কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

কবুতরের রোগ

কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কবুতর পালনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় দক্ষতা না থাকলে যে কোন মুহূর্তে আপনার উদ্যোগ মাটিতে মিশে যেতে পারে। সাধারণত কবুতরের তেমন কোন রোগ হয় না। তবে রানীক্ষেত, কলেরা, রক্ত আমাশয়, বসন্ত নিউমোনিয়া জাতীয় সংক্রামক রোগ কখনো কখনো দেখা যায়।

তাছাড়াও বিভিন্ন প্রকার পরজীবী যেমন কৃমি, উকুন, আঠালি ইত্যাদি কবুতরকে আক্রান্ত কোরতে পারে। কবুতরের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক রোগ এবং ছত্রাক জনিত রোগ খুব মারাত্বক এছাড়া ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাব জনিত রোগ, বদহজম জনিত সমস্যা হতে পারে।

কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা

দেশি অথবা বিদেশী কবুতর বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত কবুতরের খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমন ঘটে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডাজনিত ধকলের কারণে অনেক সময় কবুতর দূর্বল ও অসুস্থ হয়ে যায়।

  1. রানীক্ষেত বা ঝিমানো রোগ
  2. ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস
  3. কলেরা
  4. বসন্ত বা পক্স রোগ
  5. সালমোনেলোসিস
  6. এসপারজিলোসিস
  7. রক্ত আমাশয় বা রক্ত পায়খানা
  8. কবুতরের ক্যাংকার রোগের
  9. কবুতরের ঠান্ডা জনিত রোগ

কবুতরের রোগ- রানীক্ষেত

কবুতরের রানীক্ষেত রোগের প্রচলিত কিছু নাম রয়েছে যেমন- কবুতরের ঝিমানো রোগ, ঝিমুনি রোগ, কবুতরের চুনা পায়খানা ইত্যাদি। এ সংক্রামক ভাইরাস রোগে আক্রান্ত কবুতর থেকে সুস্থ কবুতরে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

রাণীক্ষেত রোগ মুরগির জন্য খুবই মারাত্বক। কবুতরেও রানীক্ষেত রোগ হয় এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ। সাদা ডায়রিয়া এবং প্যারালাইসিস ইত্যাদি এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। কবুতরকে জীবিত বা মৃত টিকা (কিল্ড ভ্যাকসিন) প্রয়োগ এবং খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা / বায়ো সিকিউরিটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

কবুতরের রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ

কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা
কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা
  • প্রাথমিক অবস্থায় কবুতরের তীব্র জ্বর হবে।
  • খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেবে।
  • কবিতর ঝিমাতে থাকবে।
  • চুনের মত সাদা পাতলা পায়খানা করবে।
  • দ্রুত ওজন কমে যাবে।
  • কয়েক দিন পর মারা যাবে।

কবুতরের রানীক্ষেত রোগের টিকা দেওয়ার নিয়ম

কবুতরের বাচ্চার বয়স ৭ দিন হওয়া পরপরই বাচ্চার দুই চোখে দুই ফোটা গুলানো টিকা দিতে হয়। প্রথম বার ভ্যাকসিন দেওয়ার ২১ দিন পর আবার দুই চোখে দুই ফোটা ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগ করতে হয়। কবুতরের বাচ্চার রানীক্ষেতে রোগের ভ্যাকসিনের নাম বিসিআরডিবি। কবুতরের রানীক্ষেত রোগের এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশের সকল প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে পাওয়া যায়।

এই ভ্যাকসিনের রং সবুজ। ফুটিয়ে ঠান্ডা করা ৫ সিসি পানিতে সবুজ ভ্যাকসিন টি গুলিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে প্রস্তুত করা ভ্যাকসিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৪ ঘন্টা পর্যন্ত রাখা যায়।

বড় কবুতরের রাণীক্ষেতে রোগের ভ্যাকসিনের নাম আরডিভি। এই ভ্যাকসিনের রং সাদা। ফুটিয়ে ঠান্ডা করা ১০০ সিসি পানিতে বোতলের ভেতরের ঔষধ টি গুলে প্রতিটি কবুতরকে ১ সিসি করে পায়ের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হয়। কবুতরের বয়স ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ও প্রথম টিকা দেওয়ার ৬ মাস পর আবার ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদান করতে হবে।

ভ্যাকসিন দেওয়ার সাবধানতা

  1. চোখে ভ্যাকসিনের ফোটা দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে কম বা বেশি না হয়।
  2. ভ্যাকসিন ঠান্ড অবস্থায় পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে হবে।

কবুতরের রানীক্ষেত রোগের চিকিৎসা

এটি কবুতরের ভাইরাস জনিত রোগ। ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকারি কোন ঔষধ নেই। কবুতর রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত হলে শরীর দূর্বল হয়ে পরে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এসময় দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন যাতে না হয় সে জন্য রেনামাইসিন (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন), সিপ্রোসল ভেট (সিপ্রোফ্লক্সাসি), এজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদির যেকোন একটি খাওয়ানো যেতে পারে। সেই সাথে কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন সি জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

