শোল মাছ আমাদের একটি সু-পরিচিত মাছ। দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে শোল মাছ অন্যতম। দেখতে টাকি বা চ্যাং মাছের মত হলেও এর আলাদা কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। এই মাছ খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ। শোল মাছে দরকারি মিনারেল থাকে। আমাদের দেশের খাল-বিল কমে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে এখন এই মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে এখন বড় পরিসরে শোল চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শোল মাছের শ্রেণীবিন্যাস
প্রাণি বিজ্ঞানে এই প্রজাতির মাছের শ্রেণীবিন্যাস ও অবস্থান নিম্নরূপ-
কিংডম: Animalia
ফাইলাম: Chordata
ক্লাস: Actinopterygii
অর্ডার: Perciformes
পরিবার: Channidae
জেনাস/বংশ: Channa
প্রজাতি: Channa striata
শোল মাছ পরিচিতি
মাছের নাম | শোল (snakehead murrel) |
মাছের বৈজ্ঞানিক নাম | Channa striata |
প্রচলিত নাম | সোল, গজার বা মহাশোল মাছ। |
দৈহিক গঠন | শরীর মাঝারিভাবে সংকুচিত ও চ্যাপ্টা। পাতলা চামড়ায় আবৃত, কডাল গভীরভাবে কাঁটাযুক্ত। আকারে ছোট। রঙের রূপালী, একটি কালো দাগ মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত শরীরের উভয় পাশে দেখা যায়। এই প্রজাতি 20 সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য হয়। |
প্রাপ্তি স্থান | চীন, পাকিস্তান, ভারতের অধিকাংশ জায়গা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচুর শোল মাছ পাওয়া যায়। |
জলাশয় | নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুরের পানির বসবাস করে। |
রোগ | এই মাছের বিশেষ রোগ নেই। পানি বাহিত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ক্ষতরোগ, পাখনা পচা, ফুলকা পচা, লেজ পচা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। |
খাদ্য | এরা রাক্ষুসে মাছ, ছোট অবস্থায় ফিস মিল বা শুটকি মাছের গুড়া ও পরে ছোট প্রকৃতির সস্তা মাছ খেতে দেওয়া উচিত। |
উৎপাদন | ৬ মাসে প্রতিটি শোল মাছের ওজন ৭০০-১০০০ গ্রামের হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক সোল মাছ লম্বায় ২.৫-৩ ফিট হতে পারে এবং ৫-৭ কেজি হতে পারে। |
প্রজনন | সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে প্রজনন করে থাকে। |
বাজার দাম | এই মাছের বাজার মূল্য খুবই ভালো। বাজারে এই মাছের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। |
স্বাদ ও পুষ্টি
এটি একটি দেশি জাতের মাছ। লাউ এর সাথে শোল মাছের ঝোল তরকাড়ি একটি সমাদ্রিত প্রচলন রয়েছে। পুষ্টির দিক থেকেও এই মাছ সেরা।
পানি | ৭৮.০ |
প্রোটিন | ১৬.২ |
ফ্যাট | ২.৩ |
আয়রণ | ০.৫৪ |
ক্যালসিয়াম | ০.১৪ |
ফসফরাস | ০.১৯ |
কার্বোহায়ড্রেট | – |
ক্যালোরি | – |

শোল মাছ চাষ পদ্ধতি
এই মাছ ধানক্ষেত, ডোবা, নালা, চৌবাচ্চা, পুকুর প্রভৃতি পানিতে চাষ করা যেতে পারে। দুষিত পানিতে এই মাছ সহজে মারা যায় না। কিছু সাব্ধানতা অবলম্বন করলে পুকুরে এই মাছ সহজেই চাষ করা যায়। চাষের জন্য ভিয়েতনাম শোল অথবা দেশি শোল অথবা মহাশোল জাত পছন্দ করা যেতে পারে। পুকুরে বা জলাশয়ে শোল মাছ চাষ পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো।
পুকুর নির্বাচন
- পুকুর রৌদ্র ও আলোকিত খোলামেলা হতে হবে।
- পুকুর পাড়ে বড় গাছপালা রাখা যাবে না।
- দিনে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা রৌদ্রালোক নিশ্চিত করতে হবে।
- পুকুরের গড় গভীরতা ৩.৫-৪.৫ ফুট হওয়া উচিত।
- পুকুরে বছরে ন্যূনতম ৫-৬ মাস পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে।
- পুকুরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- পুকুরের তলদেশ সমতল ও পঁচা কাদা যুক্ত হওয়া উচিত।
- বন্যামুক্ত ও বসতবাড়ীর আশে-পাশে পুকুর নিতে হবে।
পুকুর প্রস্তুতি
পুকুরে পানি দেওয়ার আগে পুকুরের সব পানি বের করে পুকুর শুকাতে হবে। পুকুরের পাড় মজবুত করে বাধতে হবে। মাটিতে চুন প্রয়োগ করে তারপর পানি প্রবেশ করাতে হবে।
মজুদ করণ
প্রাকৃতিক উৎস যেমন- খাল, বিল বা বড় পুকুর হতে বড় শোল ব্রুড সংগ্রহ করে চাষের পুকুরে মজুদ করা যেতে পারে। অথবা হ্যাচারী থেকে রেনু কিনে চাষ শুরু করা যেতে পারে। প্রতি শতকে ১০টি মাছ মজুদ করা যাবে। একবার ব্রুডার মাছ স্টক হলেই আর চিন্তা নেই। এক বছর পর থেকেই মাছ ডিম দিতে শুরু করবে।
দেশের ময়মনসিংহ, যসোর সহ বিভিন্ন জায়গার স্যাচারীতে শোলের রেনু ও পোনা কিনতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে কিনেও চাষ করা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে ময়মনসিংহ, যসোর ও শাতক্ষিরায় ব্যাপক শোল মাছ চাষ করা হচ্ছে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
- খাবার হিসেবে ছোট অবস্থায় ফিস মিল দিতে হবে।
- পরবর্তিতে ফিসমিলের পাশাপাশি শুটকি মাছ ও ছোট তাজা মাছ দেওয়া হয়।
- এছাড়াও পোল্ট্রি মিল, মিট এন্ড বোন মিল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
অন্যান্য ব্যবস্থাপনা
- ১৫ দিনে একবার নমুনা সংগ্রহ করে গড় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে মোট খাদ্যের পরিমাণ ঠিক করে নিতে হবে।
- পুকুরের পরিবেশ ভালো রাখতে প্রতি মাসে একবার পুকুরে জিওলাইট অথবা চুন দিতে হবে।
- মাছ নিয়মিত খাবার খায় কিনা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
- এক পুকুরের জাল অন্য পুকুরে ব্যবহারের আগে ভাল পানির সাথে জিবাণু নাশক পটাশ মিশিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
মাছ ধরা ও বাজারজাতকরণ
৬ মাস শেষে মানি সেচে সব মাছ ধরে ফেলতে হবে এবং বাজারজাত করতে হবে। এই মাছ সহজে মারা যায় না বিধায় তাজা অবস্থায় বাজারজাত করা যায়।
আরো পড়ুন- মাছের খাদ্য তৈরি ও উপকরণ
যশোর, সাতক্ষীরা বানান ভুল আছে।
ধন্যবাদ মূল্যবান তথ্য শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ।