মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ, গঠন, উপাদান ও উপকারিতা

মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ

মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ, গঠন ও উপাদান নিয়ে খামারিদের কিছু যানাব। মুরগির ডিম একটি সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন প্রাণিজ আমিষ। মুরগির ডিমের উপকারিতা এটি সহজপ্রাচ্য এবং অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। ৫০-৫৫ গ্রাম ওজনের ১ টি ডিমে প্রায় ১০% খোসা, ৩০% হলুদ কুসুম এবং ৬০% সাদা অংশ থাকে। দেশি মুরগির ডিমের স্বাদ ও উপকারিতা আনেক বেশি।

মুরগির ডিম হল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি কোষ। ভ্রূণ সৃষ্টির সময় থেকে মুরগির বাচ্চা বের হওয়ার পর 48 ঘণ্টা পর্যন্ত ভ্রূণ ও বাচ্চা এ দিন থেকেই পুষ্টিতে থাকে।

মুরগির ডিমের গঠন

ডিম খোসা, সাদা অংশ এবং কুসুম নিয়ে গঠিত হয়। নিম্নে এদের কিছু বিবরণ তুলে ধরা হলো-

ডিমের খোসা

 ডিমের খোসা ডিমের সবচেয়ে শক্ত এবং বাইরের আবরণ সাধারণত একটি সম্পূর্ণ ডিমের 8 থেকে 10% থাকে নিম্নলিখিত উপাদান দিয়ে ডিমের খোসা গঠিত

  1. ক্যালসিয়াম কার্বনেট 94
  2. ক্যালসিয়াম ফসফেট 1
  3. ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট 1
  4. জৈব পদার্থ 4

 ডিমের খোসা রং থাকে যার মাধ্যমে তরল পদার্থ বাতাস চলাচল করতে পারে ডিমের খোসা টি আরো একটি নিউ দিল্লি দিয়ে আবৃত থাকে যাকে কিউটিকল বলা হয় এ কিউটিকল খোসার সূত্রগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে ডিমের খোসার রং জাত অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে

খোসা ঝিল্লি

 ডিমের খোসার পরবর্তী অংশকে খোসা ঝিল্লি বা সেল মেমব্রেন বলা হয়। ঝিল্লি দুটি অংশে বিভক্ত বাইরের খোসা ঝিল্লি এবং ভিতরের খোসা ঝিল্লি। খোসা ঝিল্লি ডিমের ভিতর পায়ুপথের স্থান ছাড়া ভেতরের খোসার সম্পূর্ণ অংশের সাথে যুক্ত থাকে। দুটি কোষ ঝিল্লি একত্রে 0.01 মিলি থেকে 0.02 মিলি পুরু হয়ে থাকে।

ডিমের সাদা অংশ

 একটি সম্পূর্ণ ডিমের 58 ভাগ এলবুমিন বা সাদা অংশ থাকে এটি আবার চারটি স্তর নিয়ে গঠিত

  1. পাতলা অ্যালবুমিন বাইরের পাতলা সাদা স্তর: এ পাতলা সাদা স্তরটি ভিতরে নিচে অবস্থিত ডিমের সাদা অংশের 21 ভাগ হল এ স্তর।
  2. বাইরের ঘন সাদা স্তর: ডিমের সাদা অংশের বাইরের সবচেয়ে মোটা পা পুরু স্তর। সাদা অংশের 55 ভাগ হলো এ স্তর সাদা অংশের বেশিরভাগই এ স্তর দিয়ে গঠিত।
  3. ভিতরের পুরো সাদা স্তর: বাইরের স্তরের পরবর্তী অংশ হলো ভিতরের পুরো সাদা স্তর।
  4. ভিতরে পাতলা সাদা স্তর: ভিতরেই এ স্তরের অবস্থান সম্পূর্ণ সাদা অংশের 17.5 ভাগ।

ডিমের কুসুম

ডিমের ভেতর হলুদ বর্ণের যে বলয়ের নেয় পদার্থ দেখতে পাওয়া যায় এবং জেটি ভিটামিন ডি দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে তাকেই ডিমের কুসুম বলা হয়। এটি ডিমের মধ্যে 27 থেকে 32 ভাগ কুসুম দেখতে পাওয়া যায়।

মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ

একটি সর্বোচ্চ গুণসম্পন্ন প্রাণীজ আমিষ। এটি সহজপাচ্য এবং অধিক পুষ্টিসম্পন্ন। 50 থেকে 55 গ্রাম ওজনের একটি ডিমে প্রায় 10 ভাগ খোসা 30 ভাগ হলুদ কুসুম এবং 60 ভাগ সাদা অংশ থাকে। 

মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ
মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ

ডিমের গঠন

উপাদানসম্পূর্ণ ডিম %ডিমের ভিতরের অংশ %কুসুম %সাদা অংশ %খোসা ও এর পর্দা %
অংশ১০০৩১.০৫৮.০১১.০
পানি৬৫৭৫.০৪৮.০৮৭.০২.০
আমিষ১২১২.০১৭.৫১১.০৪.৫
ফ্যাট১১১১.০৩২.৫০.২
শর্করা০.৫১.০১.০
মিনারেল১১১.৫১.০০.৮৯৩.৫

