বচ- একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ

বচ

বচ- একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ এবং একই সাথে উচ্চ চাহিদার উদ্ধিদ। বচ ভেসজ চিকিৎসার পাশাপাশি মশলা হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। বড় কবিরাজি দোকান বা অনলাইনে এই এটি পাওয়া যায়। পৃথিবীজুড়ে এটির ব্যবহার ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আয়ুর্বেদিক সাস্ত্রে এই গুণী উদ্ধিদকে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।

বচ কি?

বচ, এক প্রজাতির ভেসজ উদ্ধিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম একোরাস কালামাস (Acorus calamus) এবং এটি সুইট ফ্লাগ (sweet flag) নামে বিদেশে পরিচিত। ধানের মত নিম্ন জলাভুমিতে এবং বিশেষ বিশেষ এলাকায় এই গাছ প্রকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এই বহুবর্ষজীবী উদ্ধিদের বানিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে।

পরিচিতি

  • বচ বহুবর্ষজীবী কন্দমূলীয় উদ্ধিদ।
  • এর কান্ড সাধারনত কাদা মাটির নিচে থাকে।
  • পাতা অনেকটা ধান গাছের পাতার মতো দেখতে হয়।
  • পাতা মাটির উপরে উর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে।
  • কন্দ থেকে পাতাগুলি চারিদিকে প্রসারিত হয়েছে।
  • পাতা চ্যাপ্টা আকার ধারণ করে।
  • পাতা অপেক্ষাকৃত মসৃণ।
  • মাটির নিচে বিশেষ ধরনের গন্ধযুক্ত কন্দ বিস্তার লাভ করে যা মশলা ও ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়।
  • হালকা সবুজ রঙের ছোট ছোট ফুল ফোটে।
  • গাছ থেকে বর্ষাকালে ফুল ও পরে ফল পাওয়া যায়।
  • ফল হালকা হলুদ বর্ণের।

উপকারিতা

বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারি ১৯৯২তে ৬৫টি ওষুধে এর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পেটফাঁপা, স্মৃতিশক্তি, স্বরভঙ্গ, মৃগী, উন্মাদ, বাতরোগ, অনিদ্রা, কৃশতা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় বচ বিভিন্ন রূপে ও মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

বচ
বচ গাছ ও ফুল
  • এর Essential Oil বায়ুনাশক ও হজমকোরক হিসেবে কাজ করে।
  • কাঁচা পাতার রস ২০-৩০ ফোঁটা গরম পানিসহ প্রতিদিন ২/৩ বার খেলে পেট ফাঁপায় আরাম হয়।
  • শিশুদের নাভির চার দিকে এর প্রলেপ দিলে পেট ব্যাথার উপশম হয়।
  • গাছের শুকনো ডাটা ২৫০ মি.গ্রাম. ঘৃত বা মধুসহ বেটে খেলে মেধা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • আমবাত রোগে বা আঘাত জনিত ব্যাথায় বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা প্রশমিত হয়।
  • বন্দ বা মূল ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • এছাড়াও সর্দি, মাথাব্যথা ও দাঁতের ব্যথায় ব্যবহার হয় ।

ব্যবহার

  • ক্যালামাস বা বচ একটি উদ্ভিদ। মূল (রাইজোম) ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • নিরাপত্তার উদ্বেগ সত্ত্বেও, ক্যালামাস গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (জিআই) সমস্যার জন্য ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে আলসার, পেটের আস্তরণের প্রদাহ (গ্যাস্ট্রাইটিস), অন্ত্রের গ্যাস (পেট ফাঁপা), পেট খারাপ এবং ক্ষুধা হ্রাস (অ্যানোরেক্সিয়া)। ক্যালামাস একটি প্রশান্তকারী (ষধ (উপশমকারী), ঘাম প্ররোচনা এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
  • কিছু মানুষ তামাকের গন্ধ দূর করার জন্য বচের শেকড় চিবায়। উদ্দীপক হিসেবে, তাদের সুস্থতার বোধ বাড়ানোর জন্য এবং হ্যালুসিনোজেন হিসেবে।
  • কিছু মানুষ কিছু ত্বকের রোগের চিকিৎসার জন্য সরাসরি ত্বকে ক্যালামাস প্রয়োগ করে।
  • খাবারে, ক্যালামাস একটি মশলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

এর গন্ধযুক্ত কন্দ বা মূল খাবারের গন্ধ ও স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। এটি একটি ঐতিয্যবাহী ও প্রাচীন মশলা। বাংলাদেশের দিনাজপুর অন্চলে আবাদ ও মশলা হিসাবে ব্যপক ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ ও সিলেটে এই বিশেষ উদ্ধিদ প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায় এবং সেখানকার মানুস এটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে।

আরো পড়ুন- হেপাটোভেট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *