রুই মাছ বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ও সুস্বাদু একটি মাছ। রুই মাছ দেশের সকল নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুর কম বেশি পাওয়া যায়। বানিজ্যিক ভাবে পুকুর ও খাল-বিলে এই মাছ চাষ করা হয়। এই মাছ খেতে সুস্বাদু তাই বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।
রুই মাছ পরিচিতি
মাছের নাম | রুই মাছ |
মাছের বৈজ্ঞানিক নাম | লাবিও রোহিতা (Labeo rohita) |
দৈহিক গঠন | মাছ দেখতে কিছুটা মাকু আকৃতির। মাথা ও লেজ ক্রমেই সরু হয়েছে। এই মাছের শরীরে ঘন আঁশ দেখতে পাওয়া যায়। মাছের আঁশ গুলো মসৃণ ও সারিবদ্ধ ভাবে সাজান থাকে। এদের ঠোটের উপরে এক জোড়া গোছফ দেখতে পাওয়া যায়। |
প্রাপ্তি স্থান | এশিয়ার সকল দেশে এই মাছ চাষ করা হয়। |
জলাশয় | নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুরের পানির মধ্য স্তরে বসবাস করে। |
রোগ | ক্ষতরোগ, পাখনা পচা, ফুলকা পচা, লেজ পচা ইত্যাদি রোগ ও উকুন দ্বারা আক্রান্ত হয়। |
মাছের খাদ্য | এই মাছ পানির মধ্যস্তরের ও তলার খাদ্য খেয়ে থাকে। রুই এর প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য হলো জলজ উদ্ভদ ও পচনশীল জৈব কণা। এই মাছ চাষে ভালো উৎপাদন পেতে জলজ খাবারের সাথে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। |
মাছের প্রজনন | সাধারণত দুই বছর বয়সে এই মাছ প্রজননক্ষম হয়। নদীতে স্রোত থাকলে মাছ কিনারে এসে ডিম ছাড়ে। মে হতে আগস্ট মাসে স্ত্রী মাছকে ডিম ছাড়তে দেখা যায়। হ্যাচারীতে কৃত্রিম ছোত ও হরমোন প্রয়োগ করে প্রজনন করানো হয়। |
মাছের বাজার দাম | এই মাছের বাজার মূল্য খুবই ভালো। বাজারে বড় রুই এর ভালো চাহিদা রয়েছে। |
রুই মাছের স্বাদ ও পুষ্টি
এই মাছ অত্যান্ত সুস্বাদু ও দেখতে আকর্ষনীয়। দেশি বড় মাছের মধ্যে রুই সেরা। পুষ্টির দিক থেকেও এই মাছ সেরা, ইলিশের পরেই রয়েছে রুই। প্রতি ১০০ গ্রাম স্বতেজ মাছে পাওয়া যায়-
পানি | ৭৬.৭ |
প্রোটিন | ১৬.৬ |
ফ্যাট | ১.৪ |
আয়রণ | ০.০৮৫ |
ক্যালসিয়াম | ০.৬৮ |
ফসফরাস | ০.১৫ |
কার্বোহায়ড্রেট | ৪.৪০ |
ক্যালোরি | ১২৪ |

সাইজ, ওজন ও বয়স
এই মাছ লম্বায় সর্বোচ্চ ২০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা ও ৪৫ কেজি পর্যন্ত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এক বছর বয়সে ১-২ কেজি ওজন হয়ে থাকে। এই মাছ দশ বছর পর্যন্ত বেচে থাকে।
পারিবারিক পুকুরে রুই মাছ চাষ
পুকুরে দেশি মাছ ও কার্প জাতীয় মাছের সাথে মিশ্র চাষ করা হয়। রুই পুকুরের মধ্যস্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ ও বসবাস করে। এই মাছের সাথে পানির উপরের ও নিচের স্তরের মাছ সম্বিলিতি চাষ করা হয়। এতে খাদ্য খরচ কম হয়। মাছ চাষের শুরুতে পুকুর প্রস্তুত করতে হয়। এরপর পুকুরে পর্যাপ্ত পানি মজুদ করে একটি নির্দিষ্ট আকারের রুই পোনা ছাড়তে হয়। পানির গুণগত মান ভালো রেখে মাছের মোট ওজনের ২% সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। এক বছর পর এই মাছ খাওয়া ও বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত হয়।
আরো পড়ুন- মাছের খাদ্য তৈরি ও উপকরণ