পোল্ট্রির বিভিন্ন প্রজাতির ডিমের রাসায়নিক গঠন (শতকরা হারে)

প্রজাতিপানিপ্রোটিনফ্যাটশর্করামিনারেলবিপাকীয় শক্তি (কিলোক্যালোরি
মুরগি৭৩.৭১২.৯১১.৫০.৯১.০১৬৩
হাঁস৭০.৪১৩.৩১৪.৫০.৭১.১১৯১
রাজহাঁস৭০.৪১৩.৯১৩.৩১.৩১.১১৮৫
কোয়েল৭৩.৭১৩.১১১.১১.০১.১১৬১
টার্কি৭২.৬১৩.১১১.৮১.৭০.৮১৭০
কবুতর৭২.৮১৩.৮১২০.৮০.৯১৭০

মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

প্রোটিন১২.১ গ্রাম
প্রোটিনে এমাইনো এসিড এর পরিমান
আরজিনিন০.৭৬ গ্রাম
হিসটাডিন০.৯১ গ্রাম
আইসোলিউসিন০.৮০ গ্রাম
লিউসিন০.৯৫ গ্রাম
লাইসিন০.৭৮ গ্রাম
মিথিওনিন০.৩৮ গ্রাম
ফিনাইল এলানিন০.৬২ গ্রাম
থ্রিউনিন০.৬৩ গ্রাম
ট্রিপটোফেন০.২২ গ্রাম
ভেলিন০.৯৩ গ্রাম
লিপিড১১.৫ গ্রাম
ফ্যাটি এসিড
লিনোলিনিক এসিড২.২ গ্রাম
আর্কিডিওনিক এসিড২.২ গ্রাম
লিনোলিক এসিড০.৫০ গ্রাম
ভিটামিন
ভিটামিন এ১০১৫ আই ইউ
ভিটামিন ডি৯২৫ আই ইউ
ভিটামিন ই১.৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
থায়ামিন০.০৯ মি.গ্রাম
রিবোফ্লাবিন০.২৬ মি.গ্রাম
কোলিন৫৩২ মি.গ্রাম
নিয়াসিন০.০৯ গ্রাম
পাইরিডক্সিন১১১ মাইক্রো গ্রাম
বায়োটিন৯.২৫ মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন বি ১২০.৯৩ মি.গ্রাম
খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম৪৮ মি.গ্রাম
ফসফরাস১৮৭ মি.গ্রাম
সোডিয়াম১২২ মি.গ্রাম
পটাশিয়াম১৪১ মি.গ্রাম
ক্লোরিন১৩৭ মি.গ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম৫০ মি.গ্রাম
আয়রন২.৪ মি.গ্রা.
আয়োডিন৩.৮ মাইক্রো গ্রাম
ম্যানগানিজ৪.১৮ মাইক্রো গ্রাম
সালফার১৩৪ গ্রাম
কপার২৭৭ মাইক্রো গ্রাম
কোবাল্টনগন্য
শর্করা০.৯ গ্রাম
পানি৭৪.৫ গ্রাম
টেবিল: মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ

তথ্য সূত্র- পোল্ট্রি উৎপাদন, গৌতম বুদ্ধ দাস, ২০০৪

মুরগির ডিমের উপকারিতা

মুরগির ডিমের উপকারিতা প্রচুর। মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারের কথা লিখে শেষ করার মত না। এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভিটামিন বড়িও বলা হয়।

  1. এটি একটি পুষ্টিকর ট্রিট।
  2. কোলেস্টেরল খাওয়া বিভিন্ন মানুষকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
  3. ডিম ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়।
  4. কিছু কোলিন পান।
  5. ডিম আপনার দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  6. পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড পান।
  7. তারা হৃদয়ের জন্য খারাপ নয়।
  8. এটি একটি ভরাট খাবার।
  9. ডিম ভিটামিন ডি এর একটি বড় উৎস প্রদান করে
  10. ডিম ভরাট করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  11. ডিম ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস
  12. ডিমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের জন্য উপকারী

আরো পড়ুন: ডিমপাড়া মুরগি পালন ও অধীক ডিমপাড়া মুরগির বৈশিষ্ট্য

2 thoughts on “মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ, গঠন, উপাদান ও উপকারিতা”

  1. সব চেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন রেনেটা কোম্পানির ভেটেরিনারি ঔষধের নাম কি দিবেন ,যেগুলি আমি ব্যবহার করতে পারবো

  2. নাহারুল ইসলাম ভায়ের কমেন্ট বুঝতে পারলাম না। তবে যেটুকু অনুমান করেছি তার পরিপ্রেক্ষিতে বলছি- রেনেটা কোম্পানির ঔষধসমূহের পরিচিতি ও ব্যবহার নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি কিছু লেখা প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার কা্ছ থেকে আমরা আরো কমেন্ট আশাকরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *