হাজল পদ্ধতি ও দেশী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন

হাজল পদ্ধতি ও দেশী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন

হাজল পদ্ধতিতে দেশী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করলে দুই থেকে আড়াই গুন বে‌শি উৎপাদন পাওয়া যায়। দেশি মুরগি পালন সহজ করতে ছোট্ট একটি প্রযুক্তি এটি। প্রযুক্তিটির নাম হাজল পদ্ধতি। এুট পুরনো দিনের হলেও অনেক কার্যকারি। বর্তমান সময়ে ইনকুবেটর খুবই এভেল্যাবেল। ইনকুবেটর না থাকলে এই পদ্ধতি অনুসরন করা যেতে পারে।

হাজল তৈরির নিয়ম

হাজল তৈরির নিয়ম হচ্ছে কাদা, খড়, গোবর একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। উপরের মুখ ১৬ ইঞ্চি, নিচের মুখ ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ৯ ইঞ্চি রাখতে হবে। হাজলের উপর মুখে ২টি পাত্র থাকবে। একটিতে পানি ও অন্যটি তে খাবার থাকবে। হাজল তৈরির পর কুঁচে মুরগি নির্বাচন করার সময় মনে রাখতে হবে।

হাজলে ডিম বসানো

সমান আকারে ডিম নির্বাচন ও ৫-৭ দিনের ডিম নির্বাচন করতে হবে। হাজলের নিচে ছাই ৩ ইঞ্চি পুরু করে দিতে হবে। ছাইয়ের ভিতরে একটি ন্যাপথোলিন চার ভাগের এক ভাগ দিতে হবে। কারন ছাইয়ের মধ্য যাতে কোন পোকা মাকর না হতে পারে। এবং নরম খড় দিতে হবে পরিমাণ মত। কুঁচে মুরগির ওজন অনুযায়ী ডিম অর্ধেক দিতে হবে। মুরগির ওজন ১ কেজি হলে ৫শ গ্রাম ডিম দিতে হবে (ডিমের পরিমাণ মুরগির ওজনের অর্ধেক)।

পরির্চযা

প্রতিদিন হাজলের পাত্রে পরিষ্কার পানি ও খাবার দিতে হবে। কুঁচে মুরগির জন্য খাবার ও পানির পাত্র থাকায় খাদ্যের সন্ধানে মুরগিকে বাহিরে যেতে হয়না। তাই মুরগির ওজন কমেনা এতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ডিমে তা দেয়ায় ডিম ফোটার হার বেশী।

হাজলে বসা মুরগীটি তাঁ দেয়ার সময় খাদ্যের সন্ধানে ১০/১৫ মিনিট সাজলের বাইরে থাকায় তাঁ দেয়া ডিম ঠান্ডা হওয়ার কারনে আশানুরুপ বাচ্চা ফোটে না বা দীর্ঘদিন একই যায়গায় অবস্থান করায় খাদ্য ও পানির অভাবে মুরগী দুর্বল হয়।

এ পদ্ধতির হাজলটিতে খাদ্যের জন্য স্থান থাকায় পরিমান মতো খাদ্য গ্রহনের ফলে ডিম, বাচ্চা ও মা মুরগী ভাল থাকে।

হাজল পদ্ধতি

বাচ্চা আলাদাকরণ

হাজল পদ্ধতি তে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের সময় কাল থাকবে ২০ দিন। বাচ্চা আলাদাকরণের উপায় হচ্ছে- মা মুরগি হতে বাচ্চা আলাদা করতে হবে শীতকালে ০-১৫ দিন পর এবং গরমকালে ০-১০ দিন পর। আলাদকরণের সময় মা মুরগিকে অনেক দূরে রাখতে হবে। যাতে বাচ্চা মায়ের ডাক শুনতে না পায়। পরে বাচ্চা গুলোকে বাঁশের ঝুড়ির ভিতরে আবদ্ধ রাখতে হবে। এ সময় বাচ্চাকে ব্রয়লারের খাবার দিতে হবে।

মা মুরগি হতে বাচ্চা আলাদা করলে ১৫ থেকে ১ মাসের মধ্যে মুরগি পুনরায় ডিম দিবে। অথচ প্রচলিত পদ্ধতিতে দেশী মুরগির ডিম ফোটার ৮০-৮৫ দিন পর পূনরায় ডিমে আসে।

এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ডিম বেশি পাওয়া যাবে, বাচ্চা বেশি পাওয়া যাবে। বাচ্চা ফুটার পর যে কাজগুলো করতে হবে বাচ্চাকে ৩-৫ দিন পর ১ চোখে ১ ফোটা করে বিসিআরডিভি টিকা দিতে হবে।

হাজল পদ্ধতি
হাজল পদ্ধতিতে দেশী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন

সংক্ষিপ্ত আলোচনা

কাদামাটি, পাটের আঁশ, বিচালি চূর্ণ একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে সাত ইঞ্চি গভীর, দু-তিন ইঞ্চি পুরো ও ১৩ থেকে ১৪ ইঞ্চি গোলাকার ব্যাসার্ধ পরিমাপের হাজল তৈরি করার পর রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। হাজলে মুরগি বসানোর আগে এক থেকে দুই ফোঁটা কেরোসিন তেলের সঙ্গে পরিমাণমতো ছাই মিশিয়ে মুরগিকে গোসল করানো হয়। ফলে কুচে মুরগিকে উকুনজাতীয় কোনো ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করতে পারে না। এরপর মুরগি সমষ্টির ওজনের অর্ধেক ওজনসম্মত পরিমাণের ডিম দেওয়ার উপযোগী করা হয়। কুচে মুরগি হাজলে বসানোর ২১ দিন পর বাচ্চা ফুটে বের হয়। ১২ থেকে ১৪ দিন পর মা মুরগিকে বাচ্চা থেকে আলাদা করতে হয়। এ প্রযুক্তিতে একটি দেশি মুরগি বছরে ছয়বার ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে।

  1. বাসস্থানটি একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা ভাল যাতে এটি অধিক সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পায়।
  2. নিয়মিত হাঁস–মুরগির বাসস্থান পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন

শেষ কথা

তাই দেশী মুরগি পালনে উন্নত হাজল ব্যবহার এবং বাচ্চা আলাদা করন পদ্ধতি ব্যবহার করলে দেশী মুরগি থেকে বছরে যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাত্র ৩ বার ডিম পাওয়া যেত সেখানে এই পদ্ধতিতে ৬-৭ বার ডিম পাওয়া সম্ভব। প্রযুক্তিটি দেশি মুরগির ডিম ও মাংসের যোগান বাড়াতে অসামান্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম পাশাপাশি কৃষকের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও অর্থবহ ভূমিকা রাখবে।

আরো পড়ুন- মুরগির গামবোরো রোগ | লক্ষ্মণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *