সয়াবিন মিল– প্রোটিনের প্রধান উৎস। সয়াবিন মিল গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মাছ সহ সকল ফার্ম এনিমেলের অন্যতম প্রোটিনের উৎস্য। এর কয়েকটি প্রচোলিত নাম রয়েছে। যেমন- সয়াবিন মিল, সয়ামিল, সয়াবিনের খৈল, সয়া প্রোটিন ইত্যাদি। সয়াবিন মিল বা খৈল থেকে ৪২%-৪৮% প্রোটিন পাওয়া যায়। এবং এই খৈলের প্রোটিনের মান খুবই ভালো। এই প্রোটিনে অন্যান্য উদ্ভিজ্য প্রোটিনের তুলনায় বেশি পরিমানে এমাইনো এসিড বিদ্যমান থাকে।
বাংলাদেশে লেয়ার, ব্রয়লার, সোনালী মুরগি ও মাছের খাদ্যে এই মিল বা খৈল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটিকে ফিস মিলের বিকল্প ধরা হয়। গবাদিপশুর জন্য এটি অত্যান্ত ভালো মানের প্রোটিনের উৎস্য হলেও আমাদের দেশের গরু ও ছাগল খামারে এর ব্যবহার খুব কম। আমাদের দেশের গবাদিপশুর খামারিগণ ৩৫ টাকা কেজি গমের ভুষি খাওয়াবে কিন্তু ৩৫ টাকা কেজি সয়াবিনের খৈল খাওয়াবে না।
সয়াবিন মিল কি?
সয়াবিন সিডস্ বা বীজ থেকে তেল তৈরীর ফলে যে বাই প্রোডাক্ট উৎপন্ন হয় তাকেই সয়াবিন মিল বা খৈল কলা হয়। এটি সারা পৃথিবীতে ব্যাপক জনপ্রীয় খাদ্য উপাদান। এই খৈলে ৪২-৪৮ ভাগ প্রোটিন ও ২ ভাগ তেল বা ফ্যাট থাকে।
সয়াবিন দানা বা ফুল ফ্যাট সয়াবিন
সয়াবিন বীজ কেই সয়াবিন দানা বা ফুল ফ্যাট সয়াবিন বলে। এই দানাও ফার্ম এনিমেলের খাদ্যের অন্যতম অংশ। শুকনো এই বীজে ৪০% প্রোটিন ও ২০% তেল বা ফ্যাট থাকে।
সাধারণত বাংলাদেশের ফিড মিল গুলোতে এটি ব্যবহার হয়। খাদ্যে ফুল ফ্যাট সয়াবিন ব্যবহার করলে খাদ্যে আলাদা ভাবে তেল বা ফ্যাট সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার দরকার পরে না। এটি ব্যবহার করে খাদ্যের উৎপাদন খরচ কমান যায়।

সয়াবিন দানার দাম
সয়াবিন দানা/বীজ বা ফুল ফ্যাট সয়াবিনের দাম প্রোটিন ও ফ্যাট বিচারে খুবই কম। এনিমেল প্রোটিন যেখানে ৬০% প্রোটিন থাকে তার দাম ১০০-১৫০ টাকা সেখনে ৪০% প্রোটিন ও ২০% ফ্যাট পাওয়া যাচ্ছে ৬০-৬৫ টাকার মধ্যে। বাংলাদেলে আমেরিকা, চীন, মালেশিয় সহ নানা দেশে থেকে সয়াবিন মিল ও ফুল ফ্যাট সয়াবিন আমদানী হয়। যেহেতু আমদানী নির্ভর এটি সেহেতু দাম ওঠা নামা করে।
সয়াবিন দানা যেখানে পাওয়া যায়
এখন প্রশ্ন সয়াবিন দানা কোথায় পাওয়া যায়? বর্তমানে বাংলাদেশেও সয়াবিনের চাষ শুরু হয়েছে। লক্ষীপুর ও কুমিল্লা জেলায় তবে খুবই সামান্য পরিসরে। আর বিদেশ থেকে আমদানী করে মুলত কয়েকটি তেল কোম্পাণি ও ফিড কোমাপাণি গুলো। আপনার আশে পাশের ফিড মিল গুলোতে যোগাযোগ করে আপনি সহজেই এটি সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও প্রশিদ্ধ গবাদিপশুর ফিড বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ হরতে পারেন।
সযামিল/সয়াবিন মিলের পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ
খাদ্য গুণ
