মুরগির পুলোরাম রোগ (Pullorum Disease in Poultry)

মুরগির পুলোরাম রোগ (Pullorum Disease in Poultry)

মুরগির পুলোরাম রোগ (Pullorum Disease in Poultry)। এটি ব্যাকটেরিয়া জীবাণু থেকে সংঘটিত মুরগির একটি মারাত্মক রোগ। মুরগির পুলোরাম রোগ সালমোনেলা পুলোরাম (Salmonella pulloram) নামক এক প্রকার গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া থেকে এ রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত মুরগির ডিম হতে বাঁচাতে স্থানান্তরিত  হয়ে  থাকে বলে এই রোগটিকে ডিমবাহিত রোগ বলা হয়।

রোগ ছড়ানোর মাধ্যম

  • বাহক মুরগি এবং আক্রান্ত মুরগির ডিম তৈরি হওয়ার সময় এ রোগের জীবাণু ডিমের কুসুমের মধ্যে প্রবেশ করে, ফলে এ ধরণের দিন ফোটালে বাচ্চার মধ্যে রোগ ছড়ায়। ডিম ফোটানোর ইনকিউবেটর মুরগির পুলোরাম রোগের জীবাণু বহন করলে বাচ্চার মধ্যে এ রোগ ছড়ায়।
  • আক্রান্ত বাচ্চার মলও লালা মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
  • বন্য জন্তু বা বাইরে থেকে আগত পাখিদের মধ্যেও এ রোগের জীবাণু পোল্ট্রি খামারের সুস্থ মুরগিতে সংক্রামিত হতে পারে।
  • পরিদর্শকদের বা খামারের কর্মরত শ্রমিক এর পায়ের জুতার মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু পোল্ট্রি ফার্মে আসতে পারে।
  • খাদ্যের মাধ্যমে বিশেষ করে ফিশ মিলের মধ্যে এ রোগ জীবাণু খামারে ছড়াতে পারে।

মুরগির পুলোরাম রোগের লক্ষণ

  • আক্রান্ত মুরগির বাচ্চা গুলো ব্রুডার যন্ত্র সংলগ্ন ওভার এর নিচে একত্রিত হয়ে যেতে থাকে। পাখা ঝুলে পড়ে।
  • মল পাতলা চটচটে তরল এবং সাদাটে হয়ে থাকে। 
  • মলদ্বারের চারপাশের পালক গুলো পাতলা বা চটচটে মল লেগে থাকে।
  • ডিমের মাধ্যমে এই রোগ সংক্রমিত হলে ফোটানোর সময় টিমের মধ্যে বাচ্চা মারা যায়।
  • কিছু বাচ্চা ডিম থেকে বের হওয়ার পর বা কিছুদিন বাঁচার পর মারা যায়। 
  • আক্রান্ত বাচ্চাগুলো খাদ্য খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং বারবার পানি খেতে থাকে। 
  • পূর্ণবয়স্ক মুরগির দেহে এই রোগের জীবাণু দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকায় পূর্ণবয়স্ক মুরগির দেহের তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে আক্রান্ত মুরগি স্বাভাবিকের চেয়ে কম খাদ্য খায় এবং স্বাস্থ্য শুকিয়ে যেতে থাকে। মাঝে মাঝে ডায়রিয়া হয়। মাথার জুটি ফ্যাকাশে দেখায়। ঝাঁক থেকে হঠাৎ করে দুই একটা মুরগি মাঝেমধ্যে মারা যেতে দেখা যায়।

মুরগির পুলোরাম রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা

Salmonella pulloram  রোগের জীবাণু বহন করছে কিনা তা ভালোভাবে নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে রঙিন এন্টিজেন দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে জীবাণুর অস্তিত্ব বোঝা যায়। রোগ নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে বাজারে রঙিন এন্টিজেন পাওয়া যায়।

মুরগির পুলোরাম রোগ

যে শেডে পরীক্ষা করা হবে শেখান হতে শতকরা 5 থেকে 10 টি মুরগি নিতে হবে।  প্রতিটি মুরগির পাখনার নিচের ধমনী থেকে সিরিঞ্জের সাহায্যে 1 মিলি রক্ত সংগ্রহ করে 10 থেকে 15 মিনিট রেখে দিতে হবে। 15 মিনিট পর রক্ত জমাট বেধে যাবে এবং সম্মুখভাগে রক্তের স্বাদ পাওয়া যাবে। এখন একটি সাদা প্লেটে একফোঁটা শ্রীরাম ও এক ফোটা রঙিন এন্টিজেন মিশিয়ে নারান কাঠের সাহায্যে ভালোভাবে মেশাতে হবে।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যদি মিশ্রণটি দুধের ছানার নেয় জমাট অবস্থা ধারণ করে তবে অবশ্যই বুঝতে হবে ওই মুরগি Salmonella জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে বা Salmonella জীবাণু বহন করছে।আর যদি মিশ্রণটি পূর্বের অবস্থায় থেকে যায় তবে বুঝতে হবে ওই মুরগি Salmonella pulloram জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত নয়। মুরগির পুলোরাম রোগ রোগের এটি একটি নিশ্চিত পরীক্ষা।

চিকিৎসা ব্যবস্থা বা দমন

নিচে উল্লেখিত যেকোনো একটি ঔষধ প্রয়োগ করে মুরগির পুলোরাম রোগের চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ পোল্ট্রি কনসালটেন্ট বা প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

  • প্রতিবার ডিম ফোটানোর ইনকিউবেটর চালু করার পূর্বে অবশ্যই ফিউমিগেশন করতে হবে। 
  • প্রজননের জন্য ব্যবহৃত মোরগ-মুরগি যদি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের জীবাণুর অস্তিত্ব বোঝা যায় তবে অবশ্যই রোগাক্রান্ত মুরগি কে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলতে হবে।  ব্যবহৃত ঘরটি, খাদ্য পাত্র, পানির পাত্র সম্পূর্নরূপে  শোধন করা উচিত। 
  • প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রজননের ব্যবহৃত মোরগ-মুরগির রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।  
  • যেসব হ্যাচারিতে মুরগির পুলোরাম রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে অর্থাৎ যেসব রোগমুক্ত প্রদানে অঙ্গীকার করে সেসব বাচ্চা উৎপাদনকারী ফার্ম থেকে মুরগির বাচ্চা ক্রয় করা উচিত। 
  • মুরগির খামারে অবশ্যই দর্শনার্থীর প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা উচিত।

আরো পড়ুন: মুরগির সালমোনেলা রোগ ও ফাউল টাইফয়েড

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *