লাম্পি স্কিন ডিজিজঃ চিকিৎসা, ঔষধ ও ভ্যাকসিন। লাম্পি স্কিন ডিজিজ গরুর জন্য একটি ভয়ংকর ভাইরাস জনিত রোাগ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সব জায়গায় গবাদি পশু এলএসডি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগ খামারের জন্য বড় ধরণের ক্ষতির কারণ। বর্তমানে একটি খামার কে অর্থনৈতিকভাবে লোকসান এনে দেওয়ার জন্য এফএমডি বা ক্ষুরা রোগের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর রোগ হিসাবে ধরা হয় এটিকে।
প্রধাণত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে যে সময়ে মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার করে সে সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
রোগ পরিচিতি
রোগের নাম | লাম্পি স্কিন ডিজিজ (lumpy skin disease) |
রোগের ধরণ | ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ |
জীবাণুর নাম | lumpy skin disease virus |
সংক্রমণ | গরু ও মহিষ |
মৃত্যুর হার | আফ্রিকাতে ৪০% |
সংক্রমণের বয়স | যেকোন |
চিকিৎসা | চিকিৎসায় প্রাণি ৯০ ভাগই সুস্থ্য হয়। |

রোগের কারণ
এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদি পশু এই রোগে আক্রান্ত হয়। এবং মশা-মাছির মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।
লাম্পি রোগের লক্ষণ
- আক্রান্ত গরুর তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা ১০৫ থেকে ১০৭ ডিগ্রী পারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
- নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়া, মুখ দিয়ে পানি ঝরতে দেখা যায়। অনবরত চোখ দিয়ে পানি ঝরার কারণে গরুর চোখ এক পর্যায়ে অন্ধ হয়ে যায়।
- গরুর পুরো শরীর জুড়ে লাম্প বা মাংশের পিন্ডের মত আচিল দেখা যায়।
- কখনো এই লক্ষণ শুধুমাত্র গবাদি পশুর মাথা, ঘাড়, সামনের পা, ওলান অথবা জননাঙ্গে দেখা যায়।
- গরুর চামড়া বা ত্বকে অসংখ্য গোলাকার নডিউল দেখা যায় যা প্রায় ৩ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট হয়। নডিউল গুলো পরিণত হলে খসে পড়ে এবং চামড়ায় হেমরেজ বা ক্ষত দেখা যায়। নডিউলে অনেক সময় মায়াসিস দেখা যায়।
- পুরো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লিম্ফনোড গুলো ফুলে যায়, ওলান, পা এবং ঘাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে যায়।
- মুখ, খাদ্যনালী ও ট্রাকিয়ার মিউকাস মেমব্রেনে ভেসিকল ও আলসার দেখা যায়।
- ষাঁড় গরুর ক্ষেত্রে ইনফার্টিলিটি দেখা যায় এবং গর্ভবতী প্রাণিতে গর্ভপাত হতে দেখা যায়।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ হলে করনীয়
LSD (Lampy Skin Disease) দ্রুত ছোঁয়াছে এক প্রকার ভাইরাস ঘটিত রোগ।
- প্রতিদিন 50+50=100 গ্রাম খাবার সোডা ও নিম পাতা খাওয়াতে হবে।
- জ্বর থাকলে ফাস্ট ভেট ও কিটোভেট ট্যাবলেট দিন।
- ফিটকিরি ও পটাশ ও নিম পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে ওয়াশ করুন,মশা মাছি মুক্ত রাখুন,সুস্থ্য গরু থেকে আলাদা রাখুন।
- এ সময় লিভার টনিক,জিংক সিরাপ ও ডিসিপি পাউডার দিলে গরু এই রোগের সাথে লড়াই করতে অধিক সাপোর্ট পেয়ে থাকে
লাম্পি স্কিন ডিজিজ চিকিৎসা
ভাইরাসজনিত রোগ তাই এর বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই। তবে ভালোভাবে পরিচর্যা সহ কিছু ব্যবস্থা নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- আক্রান্ত পশুর ২য় পর্যায়ের ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে এন্টিবায়োটিক যেমন ট্রাইজেক্ট ভেট ইনজেকশন/ ট্রাইজন ভেট ইনজেকশন ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পাড়ে।
- জ্বর নিরাময় ও ব্যথা উপশমের জন্য ব্যথানাশক যেমন টাফনিল ভেট বোলাস / ইনজেকশন ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বায়োলাক্ট বোলাস/ টিএমটি ভেট বোলাস নিয়মিত খাওয়ানো উচিৎ।
- ডাইইউরেটিক্স হিসাবে লুমিক্স (Lumix Sol.) ঔষধ মুখে সেবন করালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
- অটোজেনাস ভ্যাকসিন এবং পাশাপাশি অটোহিমোথেরাপি দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ ঔষধ
লাম্পি স্কিন রোগের চিকিৎশায় যেহেতু সরাসরি কোন ঔষধ নেই তাই রোগের উপসর্গ দেখে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রথমত শরীরের তাপমাত্রা বেশী থাকলে- ফাস্ট ভেট/ এইচ-ভেট-বোলাস / টাফনিল ভেট বোলাস / ইনজেকশন ঔষধ প্রয়োগ করুন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোবায়টিক এবং প্রিবায়টিক প্রিমিক্স খাওয়ান।
- শরীরের ক্ষতস্থান পভিসেপ দিয়ে পরিষ্কার করুন। (মশা মাছি থেকে দুরে রাখুন। এতেই সেরে যাবে। তবে সংক্রমণ বেশি হলে, ব্যবস্থাপনা খারাপ হলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে ইত্যাদি কারণে রোগ জটিল আকার থারণ করে। অনেক সময় গরু মারা যায়।)
- ২য় পর্যায়ের জীবাণুর সংক্রমণ রোধে এন্টিবায়টিক ইনজেকশন বা ট্যাবলেট ঔষধ খাওয়াতে হবে।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভ্যাকসিন
গরুকে নিয়মিত এল এস ডি ভ্যাকসিন দিতে হবে। আমাদের দেশে ইতিপূর্বে রোগটির প্রাদুর্ভাব কম দেখা গেছে তাই এই রোগের ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়।
রোগ প্রতিরোধের উপায়
- গরুকে নিয়মিত এল এস ডি ভ্যাকসিন দিতে হবে।
- খামারের ভিতর এবং আসে পাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেন মশা মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ খুব কম হয়।
- আক্রান্ত খামারে যাতায়ত বন্ধ করতে হবে এবং আক্রান্ত খামার বা সেড থেকে আনা কোন উপকরণ অথবা খাদ্য ব্যবহার যাবে না।
- এলএসডি তে আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা করে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে মশা মাছি কামড়াতে না পারে।
- এলএসডি তে আক্রান্ত গভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে।
গরু বা মহিষে এল এস ডি আক্রান্তের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
আরো পড়ুন: গবাদিপশুর ফুট রট রোগ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
আমার গরুর লাম্পি হয়েছে।।কি করবো।।
আমার গরুর ও হয়েছে।কি করব পরামর্শ চাই?
অবশ্যই এই রোগে আক্রান্ত গরু সুস্থ্য গরু থেকে আলাদা করতে হবে এবং একজন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ প্রোযগ করতে হবে। অবহেলা করা যাবে না।
উপরের লেখাটি ভালোভাবে পড়ুন।
আমার গরুর হয়েছে
আমার গরুর হয়েছ পরামর্শ চাই
আমার গরুর হয়েছে পরামর্শ চাই
আমার গরুর খুব বেসি লাম্পি গোটা হয়েছে ডাক্তার এর চিকিৎসা কোনো কাজে লাগাছে না কি করা জায় প্লিজ সাহায্যে করেন
amar gorur hoyese .ki korbo vebe paina
আমাদের গরুর এই রোগ হইছে।৪দিন থেকে সুচ্ছে না,,,, কি করবো বুঝতে পারছি না।।??
Sir, Amr gorur mathy du jai gai GHA hoyeaca ki koronio.
এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে নিকটস্থ্য সরকারি পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
রোগ লক্ষন প্রকাশের চার দিনের মাথায় গরু পড়ে যায় আর উঠে বসসে না, দাড়াচ্ছে না। সে জন্য গরুকে ডেক্সট্রোজ স্যালাইনের সাথে ক্যালডিম্যাগ ও ক্যাটাফস শিরা পথে দেওয়া হয়েছে। তবুও কাজে আসসেনা।
আমার গরুর পিছনে পা ফুলে গেছে, হাটুর নিচ থেকে,হাটতে পারে না। জ্বর ছিল তাই জ্বরে ঔষধ খাওয়াইছি। এখন কি করণীয়?
আমার গুরু সমস্যা হয়েছে কি করা যাবে পরামর্শ দেন