নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি ও পুষ্টিগুণ

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি ও পুষ্টিগুণ যানা না থাকলেও এই ঘাসের চাষ ও ব্যবহার আমাদের দেশে অনেক বেশি জনপ্রীয়। নেপিয়ার ঘাস একটি বহুবর্ষী ঘাস যা একবার আবাদ করলে ৪-৫ বছর একটানা ঘাস পাওয়া যায়। এই ঘাসের ফলন বেশি ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় খামার পর্যায়ে ব্যপক জনপ্রীয়তা পেয়েছে। বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। পানি জমে থাকেনা এমন জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করা হয়। নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক নিয়মে চাষ করলে অধীক ফলন পাওয়া যায়।

নেপিয়ার জাতের ঘাসের পরিচিতি

নেপিয়ার ঘাস (Napier Grass) একটি বহুবর্ষজীবী গ্রীষ্মমন্ডলীয় চরাঞ্চল ঘাসের মধ্যে একটি, যা Poaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই ঘাসের ইংরেজি নাম- Cenchrus purpureus এবং একে উগান্ডা ঘাস বা হাতি ঘাসও বলা হয়। এটি আফ্রিকায় আদি জাতের ঘাস কিন্তু এখন অনেক গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে জন্মায়। এটি একটি C4 উদ্ভিদ এবং প্রান্তিক জমিতে ভাল জন্মাতে পারে। ঘাস লম্বা হয় এবং বাঁশের মতো বড় আকারের ঝাঁকরা তৈরি করে।

নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার

শুষ্ক পদার্থ বা ড্রাই মেটার২৫০ গ্রাম/কেজি
প্রোটিন৮-১২ %
ফাইবার ২৬-২৮ %
টোটাল ডাইজেস্টেবল নিউট্রিয়েন্ট (TDN)৫৫-৫৮ %
বিপাকীয় শক্তি২ মেগাজুল/কেজি
ঘাসের উচ্চতা৩.৫ মিটার

সাধারণত এটি সরাসরি গবাদিপশুকে খাওয়ানো হয় বা সাইলেজ বা খড় দিয়ে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এক বছরে 6-8 বার ঘাস কাটা যায়।

নেপিয়ার ঘাসের কাটিং ও বীজ

এই ঘাসের আবাদের জন্য কাটিং সংগ্রহ করে লাগাতে হয়। যে সকল খামারি এটি চাষ করে তাদের থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এর কাটিং ১-২ টাকা পিচ দামে কিনতেও পাওয়া যায়।

নেপিয়ার ঘাসের বীজ থেকেও এটি চাষ করা যায়। ঘাসের কাটিং থেকে ঘাস উৎপাদন করার পর এর থেকে বীজও উৎপন্ন করা যায় এবং এই বীজ থেকে পরবর্তিতে চাষ করা যেতে পারে। এর বীজ বাজারে কিনতেও পারা যায়।

নেপিয়ার ঘাসের বীজ জেলা শহরের বড় বীজ বিক্রেতার কাছে পাওয়া যায়। অনলাইন বা ফেসবুকের গ্রুপে অনেকে এ বীজ বিক্রি করে থাকে।

নেপিয়ার ঘাস চাষ

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি

প্রচলিত পদ্ধতিতে ভালো করে জমি চাষ দিয়ে ৩৫ সে.মি. দুরত্বে একটি করে কাটিং লাগাতে হয়। ভালো ফলন পেতে সারি থেকে সারির দুরত্ব রাখতে হবে ৭০ সে.মি.। পড়ে থাকা জমি ও হালকা ছায়া যুক্ত জমিতেও এই ঘাসের ভালো ফলন পাওয়া যায়। জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুত করে নেপিয়ার ঘাস চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

সার প্রয়োগ, সেচ পদ্ধতি ও ফলন

জমি প্রস্তুতির সময় হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া, ৭০ কেজি টিএসপি ও এমপি সার ৩০ কেজি ছিটিয়ে দিতে হবে। নেপিয়ার ঘাসের কাটিং লাগানোর এক মাস পর হেক্টর প্রতি ৫০ কেটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। এই ঘাসে সেচ কম লাগে। গ্রীষ্মকালে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হয়।

নেপিয়ার ঘাসের ফলন ও সুবিধা দুটোই বেশি। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই ঘাসের বাৎসরিক উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৫০-২০০ টন। এটি প্রথম বছর ৬-৮ বার কাটা যায়। পরবর্তি বছর গুলোতে ৮-১০ বার কাটা যায়।

ঘাস কাটার নিয়ম হলো ২-৪ ইন্চি উঁচু করে জমি থেকে কাটতে হবে। যাতে এখান থেকে আবার শাখা বের হতে পারে।

নেপিয়ার ঘাস

বীজ থেকে নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি

বীজ থেকে নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি অনেক গবাদিপশুর খামারির কাছে এখনও অজানা। ছাগল গরুর খাদ্য হিসেবে কাঁচা নেপিয়ার ঘাসের ভুমিকা উল্লেখযোগ্য। আর কাঁচা ঘাসের চাহিদা পূরণ করতে এই ঘাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক বীজ থেকে নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু তথ্য।

  • জমি নির্বাচন- বৃষ্টি বা বর্ষার পানি জমে থাকে না এরূপ জমি নির্বাচন করতে হবে। প্রায় সকল প্রকার মাটিতেই এ ঘাস বপন করা যায়, তবে বেলে-দোআঁশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
  • জমি চাষ- চাষের জন্য জমিতে চার থেকে পাঁচটি চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে আগাছামুক্ত করার পর বীজ বপন করতে পারলে ভালো হয়।
  • বীজ বপনের সময়– সাধারণত সারা বৎসরই বীজ বপন করা যায়। প্রচন্ড শীত ও বর্ষার সময় বীজ বপন থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
  • সার ব্যবহার– নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য জমিতে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করা উচিৎ। এছাড়া রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ ইত্যাদি সার ব্যবহার করা উচিৎ।

নেপিয়ার ঘসের বীজের দাম

পূর্বে এই জাতের ঘাসের বীজ পাওয়া না গেলেও এখন পাওয়া যায়। ঘাসের মাথা থেকে যে গমের শিষের মত শিষ বের হয় সেখানেই থাকে এই বীজ। এই বীজ সরিষা দানার চেও ছোট প্রকৃতির হয়। বাজারে যে বীজ পাওয়া যায় এতে প্রচুর ভেজাল থাকে ও জার্মিনেশন হার কম থাকে। এই বীজের দাম ২৫০-৩০০ টাকা প্রতি কেজি।

নেপিয়ার ঘাসের ফলন

এই ঘাসের ফলন সুপার নেপিয়ারের চেয়ে কম হলেও অন্যান্য ঘাসের চেয়ে অনেক বেশি। হেক্টর প্রতি ফলন হয় বছরে ১৫০-২০০ টন। আমাদের দেশে এই ঘাস এতটাই জনপ্রীয় যে এর চাষ করতে হাতের কাছেই পাবেন এর কাটিং বা মোতা। প্রতিটি ঘাস চাষের উপযোগি মাঠেই বর্তমানে এই ঘাস চাষ হয়।

আরো পড়ুন- জার্মান ঘাস চাষ পদ্ধতি ও পুষ্টিগুণ