কবুতরের রানীক্ষেত রোগের ঔষধের নাম

কবুতরের রানীক্ষেত রোগের ঔষধ অবশ্যই একজন ভ্যাটেরিনারি ডাক্তারের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।

  • রেনামাইসিন (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন),
  • সিপ্রোসল ভেট (সিপ্রোফ্লক্সাসি),
  • এজিথ্রোমাইসি
  • ভিটামিন সি
  • ওরাল স্যালাইন
  • প্যারাসিটামল

কবুতরের রোগ- ইনক্লশন বডি হেপাটাইটিস

এটি কবিতরের ভাইরাস ঘটিত রোগ। হার্পেস ভাইরাস (Herpes Virus) নামক এক প্রকার ভাইরাসের সংক্রমনে এই রোগ হয়। অসুস্থ কবুতরের বমির সাহায্যে এ সংক্রামক রোগ খামারের অন্যান্য সুস্থ কবুতরে বিস্তার লাভ করে। এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৪০-১০০ ভাগ। এ রোগের কোন চিকিৎসা না থাকার দরুণ আক্রান্ত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে ফেলাই রোগের বিস্তার রোধ এবং প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

ইনক্লশন বডি হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ

  • দূর্গন্ধযুক্ত বাদামী বা সবুজ ডায়রিয়া, ঝিমানো,
  • খাবারে অনীহা,
  • শুকিয়ে যাওয়া, ব
  • মি করা এবং
  • হঠাৎ মারা যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ।
কবুতরের ইনক্লশন বডি হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ
চিত্র- কবুতরের রোগ- ইনক্লশন বডি হেপাটাইটিস

কবুতরের রোগ- বসন্ত (পক্স ভাইরাস)

কবুতরের বসন্ত রোগ (পক্স ভাইরাস)। এ রোগকে কবুতরের গুটি বসন্তও বলা এটি মোরগ, মুরগি ও কবুতরের ভাইরাস জনিত রোগ। সাধারণত কবুতরের শরীরের পালকবিহীন অংশ যেমন- চোখ বা মুখের চারিদিক, পা ইত্যাদি জায়গায় এ রোগের ফোষ্কা বা গুটি দেখতে পাওয়া যায়।

আক্রান্ত কবুতরের চোখের পাতা ও চোখ ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। আক্রান্ত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে উৎপন্ন হওয়া ফোষ্কা বা গুটিগুলোকে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই বার করে আয়োডিন যৌগ যেমন পভিসেপ বা আয়োসান দিয়ে মুছে দিতে হবে।

গুটি বসন্ত রোগের কোন চিকিৎসা না থাকার দরুণ খামারের জৈবনিরাপত্তা রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

  • কবুতরের জ্বর হবে।
  • খাওয়া কমিয়ে দেবে।
  • কবুতর ঝিমুনি দিয়ে বসে থাকবে।
  • ২-৩ দিনের পর চোখের চারপাশে বসন্তের গুটি বের হয় এবং পরবর্তিতে ফেঁটে ঘাঁ তৈরী হয়।

কবুতরের বসন্ত রোগের চিকিৎসা ও ঔষধ

কবুতরের বসন্ত রোগ একটি ভাইরাস ঘটিত সংক্রামক রোগ। কবুতরের যত্নই এর আসল চিকিৎসা। বসন্ত রোগের চিকিৎসা দুই ভাবে করতে হয়। যেমন-

  1. আক্রান্ত স্থানে পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট বা যেকোন জীবাণুনাসক দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
  2. সিপ্রোফ্লক্সাসিন অথবা এমক্সাসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  3. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে।

কবুতরের পক্স ভ্যাকসিন বা বসন্ত রোগের টিকা

কবুতরের বয়স ৪-৬ সপ্তাহ হলে বসন্ত রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। পক্স ভ্যাকসিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ হোসপাতালে পাওয়া যায়। অথবা মুরগির ফাউল পক্স ভ্যাকসিন বেসরকারী ভাবেও কিনতে পাওয়া যায়। পোল্ট্রি ফিডের ডিলারের সাথে যোগাযোগ করে বেসরকারী পক্স ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে তা নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।

Pigeon pox
কবুতরের রোগ- বসন্ত (পক্স ভাইরাস)

কবুতরের রোগ- কলেরা

হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরা এটি মারাত্বক রোগ। কবুতরও কখনো কখনো কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে এরোগ হয়ে থাকে। এ রোগের সঠিক চিকিৎসা না করা হলে শতকরা ৩০-৪০ ভাগ কবুতর মারা যায়।

কবুতরের কলেরা রোগের লক্ষণ

  • কবুতরের তীব্র জ্বর হবে।
  • খাওয়া কমিয়ে দেবে।
  • পাতলা বা তরল পায়খানা করবে।
  • পায়খানা সবুজ রং এর হতে পারে।
  • আক্রান্তের ৩-৪ দিনের মধ্যে ৩০-৪০ ভাগ কবুতর মারা যেতে পারে।

কলেরা রোগের চিকিৎসা ও ঔষধ

কলেরা রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কলেরা রোগে সালফার ড্রাগ ভালো কার্যকর। প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে অক্সিটেট্রাসায়ক্লিন খাওয়ানো তে পারে। একজন ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

  1. সুপারমেড টিএস ১
  2. কসুমিক্স প্লাস

কলেরা রোগের ভ্যাকসিন

উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে কবুতরের কলেরা রোগের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। ২ মাস বয়সী কবুতরকে ১ সিসি ভ্যাকসিন বা টিকা রানের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। বছরে ২ বার এই রোগের টিকা দিলে কলেরা রোগ হওয়ার আসংখা ৮০-৯০ ভাগ কম থাকবে।

কবুতরের রোগ- নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা

কবুতরের ঠান্ডা লাগা ও নিউমোনিয়া রোগ প্রায়ই দেখা যায়। কবুতরকে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বুঝতে হবে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়েছে।

কবুতরের ঠান্ডালাগা রোগের চিকিৎসা

কবুতরের ঠান্ডালাগা বা নিউমোনিয়া রোগে এন্টিবায়টিক ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ডক্সিসাইক্লিন, টাইলোসিন টারটেট, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এর যে কোন একটি এন্টিবায়টিক ব্যাবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় একজন ভ্যাটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।

সালমোনেলোসিস

সালমোনেলোসিস পোল্ট্রির একটি অতি পরিচিত রোগ। কবুতরের মধ্যেও এ রোগ দেখা যায়। এই রোগে মৃত্যুর হার খুবই কম তবে এ রোগ উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আক্রান্ত পিতামাতা থেকে ডিমের মাধ্যমে এবং খাবার, পানি, খামারে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, কর্মরত শ্রমিক ও আগত অন্যান্য লোকজন, খাদ্য সরবরাহের গাড়ি, বন্যপ্রাণী যেমন ইদুঁর ইত্যাদির মাধ্যমে খামারে এ সংক্রমক রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটে।

শতকরা ৫-৫০ বা তারও বেশী কবুতর এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত কবুতরের ডায়রিয়া, শুকিয়ে যাওয়া, পা এবং পাখায় প্যারালাইসিস এবং ডিম পাড়ার সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। আক্রান্ত কবুতর খামার থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত। সালমোনেলসিস রোগের জন্য কলিস্টিন সালফেট বা এমক্সিসিলিন জাতীয় এন্টিবায়টিক ব্যবহার করা যেতে পারে।

এসপারজিলোসিস রোগ

এসপারজিলোসিস রোগে আক্রান্ত কবুতর থেকে শ্বাস প্রশ্বাস মাধ্যমে সুস্থ কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। এ ছত্রাকজনিত রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। শ্বাস কষ্ট, ঝিমানো, শুকিয়ে যাওয়া, খাবারের প্রতি অনীহা, ওজন কমে যাওয়া এবং ঘন ঘন পিপাসা পাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ।

কার্যকরী ছত্রাক বিরোধী ঔষধ যেমন Amphotericine দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য আক্রান্ত কবুতর খামার থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং খামারের জৈবনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

কবুতরের রোগ- রক্ত আমাশয়

বিভিন্ন প্রজাতির প্রটোজোয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। সংক্রামিত খাবার, পানি বা লিটার থেকে মুখের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। রক্ত মিশ্রিত ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্ধা এবং ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের প্রধান লক্ষণ। রোগ প্রতিরোধের জন্য আক্রান্ত কবুতর কার্যকরী জীবাণুনাশক দিয়ে শেড ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং কঠোর জৈবনিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।

কবুতরের রোগ- ক্যাঙ্কার

কবুতরের ক্যাঙ্কার রোগে আক্রান্ত বয়ষ্ক কবুতর থেকে দুধের মাধ্যমে বাচ্চায় প্রটোজোয়া এ রোগের সংক্রমণ ঘটায়। আক্রান্ত জীবিত কবুতর সারাজীবন এ রোগের জীবাণু বহন করে। কবুতরের ক্যাঙ্কার রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ।

ক্যাংকার রোগে আক্রান্ত  কবুতর অস্থির থাকে, পাখা উশকু-খুশকু হয়ে যায়, খাদ্য গ্রহণ কমে যায় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা যায়। এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের মুখের চারিদিকে সবুজাভ বা হলুদ লালা লেগে থাকে। লক্ষণ প্রকাশ পেলে আক্রান্ত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।

কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কবুতরের খামার হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া এবং সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা/বায়োসিকিউরিটি খুবই গুরুত্বপূর্ন।

কবুতরের রোগ
কবুতরের রোগ
  1. খামারে কবুতর উঠানোর আগে খামার সহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানুনাশক (০.২-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ) মিশিয়ে ভালো ভাবে স্প্রে করতে হবে।
  2. সুস্থ্য সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বহি: পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে কবুতরকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কবুতরের মুখ এই দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে।
  3. অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ ডোজ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
  4. কবুতরের খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানি পানের পাত্র, গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
  5. ষুসম খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

কবুতরের ভাইরাস জনিত রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত প্রতিশধক টিকা প্রদান করতে হবে ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

আরো পড়ুন- কবুতরের দামের তালিকা ২০২১