সমূহ আক্রান্ত মুরগির ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের অংশে অবস্থান করে।

রোগ ছড়ানোর মাধ্যম

আক্রান্ত মুরগির পায়খানা সাথেই কৃমির ডিম বের হয়ে আসে এবং সেগুলো শামুক-ঝিনুক, মাছি, পিপঁড়া ইত্যাদি যেখানে সেটির সাথে প্রযোজ্য সেটির ভেতর ঢুকে সুস্থ মুরগি যখন এইগুলো খেয়ে থাকে তখনই এই কৃমিতে আক্রান্ত হয়।

রোগের লক্ষণ

  1. শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  2. মুরগি শুকিয়ে যেতে থাকে।
  3. খাদ্যের প্রতি অনীহা দেখা দেয়।
  4. পাতলা পায়খানা দেখা দেয়।
  5. রক্ত শূন্যতায় ভোগে।
  6. ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়।

মুরগির কৃমির ওষুধ

মুরগির কৃমি রোগের চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ পাইপারজিন গ্রুপের পাওডার ঔষধ মুরগির বাচ্চার ৪২ দিন বয়সে খাওয়াতে হবে।

মুরগির গোল কৃমি, সুতা কৃমি, ফিতা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এরোগে পাইপারজিন ছারাও আরো অনেক ধরণের কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই একজন ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শে মুরগির কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত।

আরো পড়ুন- মুরগির মুরগির বহিঃ পরজীবী বা উকুন আঠালি ও মাইট