রাজহাঁস

রাজহাঁস

রাজহাঁস সাধারণত সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও মাংসের জন্য পালন করা হয়। সৌন্দর্য পিপাশু ব্যক্তিগণ রাজহাঁস পালন করে থাকেন। এই হাঁস পালন করা খুবই সহজ এবং কম খরচ। এরা প্রয়োজনীয় প্রাই সব খাদ্যই চারণভূমি তথা প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারে। রাজহাঁস মূলত চারণভূমি থেকে ঘাঁস খেয়ে থাকে। যেখানে প্রচুর প্রাকৃতিক ঘাস রয়েছে সেখানে এদের খাদ্য খরচ খুবই কম।

এরা ঋতুভিত্তিক ডিম উৎপাদন করে থাকে। এরা সাহসী এবং অধিক জীবনে শক্তির অধিকারী। পৃথিবীর সকল দেশেই এদের পাওয়া যায়। পাখির জগতে রাজহাঁস একটি অন্যতম চালাক প্রকৃতির পাখি।  এই প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী হাঁসের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়।

এদের জোড়া ভাঙ্গা খুবই কষ্টসাধ্য। এদের জীবনধারণের জন্য খুব বেশি পানি প্রয়োজন হয় না।

রাজহাঁসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

  1. রাজহাঁস সাধারণত ঋতুভিত্তিক ডিম পাড়ে।
  2. বসন্তকালে ডিম দেওয়া শুরু করে তবে কোনো কোনো স্ত্রী হাস এর আগেও টিপ দিয়ে থাকে।
  3. এরা জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিম দেয়।
  4. প্রজনন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ইতিহাসকে 8 থেকে 10 বছর এবং পুরুষটিকে পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত পালন করা হয়।
  5. প্রথম বছরে উৎপাদিত ডিমের গড় ওজন 160 গ্রাম এবং দ্বিতীয় বছরে উৎপাদিত ডিমের ওজন 230 গ্রাম হয়ে থাকে।
  6. প্রথম বছর শেষে স্ত্রী হাঁসগুলোকে মাংসের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  7. ইনকিউবেটরে ডিম 40 থেকে 50 পার্সেন্ট এর বোশ ফোটেনা।
  8. রাজহাঁস শতকরা 80 ভাগ সবুজ ঘাস খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে।

রাজহাঁস এর উপযোগিতা

  • যেসব পাখিকে মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয় তাদের মধ্যে রাজহাঁসের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।
  • এর নরম পালক বিছানা ও শীতকালে পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • এরা ঘাস ভক্ষণ হিসেবে পরিচিত। যারা নিজেদের আবার নিজেরাই খুঁজে নেয়।
  • রাজহাঁস পুষ্টিকর মাংস উৎপাদন করে।
  • তাদের বাসস্থান অবস্থানে বসবাসের জন্য বিশেষ উপযোগী।
  • হাঁস পালনে মূলধনের পরিমাণ খুবই কম প্রয়োজন হয়।
  • পরিবেশের সাথে তারা সহজেই মানিয়ে নিতে পারে।
  • কৃষকের অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসেবে পালন করা যেতে পারে

 রাজহাঁসের জাত এবং তাদের বর্ণনা

আমাদের দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরনের এই দেখতে পাওয়া যায়। নিম্নে কিছুর নাম উল্লেখ করা হলো।

  1. টলুউসি
  2. এম্বডেন
  3. চাইনিজ
  4. আফ্রিকান
  5. কানাডা
  6. ইজিপশিয়ান

টলুউসি জাতের রাজহাঁস

উৎপত্তিস্থল- এই জাতির উৎপত্তি স্থল ফ্রান্স, তবে এরা ইউরোপীয় সব দেশে বেশি জনপ্রিয়।

দেহের বর্ণনা

  1. এই হাঁসের পালকের রং দেহের পিছনের ভাগ গাঢ় ধূসর, তলপেট এবং বক্ষগহ্বর হালকা ধূসর এবং সাদা।
  2. শ্যাংক ও ঠোঁটের অগ্রভাগ কমলা রঙের।
  3. গলাটি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।
  4. দেহ প্রশস্ত গভীর ও পালক ঢিলা।

দৈহিক ওজন

  1.  প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসার ওজন- 12.5 থেকে 13.5 কেজি।
  2. প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসীর ওজন- 9 থেকে 10 কেজি।

ডিম উৎপাদন

  1. বাৎসরিক ডিম উৎপাদন কুড়ি থেকে 25 টি।
  2. প্রতিটি ডিমের ওজন 190 গ্রাম থেকে 230 গ্রাম।

