হাঁসের জাত পরিচিতি- খাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার, জিনডিং, পিকিন ও মাসকোভি

হাঁসের জাত

হাঁসের জাত পরিচিতি- খাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার, জিনডিং, পিকিন ও মাসকোভি। বিভিন্ন হাঁসের জাতের নাম ও হাঁসের জাত চেনার উপায়। ডিম পাড়া জাতের হাঁস চেনার উপায় সমূহ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পারিবারিক পর্যায়ে হাঁস পালন একটি অত্যন্ত প্রাচীন রীতি। দেশে প্রচুর পুকুর, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় রয়েছে। যেখানে হাঁস পালন করা এবং নিজেদের খাদ্যের অর্ধেকের বেশিরভাগই পেতে পারে।

তাই অল্প মূলধনে হাঁসের ডিম হতে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। যদি হাঁসির সাথে পুকুরে মাছ চাষ করা হয় তবে কৃষক অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরো লাভবান হতে পারে। কারণ হাঁসের বিষ্ঠা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে তাল রেখে আমিষের অভাব পূরণ একটি গুরুতর সমস্যা।

হাঁসের ডিমে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ ও ভিটামিন যা আমাদের শরীর গঠনে একান্ত আবশ্যক।

হাঁস পালনের সুবিধা

  1. হাঁস পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালা ইত্যাদি স্থানে খেতে পারে বলে খাদ্যের প্রয়োজন কম হয়। ফলে হাঁসের খাদ্য খরচ মুরগির তুলনায় অনেক কম।
  2. হাঁস পালন মুরগি পালন অপেক্ষা অনেক সহজসাধ্য।
  3. মুরগি পালনের ক্ষেত্রে যতটা সর্তকতা অবলম্বন আবশ্যক হাঁস পালনের ক্ষেত্রে ততটা সতর্কতার প্রয়োজন হয় না।
  4. হাঁসের রোগবালাই মুরগির চেয়ে অনেক কম এবং সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না।
  5. মুরগির বাসস্থান খরচ অপেক্ষা হাঁসের বাসস্থান খরচ অনেক কম।
  6. হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে সাধারণত বড় এবং পুষ্টির দিক দিয়ে পরিমাণ বেশি।
  7. গ্রামীণ পরিবেশে মুরগির খামারে হাঁসের খামারের ব্যবস্থাপনা ও যত্ন নেয়া অধিক সহজ।
  8. হাঁস মাছের যুক্ত চাষে অর্থনৈতিকভাবে অধিক লাভবান হওয়া যায়। কারণ মাছের জন্য কোন সম্পূরক খাদ্য ব্যতিরেকেই মৎস্য উৎপাদন চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি করা সম্ভব। কেননা হাঁসের বিষ্ঠা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার।
  9. হাঁসের বিষ্ঠা এমন একটা অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান যা আমাদের সবজি বাগানের জন্য উৎকৃষ্ট সার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।

হাঁসের জাত পরিচিতি

প্রয়োজন অনুযায়ী হাঁসের জাত কে ভাগ করা হয়েছে। হাস কে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা

  1. ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের জাত
  2. মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের জাত
  3. সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী হাঁসের জাত

ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের জাত

যে জাতের হাঁস বেশি পরিমানে ডিম দেয় অর্থাৎ উৎপাদণের জন্য পালন করা হয় তাদের কে ডিম উৎপাদনকারী হাঁস বা ডিম দেওয়া হাস বলে।। ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের জাত হলো- খাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার, জিনডিং ইত্যাদি।

মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের জাত

মাংস উৎপাদনের নিমিত্তে যে জাতের হাঁস পালন করা হয় তাদের কে মাংস উৎপাদনকারী হাঁস বলা হয়। মাংস উৎপাদনকারী জাত হল পিকিন, মাসকোভি, আইলেসবেরি, কাইউগা, রোয়েন ইত্যাদি।

সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী হাঁসের জাত

পৃথিবীতে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রজাতির হাঁস দেখতে পাওয়া যায়। হাঁসের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এসকল জাতের হাঁস পালন অনেকেই করে থাকেন। এভরনের জাতের দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে। সৌন্দর্য প্রদানকারী হাঁসের জাত হলো- ক্যারোলিনা, ক্রিস্টিড হোয়াইট, ব্লু সুইডিশ, কল, ব্লাক ইস্ট ইন্ডিয়া ইত্যাদি।

খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস (khaki Campbell)

খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস (khaki Campbell)
চিত্র: খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস

খাকি ক্যাম্পবেল (khaki Campbell) জাতের হাঁস আমাদের দেশে ডিম উৎপাদনের জন্য বেশ জনপ্রীয়। বর্তমান সময়ে খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের খামার প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। এই হাঁসের জাতটি কে অনেকে দেশীয় জাত মনে করে ভুল করে। এই জাতের ডিম পাড়ার হার অন্য সকল হাঁসের তুলনায় বেশি।

উৎপত্তিস্থল

ইংল্যান্ডের মিসেস ক্যাম্পবেল নামক এক ভদ্রমহিলা হাজার ১৯০১ সালের খাকি ক্যাম্পবেল জাত উদ্ভাবন করেন। তিনি ইংল্যান্ডের দেশীয় ও ভারতীয় এই দুই জাতের মিশ্রণে এই জাতটি সৃষ্টি করেন। তার নামানুসারে এই হাঁসের জাতটির নাম রাখা হয়েছে।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্য

ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ জাতের হাঁস আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্য বা চেনার উপায় হলো-

  1. এ জাতের পুরুষ হাঁসের ঘাড় ও পিঠের রং কালো।
  2. স্ত্রী হাঁসের গায়ের রং খাকি বা গাঢ় বাদামি কিন্তু এক বছরের মতো বয়স হলে স্ত্রীজাতীয় হাস ধূসর বাদামী রং ধারণ করে।
  3. এ জাতের হাঁস আকারের দেশি হাঁসের মতো।
  4. এদের পা অনেক বেশি কৃষ্ণকায় ও একটু বেশি লম্বা।
  5. চোখের রং সবুজাভোকালো ও পায়ের রং বাদামি হয়ে থাকে।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের গড় ওজন

  1. হাঁসা 1.5 থেকে 2.4 কেজি
  2. হাঁসি 1.2 থেকে 1.8 কেজি

ডিম উৎপাদন ক্ষমতা

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৫০ থেকে ২৬০ টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের গড় ওজন 70 গ্রাম হয়। হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা জাতের ব্লাড পার্সেন্টটেজ ও ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাচ্চার দাম ও প্রাপ্তি স্থান

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাচ্চার দাম অন্য সব পোল্ট্রি বাচ্চার মতই ওঠা-নামা করে। ২০২১ সালে বাচ্চার দাম সাধারণত ১৫-৩০ টাকার মধ্যে থাকতে দেখা যায়। জাতের পিয়রিটি, পুরুশ বাচ্চার পরিমান ও চাহিদার উপর খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাচ্চার দাম নির্ভর করে। স্থাণীয় পোলিট্র ফিড ব্যবসায়ীদের কাছে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাচ্চার সরবরাহ পাওয়া যায়।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের নির্ভর জনক কোন প্রতিষ্ঠানের নাম আমার জানা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় স্থাণীয় পর্যায়ের হ্যাচারীতে ইনকিউবেটর বা তুষ পদ্ধতিতে বাচ্চা ফোটানো হয়। আর এখানেই মূল সমস্যা তৈরি হয়।

এ সকল হ্যারীতে বায়ো সিকিউরিটি সঠিক ভাবে মানা হয় না এবং জাতের মান নিয়ে চিন্তা করা হয় না। ফলোশ্রুতীতে দেখা যায় বাচ্চা থেকে আশানুরুপ উৎপাদন আসে না ও রোগাক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ বাচ্চা মারা যায়।

 ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস (Indian runner duck)

ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস (Indian runner duck)
ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস

ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস দেখতে কিছুটা পেঙ্গুইনের মত। এরা গলা উঁচু করে পেঙ্গুনের মত সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকে ও চলাচল করে। ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস তুলনামুলক ভালো ডিম দেয়। এদের পালকের রং প্রধানত সাদা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন বর্ণের রানার হাঁস দেখতে পাওয়া যায়।

