গবাদি পশুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ

গবাদি পশুর কলিজা কৃমি

গবাদি পশুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে একটি অতি মারাত্বক পরজীবীর ঘটিত রোগ। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি গবাদি পশুর কলিজা কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়। গলার নীচে ফুলে যাওয়া এই রোগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ যাকে Bottle Jaw Appearance বলে।

রোগের কারণ

বাংলাদেশে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা (Fasciola gigantica) নামক পাতা কৃমি দ্বারা রোমন্থক প্রাণি বিশেষ করে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি প্রাণি এই রোগে আক্রান্ত হয়। গরুর কৃমি রোগ গরুর জন্য কখনো ককনো মারাত্বক হতে পারে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় লিভার ফ্লুক, ট্রমাটোডগুলির অন্তর্গত একটি পরজীবী ফ্ল্যাটওয়ার্ম। চূড়ান্ত হোস্ট হ’ল ভেড়া, ছাগল, গবাদিপশু, মহিষ, ঘোড়া, গাধা পাশাপাশি অন্যান্য বন্য ও গৃহপালিত স্তন্যপায়ী প্রাণীরা এবং মানুষের মধ্যে।

গবাদি পশুর কলিজা কৃমি রোগের লক্ষন

  1. গবাদি পশু ক্রমশ শুকিয়ে যায় ও শরীরের লোম উস্কুখুস্কু দেকা যায়।
  2. যকৃত বা কলিজায় কৃমির উপস্থিতির কারণে রক্তে প্রটিনের অভাব দেখা যায়। এতে গরুর চোয়ালের নীচে ও বুকের বেড় এলাকায় জলপূর্ণ ফোলা অংশ দেখা যায়।
  3. আক্রান্ত গরু বা ছাগলের রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়।
  4. গবাদি পশুর বদ হজম ও ডায়রিয়া দেখা দেয়।
  5. ক্ষুধামন্দ্য, বিমর্ষতা, দূর্বলতা ও পেটে ব্যথা থাকে।
  6. প্রাণির মলে দুর্গন্ধ থাকে এবং কৃমির ডিম দেখতে পাওয়া যায় যা সূর্যের আলোতে চকচক করে।
গবাদি পশুর কলিজা কৃমি

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

  1. ট্রাইক্লাবেনডাজল ও লিভামিসল ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ডাবলডেক্স ভেট বোলাস / এলটি ভেট বোলাস / ইত্যাদি ভালো কার্যকরি।
  2. কৃমিনাশক ব্যবহারের পরপরই হেপাটনিক ভেট সল্যুশন লিভার টনিক খাওয়ানো উচিৎ।
  3. গবাদি পশুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ রোগের সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে বিভিন্ন ডিবি ভিটামিন যেমন- ক্যালফসটনিক ভেট পাওডার, রেনাভিট ডিবি, ডিবি ভিটামিন, ভিটামিক্স ডিবি সুপার ইত্যাদি ও সাথে জিংক (জিস ভেট) খাওয়ানো যেতে পারে।

নাইট্রোক্সিনিল (Nitroxynil) ফ্যাসিওলাইসিসের চিকিৎসার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঔষধ (সংক্রমণের 8 সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে পরিপক্ক এবং অপরিপক্ক ফ্যাসিওলা হেপাটিকার আক্রমণ)। নাইট্রোক্সিনিল চিকিত্সার মধ্যে অন্তর 60 দিনেরও কম হওয়া উচিত নয়। মানুষের চিকিত্সার জন্য গবাদি পশুকে শেষ চিকিত্সার 60 দিন পরে জবাই করা যেতে পারে। মানুষের ব্যবহারের জন্য দুধ উত্পাদনকারী গবাদিপশু গুলিতে ব্যবহার করবেন না।

ক্লারসুলন (Clorsulon) শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ফ্লুকের বিরুদ্ধে কার্যকর। মানুষের চিকিত্সার জন্য গবাদি পশুকে শেষ চিকিত্সার 60 দিন পরে জবাই করা যেতে পারে। মানুষের খাওয়ার জন্য দুধ উত্পাদনকারী গরুকে বা হেফার সহ দুগ্ধ গবাদি পশুদের খাওয়ানোর 60 দিনের মধ্যে পরিচালনা করবেন না।

গরুর কলিজা কৃমির ইনজেকশন

ছাগল গরুর কলিজা কৃমির ইনজেকশন একটি কার্যকরি কৃমিনাশক পদ্ধতি। শুধু কলিজা কৃমির জন্য নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইনজেকশন খুবই কার্যকারী। এছাড়াও আইভারমেকটিন গ্রুপের ইনজেকশনও ব্যবহার করা হয়। নাইট্রক্সিনিল ইনজেকশন এর মধ্যে রেনাটার নাইট্রনেক্স ও এসিআই এর নাইট্রক্সিনিল ইনজেকশন অন্যতম। প্রতি ২০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০ মিলি ঔষধ চামরার নিচে প্রয়োগ করতে হবে।

আরো পড়ুন: লাম্পি স্কিন ডিজিজঃ চিকিৎসা, ঔষধ ও ভ্যাকসিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *