সুপার নেপিয়ার বা পাকচং ঘাস

সুপার নেপিয়ার বা পাকচং ঘাস

সুপার নেপিয়ার বা পাকচং ঘাস (super napier grass) একটি হাইব্রিড, দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ ফলনকারী বহুবর্ষজীবী ঘাস। এই ঘাস টি গরু-ছাগলের জন্য একটি চমৎকার ঘাস। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ঘাস। সাধারণ নেপিয়ার ঘাসে 8-10% প্রোটিন থাকলেও, পাকচং বা সুপার নেপিয়ার ঘাসে 17-18% ক্রুড প্রোটিন পাওয়া যায়। এটিকে হাইব্রিড নেপিয়ারও বলা হয়।

থাইল্যান্ডের এক দল গবেষক আফ্রিকান নেপিয়ার ঘাসের সাথে মুক্তা বাজরা গাছের টিস্যু কালচার করে এই বিশেষ উচ্চ ফলনশীল জাতের ঘাস উৎভাবন করেন। আর এজন্যই থাইল্যান্ডের পাকচং স্থানের নাম অনুসারে এই ঘাসের নামকরণ করা হয়েছে।

নেপিয়ার পাকচং ১ ঘাস

নেপিয়ার পাকচং ১ একটি উচ্চ ফলনশীল জাতের ঘাস, যা বছরে ৬-৮ বার কর্তন করা যায় এবং একবার রোপন করলে একটানা ৬-৮ বছর উচ্চ ফলন পাওয়া যায়। প্রতি একর জমিতে নেপিয়ার পাকচং ১ ঘাস চাষ করলে বছরে ১৮০-২০০ মেট্রিক টন সবুজ রসালো ঘাস পাওয়া যায়।

এক একর জমিতে এই ঘাস চাষ করে অনায়াসে ২০-২২ টি গাভী গরুর খামারের সারা বছরের কাঁচা ঘাসের চাহিদা অনায়াসে পূরণ করা সম্ভব। উঁচু জমিতে এই ঘাস চাষ করলে সারা বছরই গবাদিপশুর কাঁচা ঘাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।

পাকচং ঘাস
সুপার নেপিয়ার

পাকচং ঘাস

এই ঘাসের (super napier grass) পাতা সাধারণ নেপিয়ার ঘাসের তুলনায় চওড়া, মসৃণ ও সবুজ হয়। এর কান্ড লম্বা, রসালো ও মোটা হয়। এটি গবাদিপশুর জন্য খুবই আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু এবং উচ্চ ক্রুড প্রোটিন সমৃদ্ধ। পাকচং ১ ঘাসের পুষ্টিমান ও উৎপাদন দক্ষতা অন্যান্য নেপিয়ার জাতের ঘাসের তুলনায় বেশি।

পাকচং ঘাসের বৈশিষ্ট্য

  • সাধারণ নেপিয়ার ঘাসের তুলনায় দ্বীগুণ ফলন পাওয়া যায়।
  • ২ মাসে এর উচ্চতা ১০-১২ ফিট হয়।
  • ৪৫-৬০ দিন বয়সে ঘাস কাটা যায়।
  • প্রোটিনের পরিমান বেশি থাকে।
  • সুস্বাদু ও মিষ্টি প্রকৃতির হয়।

পাকচং ঘাসের পুষ্টিগুণ

ঘাসের উচ্চতা১০-১২ ফিট
শুষ্ক পদার্থ২৫%
প্রোটিন১৬%
ফ্যাট১%
ফাইবার২৭%
মেটাবলিক এনার্জি২ মেগাজুল/কেজি

সুপার নেপিয়ার বা পাকচং ঘাস চাষ পদ্ধতি

উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টি সেচের পানি বা বর্ষার পানি জমে না এমন জমি নির্বাচণ করতে হবে। জমিতে ভালোভাবে ২-৪ টি চাষ ও মই দিতে হবে। ৯০-১২০ দিন বয়সের নেপিয়ার পাকচং ১ ঘাস থেকে কাটিং সংগ্রহ করতে হবে।

৩৫ সেন্টিমিটার দুরত্বে রোপন করতে হবে। লাইনের দুরত্ব রাখতে হবে মিনিমাম ৭০ সেন্টিমিটার। প্রতি গর্তে ২টি কাটিং ক্রস করে ৪৫* কোণে লাগাতে হবে। একর প্রতি ৭০০০-৮০০০ টি কাটিং এর প্রয়োজন হয়।

জমি তৈরীর সময় একর প্রতি গোবর সার-১৫ মেঃ টন, ৫০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি এমওপি সার ও ২৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

পাকচং ঘাসের কাটিং

কাটিং জমিতে রোপণের ২১ দিন পর একর প্রতি ৫০ কেজি হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এর পর ঘাস কাটার ২১-৩০ দিন পর পর একর প্রতি ৫০ কেজি হারে ইউরিয়া সার বাড়তি প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অধিক ফলন পাওয়ার জন্য শুকনো মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে।

নেপিয়ার পাকচং আপনারা যারা খামার আছে বা খামার করার চিন্তা করতেছেন ঘাসের চাষ না করে গরু/ছাগলের খাদ্য চাহিদা ও পুষ্টি গুণ মেটাতে পারবেন না । খাদ্য কিনে খাওয়াতে দেখবেন আপনার কোন লাভ হয়নি। তাই খামার করার আগে ঘাসের চাষ করুন। আমার কাছে বেশ কয়েকটি ঘাসের জাত রয়েছে। তার মধ্যে খুব কম সময়ে অধিক ফলনশীল ঘাস নেপিয়ার পাকচং ।

20-25 দিনে ঘাস কাটতে পারবেন। এর কান্ড নরম যা গরু/ছাগল এই ঘাসের কান্ড সহ খেয়ে ফেলে। আপনারা যারা এই ঘাস চাষ করতে চান আমার সাথে যোগাযোগ করুন। এই ঘাসের মুথা লাগালে ৩০ দিনে বড় ঝোপ আকারে ঘাস পাবেন।

সাবধানতা

জমিতে সার প্রয়োগের পর পাকচং ঘাসের মধ্যে টক্সিক নাইট্রোজেন জমা হয়। আর তাই জমিতে সার প্রয়োগের পরে থেকে ১০-১৫ দিন এই ঘাস গবাদিপশু কে খাওয়ানো যাবেনা। বর্ষকালে প্রথম বৃষ্টির পর অথবা বজ্রপাতের পর পশুকে ২/১ দিন এই ঘাস খাওয়ানো যাবেনা। এই সময় যদি ঘাস খাওয়াতে হয় তাহলে ঘাস জমি থেকে কাটার পরে একদিন রোদে রেখে তারপর খাওয়াতে হবে।

আরো পড়ুন: জার্মান ঘাস চাষ পদ্ধতি ও পুষ্টিগুণ