এটি এভারেজ হিসাব। সয়াবিন মিলের পুষ্টিগুণ কম বা বেশি হতে পারে। এটি নির্ভর করে খৈলের কেয়ালিটির উপর।
ক্রমিক নং | পুষ্টি উপাদান | পুষ্টিমান % |
০১ | ড্রাই মেটার/শুষ্ক পদার্থ | ৮৭.৭ |
০২ | ক্রূড প্রোটিন | ৪৩.৫ |
০৩ | ক্রূড ফাইবার | ৬.৩ |
০৪ | ক্রূড ফ্যাট | ১.৭ |
০৫ | অ্যাস | ৬.৫ |
০৬ | স্টার্চ | ৬ |
০৭ | মোট সুগার | ৯.৩ |
০৮ | মেটাবলিক এনার্জি (কিলোক্যালোরি) | ৪০৯০ কিলোক্যালোরি/কেজি |

মিনারেল বা খনিজ উপাদান
এই খৈলে অনেক গুলো অর্গানিক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। সয়াবিন খৈলে যেসকল মিনারেল যতটুকু পাওয়া যায়।
ক্রমিক নং | মিনারেল বা খনিজ উপাদান | পরিমান |
০১ | ক্যালসিয়াম | ৩.৪ গ্রাম/কেজি |
০২ | ফসফরাস | ৬.২ গ্রাম/কেজি |
০৩ | ফাইটেট ফসফরাস | ৩.৭ গ্রাম/কেজি |
০৪ | ম্যাগনেশিয়াম | ২.৯ গ্রাম/কেজি |
০৫ | পটাশিয়াম | ২১.৫ গ্রাম/কেজি |
০৬ | সোডিয়াম | ০.০৮ গ্রাম/কেজি |
০৭ | ক্লোরিন | ০.৪ গ্রাম/কেজি |
০৮ | সালফার | ৪ গ্রাম/কেজি |
০৯ | ম্যাসগানিজ | ৩২ মিলিগ্রাম/কেজি |
১০ | জিংক | ৩৬ মিলিগ্রাম/কেজি |
১১ | কপার | ১৪ মিলিগ্রাম/কেজি |
১২ | আয়রণ | ২৪০ মিলিগ্রাম/কেজি |
১৩ | সেলিনিয়াম | ০.২ মিলিগ্রাম/কেজি |
১৪ | কোবাল্ট | ০.৩ মিলিগ্রাম/কেজি |
১৫ | মলিবডিনাম | ৪ মিলিগ্রাম/কেজি |
১৬ | আয়ডিন | ০.১ মিলিগ্রাম/কেজি |
ভিটামিন সমুহ
সয়াবিন মিলে নিম্নরূপ ভিটামিন পাওয়া যায়।
ক্রমিক নং | ভিটামিন | পরিমান |
০১ | ভিটামিন- ই | ৪.৮ মিলিগ্রাম/কেজি |
০২ | ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) | ৩ মিলিগ্রাম/কেজি |
০৩ | ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাবিন) | ৩ মিলিগ্রাম/কেজি |
০৪ | ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) | ৭ মিলিগ্রাম/কেজি |
০৫ | নিয়াছিন | ৩৯.৯ মিলিগ্রাম/কেজি |
০৬ | প্যানটোথিনিক এসিড | ১৫ মিলিগ্রাম/কেজি |
০৭ | বায়োটিন | ০.৩ মিলিগ্রাম/কেজি |
কোলিন | ২৭৯২ মিলিগ্রাম/কেজি |

এমাইনো এসিড সমুহ
সযাবিন মিলে প্রাপ্ত প্রোটিনে সিম্নোক্ত পরিমান এমাইনো এসিড পাওয়া যায়।
ক্রমিক নং | এমাইনো এসিড | পরিমান |
০১ | লাইসিন | ২৭ গ্রাম/কেজি |
০২ | থ্রিওনিন | ১৬.৮ গ্রাম/কেজি |
০৩ | মিথিওনিন | ৬.২ গ্রাম/কেজি |
০৪ | সিসটিন | ৬.৭ গ্রাম/কেজি |
০৫ | মিথিওনিন+সিসটিন | ১৩ গ্রাম/কেজি |
০৬ | ট্রিপটোফেন | ৫.৯ গ্রাম/কেজি |
০৭ | আইসোলিউসিন | ১৯.৯ গ্রাম/কেজি |
০৮ | ভ্যালাইন | ২১ গ্রাম/কেজি |
০৯ | লিউসিন | ৩৩.১ গ্রাম/কেজি |
১০ | ফেনিলালানিন | ২২ গ্রাম/কেজি |
১১ | টাইরোসিন | ১৫.৩ গ্রাম/কেজি |
১২ | ফেনিলালানিন+টাইরোসিন | ৩৭.৩ গ্রাম/কেজি |
১৩ | হিসটাডিন | ১১.৭ গ্রাম/কেজি |
১৪ | আর্জিনিন | ৩১.৮ গ্রাম/কেজি |
১৫ | এলানিন | ১৯ গ্রাম/কেজি |
১৬ | এসপার্টিক এসিড | ৪৮.৯ গ্রাম/কেজি |
১৭ | গ্লুটামিক এসিড | ৭৭.৪ গ্রাম/কেজি |
১৮ | গ্লাইসিন | ১৮.৩ গ্রাম/কেজি |