এম্বডেন জাতের রাজহাঁস

উৎপত্তিস্থল জার্মানি এবং উত্তর হল্যান্ড।

দেহের বর্ণণা

  • পালকের রং উজ্জ্বল চকচকে সাদা ও ঠোঁটের অগ্রভাগ কমলা হলুদ বর্ণের হয়।
  • শ্যাংক ও ঠোঁটের অগ্রভাগ কমলা হলুদ রঙের।
রাজহাঁস

দৈহিক ওজন 

  • প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসার ওজন- 13 কেজি থেকে 15 কেজি।
  • প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের ওজন ৯ কেজি থেকে ১০ কেজি।

 ডিম উৎপাদন

ডিম উৎপাদন ক্ষমতা বাৎসরিক প্রতিটি পাখি 40 থেকে 45 দেয় এবং প্রতিটি ডিমের ওজন 100 গ্রাম থেকে 240 গ্রাম।

চাইনিজ জাতের রাজহাঁস

উৎপত্তিস্থল এশিয়া। এর দুটি প্রজাতি রয়েছে, একটি সাদা রঙের ও অন্যটি বাদামী রঙের হয়ে থাকে।

দেহের বর্ণনা

  1. দেহ সরল ও রৈখিক।
  2. মাথা ও ঠোঁটের সংযোগস্থলে রুদিমেন্টারি মাসকুলার বাল্ব থাকে।
  3. সাদা প্রজাতির পা, ঠোট এবং শ্যাংক কমলা রঙের হয়ে থাকে।
  4. বাদামি প্রজাতির কালো রংয়ের হয়।

দৈহিক ওজন 

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী রাজহাঁসের দৈহিক ওজন যথাক্রমে ৪.৫ কেজি থেকে ৫.৫ কেজি এবং ৩.৫ থেকে ৪.৫ কেজি।

ডিম উৎপাদন 

এই জাত বাৎসরিক 50 থেকে 60 টি ডিম দেয়। চাইনিজ জাতটি হালকা, অন্য জাতের সাথে প্রজনন করলেন ডিম ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। প্রায় 9 থেকে 10 মাস বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং ডিমের উর্বরতা ও বাচ্চা ফোটার হার বেশি হয়। প্রায় 9 থেকে 10 সপ্তাহের মধ্যে মাংসের জন্য বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়।

আফ্রিকান জাত

উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা। এই জাতের সাদা ও ধূসর বাদামী রঙের দুটি উপজাত রয়েছে।

দৈহিক বর্ণনা

  • ঠোঁটের রং হলুদ এবং ধূসর বাদামি উপজাতি ঠোঁটের রং কালো হয়ে থাকে।
  • এ জাতের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী হাঁসের ওজন যথাক্রমে 9 কেজি এবং 8 কেজি হয়।
  • ডিম উৎপাদন 35 থেকে 40 টি।

রাজহাঁসের খাদ্য ও পুষ্টি

মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে প্রজননের জন্য পালন করা হয়। প্রথম আট সপ্তাহ পর্যন্ত এই হার দ্রুতহারে দৈহিক বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং পরবর্তীতে বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়। জিরো থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসকে অনিয়ন্ত্রিত হারে সুষম রেশন সরবরাহ করা উচিত। অর্থাৎ একটি হাঁস যতটুকু খেতে পারে ততটুকু খাদ্য সরবরাহ করা উচিত। 8 সপ্তাহ বয়সের পর থেকে প্রতিটি হাসকে প্রতিদিন 180 গ্রাম খাদ্য দেওয়া উচিত।

যখন আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয় তখন তাজা সবুজ ঘাস সরবরাহের পরিমাণ দৈনিক 400 গ্রাম প্রতিটি হাসির জন্য সীমাবদ্ধ রাখা প্রয়োজন। সর্বাধিক উৎপাদন পাওয়ার জন্য প্রজনন ঋতুতে সুষম খাদ্যের সাথে সবুজ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।

এর সময় যদি এদের আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা হয় তবে দৈনিক 700 থেকে 800 গ্রাম তালা সবুজ ঘাস সরবরাহ করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় গড়ে প্রতিদিন 240 গ্রাম্য দানাদার খাদ্য দেওয়া দরকার।

রাজহাঁসের রোগ

অন্যান্য হাঁসের মত এদের ডাক প্লেগ, ডাক কলেরা ও ডাক ভাইরাস হেপাটাইটিস রোগ হয়। এছারাও পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত ও ভিটামিন মিনারেলের অভাব জনীত রোগ দেখা দিতে পারে।

আরো পড়ুন: তিতির পাখি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *