মুরগির বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ

ব্রয়লার মুরগি (Broiler Chicken)

মুরগির বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ একটি মারাত্বক সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগ। মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কি? এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (Avian Influenza) নামক ভাইরাস থেকে এ রোগ হয়ে থাকে। এই রোগে মুরগির মৃত্যুর হার শতভাগ পর্যন্ত হতে পারে। যেহেতু এই রোগ মুরগি থেকে মানুষে ছড়িয়ে পরে তাই একে বেনেটিক্স ডিজিসও বলা হয়।

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা মুরগির বার্ড ফ্লু ভাইরাসের ৪ টি সাব টাইপ হল H5N1, H7N3, H7N7 এবং H9N2। এদের মধ্যে H5N1 ভাইরাসটিকেই মূলত বার্ড ফ্লু এর জন্য দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত এক মুরগি থেকে ঝাঁকের অন্য মুরগিতে আক্রমণ করে। মুরগির লালা ও মলের মাধ্যমে দ্রুত বিস্তার করে। আক্রান্ত মুরগি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।

মুরগির বার্ড ফ্লু

রোগের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

রোগের নামমুরগির বার্ড ফ্লু (Avian Influenza)
রোগের ধরণভাইরাল
জীবাণুর নামএভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
সংক্রমণমুরগি ও হাঁস
মৃত্যুর হার১০০ %
ভ্যাকসিন১ দিন বয়সি বাচ্চায় (বাচ্চা উৎপদনকারী
প্রতিষ্ঠান করে থাকে)
চিকিৎসানাই
মুরগির বার্ড ফ্লু (Avian Influenza)
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস

রোগ সংক্রমণের মাধ্যম

  • বাতাসের মাধ্যমে এ রোগের ভাইরাস ছড়ায়।
  • এগ ট্রে, জামাকাপড়, জুতো, ফার্মের সরন্জামের মাধ্যমে ছড়ায়।
  • এক মুরগি অন্য মুরগির সংস্পর্শে আসলে ছড়ায়।

মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের লক্ষণ

  • পালক উসকো-খুসকো হয়। খাবারে অনীহা দেখা দেয়।
  • মুরগি দূর্বল হয়ে পড়ে।
  • প্রচুর পানি খেতে চায়।
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিমের উৎপাদন কমে যায়।
  • চোখে কনজাংটিভাইটিস দেখা যায়। চোখ লাল হয়ে যায় এবং চোখের চারদিক ফুলে চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
  • মাথার ঝুটি বেগুনি অথবা নিল রং ধারণ করে।
  • মাথা ও মাথার ঝুটিতে পানি জমে এবং ফুলে যায়।
  • পাতলা পায়খানা বা ডাইরিয়া দেখা দেয়।
  • আক্রান্ত মুরগির শরীরে রক্ত বিন্দু দেখা দেয়।
  • মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই মুরগি মারা যাওয়া শুরু হয়।

মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের চিকিৎসা

যেহেতু ভাইরাস থেকে এই রোগ সৃষ্ট হয় সেহেতু এই রোগের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। আক্রান্ত খামারের সকল মুরগি মাটির নিচে পুতে ফেলতে হবে। খামার কে চুন ও জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণু মুক্ত করতে হবে।

মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের ভ্যাকসিন

চীন ও ফ্রান্সসহ অনেক দেশ মুরগির এই মারাত্বক ভাইরাস জনিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য লাইভ ভ্যাকসিন আবিষ্ককার করেছে। চীনের অরজিন রিসার্স ইনস্টিটিউট বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে চার বছর গবেষণা করে লভি ভ্যাকসিন নামক একটি ভ্যাকসিন বা টিকা উদ্ভাবন করেছে। এই টিকা বার্ড ফ্লু ভাইরাসসহ রানিক্ষেত রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। খামারের মুরগিদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি ও কবুতরসহ কোনো পাখিরই কোনো চিকিৎসা নেই। উন্নত বিশ্বে এ রোগের টিকা দেওয়ার প্রথা চালু থাকলেও আমাদের দেশে এ টিকা আমদানি করার অনুমতি ছিল না।

বর্তমানে এই ভ্যাকসিন আমদানি হচ্ছে। এসিআই এনিমেল হেল্থ সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠাণ মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের ভ্যাকসিন আমদানী ও বাজারজাত করছে।

প্রতিরোধের উপায়-

খামারের জৈব নিরাপত্বা বা বায়ো সিকিউরিটি ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে। ব্রয়লার মুরগি, লেয়ার মুরগি, সোরালী মুরগি, টাইগার মুরগি, দেশি মুরগি সকল মুরগির খামারের ক্ষেত্রে বায়োসিকিউরিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সকল প্রকার ভাইরাস থেকে খামার কে মুক্ত রাখতে সঠিক নিয়মে ভ্যাকসিনেশন করান ও বায়ো সিকিউরিটির কোন বিকল্প নেই।

যে এলাকায় ফ্লু হয়েছে সে এলাকায় এবং তার আশেপাশের সমস্ত হাঁস-মুরগি মেরে ফেলা উচিৎ, যাতে ভাইরাস আর ছড়াতে না পারে। অসুস্থ মুরগি বা হাঁসগুলিকে অন্যান্য হাঁস-মুরগির থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে ফেলা। সেই অসুস্থ মুরগি বা হাঁস মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এগুলো না খাওয়া।

মুরগির বার্ড ফ্লু রোগ প্রতিরোধের আরেকটি পদ্ধতি হল, একই ধরনের একই জাত ও বয়সের মুরগি একই জায়গায় ঠাসাঠাসি করে বা পাশাপাশি পালনের বদলে বিভিন্ন জাতের মুরগি এবং বিভিন্ন বয়সের মুরগি একটু খোলামেলা পালন করা।

বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু রোগের প্রাদুর্ভাব

বাংলাদেশের অনেক খামারে এই ভাইরাস ঘোটিত রোগটি দেখা যায়। ২০০৬ সালে প্রথম এ ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয় দেশটি। তখন খামারির সংখ্যা ছিল মাত্র দেড় লাখ বা তার সামান্য বেশি। পরবর্তীতে ২০০৭ ও ২০০৯ সালে দেশে ব্যাপক হারে মুরগির বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সংক্রমণ ঘটে দেশে। এতে করে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী ও খামারি সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেন। বন্ধ হয়ে যায় কয়েক হাজার পোলট্রি খামার।

২০১৭ সালে পত্রীকায় প্রকাশ হয়- ঢাকার শতকরা ৮০ ভাগ পোল্ট্রি ও দেশি মুরগির বাজারে বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক মারাত্বক ভাইরাস পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর যৌথ পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তারা সম্মিলিতভাবে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন বাজারে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এফএওর ন্যাশনাল টেকনিক্যাল উপদেষ্টা জনাব মো. জাকিউল হাসান।

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (Avian Influenza) রোগ সম্পর্কিত pdf বই

ফ্রি pdf বই ডাউনলোড করুণ-

মুরগির এই রোগ টি সম্পর্কে আরো জানতে দুইটি বই দুটি খামারীদের উপকারে আশবে

আরো পড়ুন- মুরগী ডিম পাড়ার পর ডিম খাওয়ার কারণ ও সমাধানের উপায়