মুরগির এগ ড্রপ সিনড্রোম (Egg Drop Syndrome) বা ইডিএস। এটি এভিয়ান এডিনো ভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট এপ্রকার ভাইরাস রোগ হাজার 976 সালে সর্বপ্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই রোগ দেখা যায়। ডিম পাড়া মুরগি তে এই রোগ দেখা দেয়।
সাধারণত হাঁস রাজহাঁস এগ ড্রপ সিনড্রোম (EDS) রোগে আক্রান্ত হয় না। তবে এসকল পাখি এ রোগের ভাইরাস বহন করে। এমনকি রাজহাঁসের বাচ্চাদের এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এডিনো ভাইরাস রোগের বেশ ভালো প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এগ ড্রপ সিনড্রোম সাধারণত ইউরোপ ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ায় বেশি দেখা যায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এই রোগ দেখাই যায় না।
এগ ড্রপ সিনড্রোম রোগ পরিচিতি
রোগের নাম | মুরগির এগ ড্রপ সিনড্রোম (Egg Drop Syndrome) |
রোগের ধরণ | ভাইরাল |
জীবাণুর নাম | এভিয়ান এডিনো ভাইরাস (Adenovirus) |
সংক্রমণ | ডিম পারা মুরগি। |
মৃত্যুর হার | নেই |
সংক্রমন সময় | ডিম দেওয়া শুরু হলে। |
চিকিৎসা | নাই |

রোগ ছড়ানোর মাধ্যম
এই ভাইরাস এর মাধ্যমে মুরগি থেকে বাঁচাতে জীবাণু ছড়ায় এবং ডিম পাড়ার আগে পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকে। ডিম পাড়ার সময় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তারপর এই ভাইরাস আক্রান্ত মুরগি হতে একই থাকে অন্য মুরগিতে অথবা এক ঝাঁক হতে অন্য যাকে ছড়ায়। মুরগির এগ ড্রপ সিনড্রোম রোগের ভাইরাস সাধারণত তিনটি ভাবে বিস্তার লাভ করে থাকে।
- ক্লাসিকাল: এই রোগটি ডিমের মাধ্যমে পূর্ববর্তী বংশ থেকে লাভ করে থাকে। এবং দীর্ঘদিন শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। মুরগি ডিম পাড়তে শুরু করলে ভাইরাস বিস্তার লাভ করে এবং লক্ষণ প্রকাশ পায়।
- এন্ডেমিক ফর্ম: লেয়ার মুরগির এক খামার থেকে অন্য খামারে ডিমের ট্রে, যানবাহন, উপকরণ ইত্যাদি মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
- বিক্ষিপ্ত ফর্ম: হাঁস ও রাজহাঁস এর মাধ্যমে ও দূষিত পানির মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু বিস্তার লাভ করে। তবে এটি খুব কম হতে দেখা যায়।
এগ ড্রপ সিনড্রোম ভাইরাস
পিডিএস ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শ্বাসনালীর নিউ সাথে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয় এবং ভাইরে নিয়া এর মাধ্যমে লিম্ফয়েড টিস্যু যেমন প্লীহা ডিম্বনালীর ইনফান্ডিবুলাম কে সংক্রমিত করে। এরপর মুরগির জরায়ুর ভেতর পাউস অব গ্ল্যান্ডের টিস্যুর ভিতর বিস্তার লাভ করে থাকে। ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে ডিমের উৎপাদন কমে যায়। এ সময় ডিমের খোসা পাতলা, ডিম আঁকাবাঁকা, ডিম ছোট বড় এবং খোসা ছাড়া ডিম পারতে দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ
- ডিমের রং বিবর্ণ হওয়া।
- ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন একবারে কমে যাওয়া।
- রোগে আক্রান্ত মুরগি এবং নরম খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে।
- ডিমের খোসা থেকে তরল অংশ বের হয়ে পড়ে যায়।
- কোন লক্ষণ দেখা যায় না।
- প্রথমদিকে ৫ থেকে 50 পারসেন্ট দিন কমে যায়। এমনকি খামার থেকে ডিম পাওয়াই যায়না।
- দুই থেকে চার সপ্তাহ পর ডিম আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
- ডিম স্বাভাবিক হলেও কিছু কিছু দিনে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
- এ সমস্যায় মুরগি কখনোই ফুল প্রোডাকশনে আসেনা।
- মুরগির এগ ড্রপ সিনড্রোম রোগে মুরগির কোন মর্টালিটি থাকেনা।
- মুরগির ডিমের খোসার স্বাভাবিক রং প্রকাশ পায় না,
- মুরগি খসখসে ডিম পারে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা বা দমন
সাধারণত সময়মতো টিকা প্রয়োগ করে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
- বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।
- খামারে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে।
- সেইসাথে মুরগির খামারের ডিমের ট্রে এবং ডিম জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যেতে পারে আক্রান্ত মুরগির বিষ্ঠা জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- আক্রান্ত মুরগি থেকে সুস্থ মুরগিকে আলাদা করতে হবে।
- খামার পরিচর্যায় নিয়োজিত কর্মচারী ও যানবাহন দাঁড়া যাতে রোগজীবাণু সংক্রমণ ঘটাতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
- খামারে জীবানু নাশক এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
- মুরগির ডিমে আসার 2 থেকে 3 সপ্তাহ আগে এই মুরগির এগ ড্রপ সিনড্রোম রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রথমবার টিকা দেওয়ার চার সপ্তাহ পর মুরগি পরীক্ষা করে দেখতে হবে টাইটার লেবেল ভালো উঠেছে কিনা যদি না উঠে তাহলে সাত দিন পর আবার একই টিকা দেওয়া যেতে পারে।
- মুরগির এগ ড্রপ সিনড্রোম রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারকে বিভিন্ন প্রকার জলন পাখি যেমন হাঁস রাজহাঁস থেকে খামারকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
- বিভিন্ন প্রকার বন্য পাখি এর সংস্পর্শে মুরগিকে আসতে দেওয়া যাবে না।
ইডিএস ভ্যাকসিন/ টিকা
মুরগির এগ ড্রপ সিনড্রোম বা ইডিএস রোগের টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। সাধারণত 120 দিন বয়সে মুরগিকে এগ ড্রপ সিনড্রোম বা ইডিএস রোগের টিকা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এসিআই এনিমেল হেলথ, রেনেটা লিমিটেড, অ্যাডভান্স এনিমেল হেলথ ইত্যাদি কোম্পানি পিডিএস ভ্যাকসিন বিদেশ হতে আমদানি করে থাকে। এবং আমাদের দেশে বিক্রয় করে থাকে।
এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। খামারে মুরগি মারা যায় না। তবে ডিম উৎপাদন কমে যায় বলে খামারে লাভ হয়না।
আরো পড়ুন: মুরগির ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious Bronchitis)- শ্বসনতন্ত্রের সংক্রামক রোগ