উৎপত্তিস্থল

প্রথম উৎপত্তিস্থল ইস্ট ইন্ডিয়া পরে বেলজিয়াম ও পোল্যান্ডের জাত উন্নয়ন করা হয়। এ জাতের তিনটি উপজাত রয়েছে, তবে সাদা ইন্ডিয়ান রানার এ দেশে বেশি প্রচলিত।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের বৈশিষ্ট্য

  • এ জাতের হাঁসের গায়ের রং অর্থাৎ পালকের রং ধবধবে সাদা।
  • পা কমলা থেকে লাল কমলা রঙের হয়ে থাকে।
  • এ জাতের হাঁস ঘাড় সোজা করে হাঁটে।
  • চলার সময় ঘার খাড়া রাখাই এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
  • এ জাতের হাঁস সাধারণ হাঁসির মতো এদিক ওদিক হেলে-দুলে চলে না। এরা ঘাড় সোজা করে দৌড়ে দৌড়ে চলে।
  • শরীরের গঠন পা থেকে মাথা পর্যন্ত অনেকটা সরল রৈখিক।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের গড় ওজন

ইন্ডিয়ান রানার হাঁস ওজনে খাকি ক্যাম্পবেল বা দেশি হাঁসের প্রায় সমান। তবে আক্রিতি ও গঠনে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ জাতের স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের গড় ওজন-

  1. হাঁসা- 1.5 থেকে 2.0 কেজি
  2. হাঁসি 1.1 থেকে 1.6 কেজি

রানার হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা

ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের তুলনায় কম হলেও এরা বছরে ২০০ থেকে ২২০ টিডিম দেয়। ইন্ডিয়ান রানার হাঁস মূলত ডিম উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয়।

জিনডিং জাতের হাঁস (jinding duck)

জিনডিং জাতের হাঁস (jinding duck)
জিনডিং জাতের হাঁস

জিনডিং জাতের হাঁস (jinding duck) ডিম উৎপাদনের জন্য উপমহাদেশের প্রায় সকল দেশেই পালন করা হয়। এরা লবনাক্ত পরিবেশ পছন্দ করে। সমূদ্র উপকুলবর্তী এলাকায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। এ জাতের হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।

জিনডিং হাঁসের উৎপত্তিস্থল

চীন দেশ এদের উৎপত্তিস্থল। অতি প্রাচিন কাল থেকে চীন দেশে এদের ডিমের জন্য পালন করা হতো।

জিনডিং হাঁসের বৈশিষ্ট্য

  1. এ জাতের হাঁসের গায়ের রং খাকি ক্যাম্বেল এর মত।
  2. জিনডিং হাঁসের ঠোঁটের সামান্য দিক চোঁখা এবং হলুদ বর্ণের।
  3. এদের গলা লম্বা হয়।
  4. লবণাক্ত অঞ্চলে এ জাতের হাঁস প্রচুর ডিম উৎপাদন করে।
  5. সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর এলাকায় এ জাতের হাঁস পালন করা উচিত। ডিম উৎপাদন ক্ষমতা বছরে 230t থেকে 240

হাঁসের গড় ওজন

জিনডিং হাঁস দেখতে যেমন খাকি ক্যাম্পবেল এর মত ওজনও প্রায় একই রকম। পুরুষ হাঁসের ওজন স্ত্রী হাঁসের তুলনায় বেশি হয়।

  1. হাঁসা- ১.৫-২.২ কেজি
  2. হাঁসি- ১.২-১.৮ কেজি

জিনডিং হাঁস ডিম উৎপাদন ক্ষমতা

জিনডিং হাঁস বছরে ২৩০ থেকে ২৪০ টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের গড় ওজন 70 গ্রাম হয়। হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা জাতের ব্লাড পার্সেন্টটেজ ও ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে।

সাধারণ হাঁস বা দেশি হাঁস (যেটা কোন জাত নয়)

