মুরগি খাবার ছিটানোর কারণটি হলো খাদ্য শক্ত হওয়া, এছাড়া খাদ্যে ছত্রাক জন্ম নিলে অথবা ফিডের গুণোগত মান কমে গেলে মুরগি খাদ্য কম খায় ও খাদ্য ছিটায়। মুরগির ফিড তৈরিতে নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহার করলেও মুরগি খাবার ছিটানোর সমস্যা দেখা দেয়। সুতারং মুরগির ফিডের গুণগত মান ভালো ও টাটকা হতে হবে তাহলে মুরগি খাদ্য ছিটাবে না।
মুরগির খাদ্য শক্ত হলে খাবার সামান্য পানি দিয়ে ভিজিয়ে নরম করে দিলে মুরগি বেশি খাদ্য খায়। প্রতি মুরগী যদি প্রতিদিন ২ গ্রাম করে খাবার ছিটিয়ে নষ্ট করে, তাহলে ৩০ দিনে ১০০০ টি মুরগি ৬০,০০০ গ্রাম বা ৬০ কেজি খাবার নষ্ট করবে। যেটা খামারের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর এবং মুরগির উৎপাদন কমে যায়।
মুরগি খাবার ছিটানোর কারণ
- অল্প জায়গায় বেশী মুরগী পালন করলে।
- প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক খাবার ও পানির পাত্র দিলে।
- হঠাৎ খাদ্য পরিবর্তন করলে।
- ১৪ দিনের আগে পিলেট খাবার দিলে।
- শেডে আলোর তীব্রতা বেশি হলে।
- খাবারের পাত্র সঠিক উচ্চতায় স্থাপন না করলে ।
- খাবারের পাত্র পূর্ন করে খাবার দিলে ।
- অপ্রচলিত খাবার পাত্র দিলে।
- কক্সিডিওসিসের লোড থাকলে ।
- কৃমির সংক্রমন বিশেষ করে সোনালী বা কক মুরগীতে গোলকৃমির কারণে।
- মাইকোটক্সিকোসিস।
- মুরগীর গিজার্ড ইরোশন।
- এমোনিয়া হলে।
- অত্যাধিক গরম বা শীত।
- শরীরে ভিটামিন-মিনারেলের অভাব দেখা দিলে।
- পিলেটের সাইজ বড় হলে।
- পিলেট যদি বেশি শক্ত হয়।
- খাবারে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকলে।
- খাবার যদি পচে যায়।
খাদ্য নালী পরিমিতভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া
বাচ্চার খাদ্য-থলি, গিজার্ড, কলিজা, অগ্নাশয় ও খাদ্যনালী পরিমিতভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া। তাই খাদ্য সঠিকভাবে হজম হয়না এবং মুরগি খাদ্য ছিটায়। এসব অঙ্গের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ব্রুডিংকালীন সময়ে পরিমিত তাপ প্রয়োজন। যেহেতু ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে তাপমাত্রা রাতে কম ও দিনে বেশি থাকে তাই ব্রুডিংকালীন সময়ে সঠিক তাপমাত্রা ধরে রাখা একটু কঠিন বটে।
প্রথম দিনই খাদ্য থলি, গিজার্ড, কলিজা, অগ্নাশয় ও খাদ্য নালীর বৃদ্ধির জন্য স্টিমুলেশন বা উদ্দীপনা না পাওয়া। এই স্টিমুলেশনের জন্য বাচচাকে ব্রুডারে ছাড়ার ১ম ২৪ ঘন্টার মধ্যে খাদ্যথলি ১০০% পূর্ণ করা বাধ্যতামুলক। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ খামারিগণ ১ম দিন বাচ্চাকে পানির সাথে চিনি বা গ্লুকোজ খাইয়ে থাকেন।
এই জন্য বাচ্চার ক্ষুধা কমে যায় এবং ১ম দিন পরিপূর্ণভাবে খাদ্য খায়না, ফলে পরিপাকতন্ত্র বৃদ্ধি পায়না। তাই খাদ্য খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বাচ্চা খাদ্য পরিমিতভাবে খেতে পারেনা এবং ঠুকুর দিয়ে ছিটায়। ১ম দিন বাচ্চাকে পানির সাথে চিনি বা গ্লুকোজ না খাওয়ানো। ১ম ৩-৫ দিন এন্টিবায়োটিক না খাইয়ে প্রোবায়োটিক খাওয়ানো উত্তম।
খাদ্য পাত্র
পর্যাপ্ত পানি ও খাবার পাত্র না থাকা। তাই সকল বাচ্চা সমানভাবে খাদ্য খেতে পারেনা, এইজন্য কিছু বাচ্চা ছোট হয়। এই ছোট বাচ্চাগুলো খাবার ছিটায়। সাধারণত ১০০ বাচ্চার জন্য ১ম সপ্তাহে ১টি, ২য় সপ্তাহে ২টি, ৩য় সপ্তাহে ৩টি, ৪র্থ সপ্তাহে ও পরে ৪টি করে পানি ও খাবার পাত্র সরবরাহ করতে হবে।
মেঝেতে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে পাত্রে খাদ্যের লেভেল বাচ্চার খাদ্যথলির সমান উচ্চতায় থাকতে হয় এবং বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাত্রের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে হবে। অনেকে সারাদিনের খাবার দিনে ১ বার বা ২ বার পাত্র পূর্ণ করে দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত খাদ্য বাচ্চা ঠুকুর দিয়ে ফেলে দেয়।
পাত্রে খাবার দেওয়ার সময় কমপক্ষে তিন ভাগের এক ভাগ খালি রাখতে হবে। দিনে রাতে ৪-৫ বার খাবার সরবরাহ করতে হবে। বাচ্চার বয়স ২ সপ্তাহের পর হতে প্রতিবার খাবার দেওয়ার পূর্বে ১-২ ঘন্টা পাত্র সম্পূর্ণরূপে খালি রাখতে হবে বা পাত্র উঠিয়ে নিতে হবে। এতে বাচ্চার বেশি ক্ষুধা লাগবে, ফলে খাওয়ার প্রতি বেশি মনোযোগী হবে এবং খাদ্য ছিটাবেনা।
এন্টারাইটিস বা আমাশয়
বাচ্চার এন্টারাইটিস বা সাবক্লিনিক্যাল আমাশয় থাকলেও খাবার খাওয়ার রুচি কমে যায়। এন্টারাইটিস বা আমাশয় থাকলে এনজাইম বা ভিটামিন জাতীয় ঔষধ না খাওয়ানো উচিত।
এছাড়া আলোর উজ্জ্বলতা বেশি, ঠোট বড় হয়ে যাওয়া, মুরগি ঘনত্ব বেশি হলেও এই সমস্যা হতে পারে । তাই সময়মত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি একজন রেজিষ্টার্ড দক্ষ ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ফিড নিউট্রিশন ও কোয়ালিটিগত সমস্যা
পিলেটের সাইজ বড় হয়ে গেলে মুরগি খাবার ছিটায়। পিলেট বেশী শক্ত হয়ে গেলে ( পিলেট ফিড উলম্ব ভাবে দুই আঙ্গুলে রেখে চাপ দিলেই বুঝা যাবে। শক্ত হলে সহজে ভেঙ্গে যাবে না)
ফিডে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর ( arabinoxylans, beta-glucans, cyclopropenoid fatty acid, saponins, tannins, phytic acid, lectins, gossypol, amylase & protease inhibitor, goitrogens etc) উপস্হিত থাকলে। সয়াবিন মিল ও সয়াবিন ফুল ফ্যাটে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকে যেগুলো ব্রেক ডাউনের জন্য উচ্চ তাপমাত্রা ও প্রয়োজনীয় এনজাইমের ( protease, xylanase, phytase etc) প্রয়োজন হয়।
প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি
DEB ( Dietary Electrolyte Balance) ঠিক না থাকলে ও মুরগীর শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল এর ঘাটতি থাকলে মুরগি ফিড কম খায় ও ছিটায়। এটা নরমালি ২৫০ এর কাছাকাছি থাকে। DEB মুলত সোডিয়াম, ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম এর অনুপাত ব্যালেন্স। এটা ঠিক আছে কিনা বুঝা যায়, সল্ট ট্রিটমেন্ট এ যদি ফিড ছিটানো বন্ধ হয়।
মুরগি খাবার ছিটানোর প্রধান কারণ
- খাবার পরিবর্তন।
- খাবার শক্ত হলে।
- কক্সিডিওসিস।
- অসুস্থ হলে।
- মাইকোটক্সিন।
মুরগি কখন ও কেন খাবার বেশি খায়
- মুরগির খাদ্যে এনার্জি কম হলে।
- লবণ কম দিলে।
- পবেশের তাপমাত্রা কম হলে।
- সেডের উচ্চতা বেশি হলে গরমে বেশি গরম হয় না ফলে খাবার ভাল খায়।
- খাবারের সাইজ বড় হলে( ৪ মিলি)।
- খাবারের আর্দ্রতা বেশি হলে।
- গাট হেলথ ভাল হলে মানে ভিলাই এর সাইজ বড় হলে খাবার শোষণ ভাল ফলে খাবার বেশি খায়
- খাবারে বা পানিতে এসিডিফায়ার দিলে খাবার বেশি খায়
- খাবার দেয়ার মাঝখানে গ্যাপ বেশি দিলে খাবার ভাল খায়
- খাবারে হলুদ বা ফিশ অয়েল দিলে খাবার বেশি খায়।
মুরগি খাবার ছিটানোর সমস্যার সমাধান
- মুরগীর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ রাখুন। বেশী লাভের আশায় অল্প জায়গায় বেশী মুরগী পালন করা উচিত না।
- মুরগীর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানির পাত্র দিতে হবে। খাদ্যের পাত্র মুরগীর পিঠ বরাবর ও পানির পাত্র মুরগীর চোখ বরাবর ঝুলিয়ে দিন।
- গরমের সময় মুরগির ঘর ঠান্ডা ও বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।
- ফ্লকে কক্সিডিওসিস এর লোড থাকলে চিকিৎসা করতে হবে।
- এক দিনে খাবার পরিবর্তন করা যাবে না।
- যে কোন ফিড পরিবর্তন করতে হলে আগের খাবার থেকে ২৫% খাবার বাদ দিয়ে নতুন ২৫% খাবার এড করতে হেব এভাবে ২৫%,৫০%,৭৫%, ১০০% এই অনুপাতে ৪ দিন সময় নিয়ে পরিবর্তন করতে হবে।
- খাবার পরিবর্তনের সময় এনজাইম দেয়া যায়।
- আলোর তীব্রতা বেশী হলে কমাতে হবে অথবা লাল আলো দেয়া যায়।
- খাদ্যের বস্তা রোদে রাখার দরকার নাই এতে খাবার শক্ত হয়ে যেতে পারে ।
Hello