১৯ | সেরিন | ২০.৯ গ্রাম/কেজি |
২০ | প্রোলিন | ২১.৭ গ্রাম/কেজি |
সয়াবিন খৈলের ব্যবহার
প্রাণি খাদ্যে প্রোটিনের সোর্স কিসাবে সয়াবিন মিল বা খৈল এর ব্যবহর উল্লেখ করার মত। সারা পৃথিবীতে ব্যবহৃত মোট প্রোটিনের দুই তৃতীয়াংশ ব্যবহৃত হয় এই মিল। ডেইরী, পোল্ট্রি ও একুয়া কালচার সকল প্রাণির খাদ্যে এটি ব্যবহার করা যায়। জাত ও বয়স ভেদে ১০-৫০% পর্যন্ত এটি খাদ্যে ব্যবহার করা যায়।
সয়াবিন মিলের বিশেষত্ব
সয়াবিন মিলের বিষেশত্ব কী? কেন এতো বেশি পরিমানে ব্যবহার হয়? প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট হিসাবে অবশ্যই এর বিশেষ আছে। আপনারা এর পুষ্টিগুণ দেখে অলরেডি কিছু ধারনা পেয়েছেন। প্রোটিন যেমনি বেশি তেনি এর প্রোটিনের গুনগত মান খুব ভালো। প্রোটিনে এমাইনো এসিডের পরিমান অনেক বেশি। এছাড়াও প্রচুর ভিটমিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। এবং এর দামও তুলনামুলক কম।
সয়াবিন মিল যেখানে পাওয়া যায়
সয়াবিন মিল মুলত তেল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে উৎপন্ন হয় এবং সেখান থেকে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীরা কিনে আনে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি জেলায় এক বা একাধিক জন এই ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকতে তে দেখা যায়।
বেশি পরিমানে ও ন্যায্য দামে সয়াবিন মিল পেতে হলে সেসকল ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। বাংলাদেশে মুলত তীর, ফ্রেস ও মুসকান এই তিনটি প্রতিস্ঠানের সয়াবিন খৈল পাওয়া যায়। এবং প্রচুর পরিমানে বীদেশ থেকে আমদানী হয়। এছাড়াও গবাদিপশুর প্রশিদ্ধ খাদ্য বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করলে পেতে পারেন।

সয়াবিন খৈলের দাম
যে সময়ে আর্টিকেল টি লিখছি তখন সয়াবিন মিলের দাম চলছে ৩৯-৪০ টাকা প্রতি কেজি। এটাই এর সর্বোচ্চ দাম, তাছাড়া এর নিয়মিত দাম ৩২-৩৫ টাকার মধ্যে থাকে। এগুলো বলছি দেশিয় তীর বা ফ্রেস কোম্পাণির কথা। তবে আমদানী করা সযাবিন মিল এর দাম এর চেয়ে ২-৩ টাকা প্রতি কেজি তে কম হয়। আমদানী করা সয়াবিনের মান খুব বেশি ভালো থাকে না।
ব্যবহার মাত্রা ও সতর্কতা
ডেইরী ক্যাটেল কে দৈনিক দানাদার খাদ্যে সর্বোচ্চ ৪০% এবং ষাঁড় গরুকে সর্বোচ্চ ৫০% এর মত সয়াবিন মিল দেয়া যেতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে দৈনিক দানাদার খাদ্যের ৩০% সয়াবিন মিলের ব্যবহার সুষম পরিমান হিসাবে ধরা হয়।
লেয়ার মুরগির ফিডে ২০-৩০% ও ব্রয়লার মুরগির ফিডে ২৫-৪০ % ব্যবহার করা যায়। সয়াবিন মিল ব্যবহারের পরিমান নির্ভর করে অন্যান্য উপাদান ও প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের উপর।
অন্যান্য খাদ্য তৈরীর উপাদান
খাদ্য তৈরির অন্যান্য উপাদান সম্পর্কে জানুন।
আরো পড়ুন- এমাইনো এসিড কি এবং কেন?