  1. বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ইত্যাদি এলাকায় এই ধরণের দেশি হাঁস দেখা যায়।
  2. এ জাতের হাঁসের গায়ের রং বিভিন্ন প্রকার হতে পারে সাদা, কালো, কালো ও সাদার মিশ্রণ এবং হালকা তামাটে রঙের সবচেয়ে বেশি।
  3. ঠোঁট হলদে দেখা যায়, পালক পরিপূর্ণভাবে গজালে হাঁসের ঘাড় ও মাথা নীল বর্ণ ধারণ করে।
  4. দেশি হাঁস প্রতিকূল আবহাওয়ায় সহজেই মানিয়ে নিতে পারে এবং দেশে যদি খাদ্যাভাব দেখা দেয় তখনও টিকে থাকতে পারে।
  5. ইহার নিজেদের খাদ্য সহজেই খুজে নিতে পারে কিন্তু এদের পা অত্যান্ত খাটো হয় এদের শরীর প্রায় মাটিতে লেগে যায় যা তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে একটি ভিশন অন্তরায়।
  6. এগুলোর মাংস সুস্বাদু এবং প্রারম্ভিক খামারিদের জন্য এটি একটি ভাল জাত।
  7. গড় ওজন হাঁসা- 1.8 থেকে 2.1 কেজি, হাঁসি- 1.7 থেকে 1.9 কেজি।
  8. ডিম উৎপাদন ক্ষমতা বছরে 140 টি হতে 170 টি।
  9. ডিমের গড় ওজন 56 গ্রাম।

পিকিন বা বেইজিং জাতের হাঁস

পিকিন জাতের হাঁস মাংস উৎপাদনকারী হিসেবে ভীষণভাবে সমাদৃত। পিকিন হাঁস আকারে বড় ও জওনে বেশি হয়। এদের মাংস খুব সুস্বাদু। পিকিন হাঁস কে বেইজিং হাঁসও বলা হয়।

বেইজিং বা পিকিন হাঁসের উৎপত্তিস্থল

1873 সালে চীন দেশে এই হাস প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। মাংম উৎপাদনকারী জাত হিসাবে চীনে ডেভেলপ করা হয়েছে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক হাঁস থেকে ৪-৫ কেজি মাংস পাওয়া যায়। আমেরিকা ইউরোপ ও এশিয়া সহ প্রায় সকল দেশে পিকিন হাঁস পালন করা হয়।

বেইজিং বা পিকিন হাঁসের বৈশিষ্ট বা চেনার উপায়

  1. এ জাতের পালকের রং ধবধবে সাদা এবং শরীর খুব প্রশস্ত।
  2. ঠোঁটের রঙ কমলা রং মিশ্রিত হলুদ।
  3. চামড়া কমলা রং হলুদ।
  4. পায়ের পাতা এবং পায়ের নলা রং লালচে হলুদ।
  5. গড় ওজন হাঁসা- 4 কেজি হাঁসি- 3.5 কেজি।

ডিম উৎপাদন ক্ষমতা

বেইজিং বা পিকিন হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় 100 টি। অন্যান্য মাংস উৎপদনকারী হাঁসের তুলনায় পিকিন বা বেইজিং জাতের হাঁসের ডিম পাড়ার হার বেশি। আর এজন্য এই হাঁস পালনে অধীক লাভবান হওয়া যায়।

হাঁসের জাত পরিচিতি- খাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার, জিনডিং, পিকিন ও মাসকোভি

মাসকোভি জাতের হাঁস

এ জাতের হাঁস ব্রাজিলে উৎপত্তি এবং অস্ট্রেলিয়ায় এটির খুব জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ জাতের হাঁস দেখতে বড় লম্বা এবং প্রশস্ত শরীর। অন্যান্য জাতের পুরুষ হাঁসের মতো এ পুরুষ জাতের লেজে কোন কোঁকড়ানো পালক নেই। সাদা এবং কালো বর্ণের এ জাতের দুটি উপজাত রয়েছে। এ জাতের হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে 32 থেকে 35 দিন সময় লাগে।

হাঁসের সারা শরীর পালক পরিপূর্ণ হতে 16 সপ্তাহ সময় লাগে, যেখানে অন্য জাতের হাঁসের ক্ষেত্রে 12 সপ্তাহ। এ জাতের মাংস খুবই সুস্বাদু এবং সহজে মাংসের জন্য বাজারজাত করা যায়। এ জাতের ডিমে তা দেওয়ার ক্ষমতা প্রবল। এদের লম্বা এবং তীক্ষ্ণ নখ যুক্ত রয়েছে ।এ জাতের সাথে যখন অন্য কোন হাঁসের প্রজনন ঘটানো হয় তখন যে প্রজন্মের সৃষ্টি হয় তা হয় বন্ধ্যা, একে মিউল হাঁস বলা হয়।

এগুলো ভালো মাংস উৎপাদন করে থাকে। পূর্ণবয়স্ক মাসকোভি জাতের হাঁসের ওজন 7.5 কেজি এবং হাঁসির 3.25 কেজি।

আইলেসবারি জাতের হাঁস

যুক্তরাজ্যের বাকিংহাম শহরে এদের উৎপত্তিস্থল। যুক্তরাজ্যে এবং পৃথিবীর যেকোন দেশে আইলেসবারি জাতের হাঁস মাংস উৎপাদনকারী হিসেবে প্রশংসার দাবিদার। এ জাতের শরীর প্রশস্ত, শরীর সাদা পালক আবৃত। এ জাতের পা ছোট কিন্তু বলিষ্ঠ এবং পায়ের নলা রং কমলা। চোখের এবং কানের রং ও কমলা বর্ণের লালচে রঙের। আইলেসবারি জাতের হাঁসের মাংস নরম সুস্বাদু এবং সহজপাচ্য হয়ে থাকে। ডিমের খোসার রং সাদা। ৮ সপ্তাহে মাংসের জন্য বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে থাকে। গড় ওজন হাঁসা- 4.5 কেজি এবং হাঁসি 3.5 কেজি।

রোয়েন জাতের হাঁস

উৎপত্তিস্থল- ফ্রান্সের রোয়েন শহরে এ জাতের উৎপত্তিস্থল। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি প্রতিপালন করা হয়। এ জাত আকারে বেশ বড়। এরা দেখতে লম্বাটে এবং শরীর গভীর প্রশস্ত। এ জাতের মাথা এবং লেজের দিক সবুজ বর্ণের। বুকের রং হালকা লাল এবং পায়ের নলা রং হলুদ। ঠোঁটের উপরের দিক হলুদ বর্ণের কিন্তু নিম্নভাগ বাদামী রঙের হয়ে থাকে।

গলায় তাদের সাদা রঙের পালক দেখা যায় যা দেখতে মালার মতো দেখায়। যদিও এজাত মাংসের জন্য প্রতিপালন করা হয় তবুও এরা ভালো ডিম উৎপাদন করে থাকে। ডিমের খোসার রং সাদা সবুজে মিশ্রিত হয়ে থাকে।

এদের বৃদ্ধি খুব আস্তে আস্তে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হতে এদের অনেক দিন সময় লাগে। গড় ওজন হাসা- 7.5 কেজি এবং হাসি 3.5 কেজি।

পুরুষ ও স্ত্রী জাতের হাঁসের মধ্যে পার্থক্য

হাসতে বড় আকারের এবং স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে হাসি হাসা অপেক্ষা দেখতে আকারে ছোট এবং হালকা হয়ে থাকে। অধিকাংশ হাসির হাসা দেখতে প্রায় কালো রংয়ের হয়। বেশিদিন ধরে ডিম পারলে এদের চরম লালবর্ণ থেকে হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। নিজের দুই থেকে একটি পালক কোঁকড়ানো পরিলক্ষিত হয়। হাসির লেজের পালক কোঁকড়ানো হয় না। হাসার গলায় আওয়াজ ফ্যাঁসফ্যাঁসে অস্পষ্ট শব্দের হয়।

হাসি গুলো খুব জোরে প্যাক প্যাক করে ডাকে এদের আওয়াজ স্পষ্ট। 6 থেকে 7 সপ্তাহ বয়স হলেই আওয়াজ থেকে এদের চেনা যায়। হাসার প্রজননতন্ত্রের শেষাংশে ক্যাপিলা থাকে কোন বাড়তি অংশ হাসিতে থাকেনা।

উপরে উল্লেখিত পার্থক্যসমূহ সাধারণভাবে হাঁসাহাঁসির পার্থক্য সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হলেও এক মাস পর হতে গলার আওয়াজ শুনে অনেকে হাঁসা ও হাঁসি পার্থক্য করে থাকেন। তবে এই প্রক্রিয়ায় শতকরা 85 থেকে 90 ভাগ পার্থক্য সঠিক হতে পারে।

2 thoughts on “হাঁসের জাত পরিচিতি- খাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার, জিনডিং, পিকিন ও মাসকোভি”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *