ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি। গরুর গোবর থেকে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি একটি সহজ ও লাভ জনক প্রকল্প। আপনার গরুর খামারের গোবর থেকে আপনি খামারের মোট খাদ্য খরচের এক তৃতীয়াংশ যোগান অনায়াসে দিতে পারবেন। এতে খামার থেকে অধিক লাভবান হওয়া যায়। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি একটি অতি সহজ পদ্ধতি। ভার্মি কম্পোস্ট সার বর্তমানে একটি অতি চাহিদার পন্য।

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার কী?

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার একটি উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এক মাসের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে জৈব উপাদান বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়।

এটি সহজ একটি পদ্ধতি। এ সার সব ধরণের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। ভার্মি কম্পোষ্ট বা কেঁচো সার মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। 

এই জৈব সারে নাইট্রোজেন, ফসফরাস সহ অনেকগুলো দরকারি উপাদান পাওয়া যায়।

কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির উপকরণ

  • কেঁচো-২০০ টি,
  • চারি অথবা ইট দিয়ে নির্মিত চৌবাচ্চা এবং
  • এক মাসের বাসী গোবর।

কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করবেন?

  • এক মিটার লম্বা, এক মিটার চওড়া ও এক মিটার গভীরতা বিশিষ্ট ইট দিয়ে চৌবাচ্চা তৈরি করতে হবে। চৌবাচ্চার উপর টিনের/খড়ের চালা দিতে হবে।
  • গর্তের মধ্যে এক মাসের বাসী গোবর ঢেলে ভরে দিতে হবে। অতঃপর ২০০-৩০০ টি কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। এ কেঁচোগুলো গোবর সার মল হিসাবে ত্যাগ করবে। এই মলই কেঁচো সার বা ভার্মি সার।
  • কেচোর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সার তৈরী হবার সময় নির্ভর করে। সংখ্যা বেশী হলে দ্রুত কেঁচো সার তৈরি করে।
  • সার তৈরি হওয়ার পর চৌবাচ্চা বা পাত্র থেকে সতর্কতার সাথে কম্পোস্ট তুলে চালুনি দিয়ে চালতে হবে এবং সার আলাদা করে কেঁচো গুলো পুনরায় কম্পোস্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হবে।
  • কেঁচো সার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী/ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সাইজের প্যাকেট/বস্তায় ভর্তি করে রাখা যেতে পারে। 
ভার্মি কম্পোস্ট
ভার্মি কম্পোস্ট কেচোঁ সার

ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার

সকল প্রকারের শাক সবজির জমিতে ভার্মি সার ব্যবহার করে শাক সবজির ফলন বাড়ানো যায়। ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন ফলবাগানে এই সার ব্যবহার করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এই সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে বায়ুচলাচল বৃদ্ধি পায়। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মাটির বিষাক্ততা দূরীভূত হয়।

মাটির অনুজৈবিক কার্যাবলী বৃদ্ধি পায়। মাটি হতে গাছের পুষ্টি পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার কম মাত্রায় ব্যবহার করলেই চলে। এই সার পুকুরে ব্যবহার করে ফাইটোপ্লাংকটন উৎপাদন ত্বরান্বিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়।

শেষকথা

ভার্মি সার চালুনির সময় সাবধান থাকতে হবে যেন শিশু কেঁচোগুলো মারা না যায়। শিশু কেঁচোগুলো পুনরায় গর্তে রক্ষিত এক মাসের বাসি গোবরের মধ্যে কম্পোস্ট তৈরির জন্য পুনরায় ছেড়ে দিতে হবে।  পিপঁড়া, উইপোকা, তেলাপোকা, মুরগী, ইঁদুর ও পোকার কামড় থেকে কেঁচোগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। প্রয়োজনে সার তৈরির পাত্র বা চৌবাচ্চার উপর মশারী ব্যবহার করতে হবে।

আরো পড়ুন- জৈব কীটনাশক/বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার