বিটল জাতের ছাগল পরিচিতি ও পালন পদ্ধতি। বিটল ছাগলের বৈশিষ্ট্য অনেকটা যমুনাপারী ও মালবারী ছাগলের মত। বানিজ্যিক ভাবে বিটল জাতের ছাগল মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হলেও এটি দুধ উৎপাদনেও পালন করা হয়। এটি লাহরী ছাগল নামেও পরিচিত।
এই প্রজাতির আদী বাসস্থান ভারতের ও পাকিস্তানের পান্জাব প্রদেশ। বিটল ছাগল আকারে অনেক বড় ও দেখতে অনেক সুন্দর হয়ে থাকে। বংলাদেশেও এই প্রজাতির ছাগল পালন করা হয়। মুক্ত বা ছাড়া অবস্থায় পালন করার পাশাপাশি আবদ্ধ এবং স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালন করা যায়। এই জাতের ছাগলের গ্রোথ বা বৃদ্ধির হার বেশি ফলে দ্রুত বাড়ে।
বিটল ছাগলের জাত পরিচিতি
জাতের নাম | বিটল (Beetal Goat) |
জাতের ধরণ | মাংস ও দুধ উৎপাদনকারী ছাগলের জাত |
দৈহিক উচ্চতা | দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় |
ওজন | পূর্ণবয়স্ক খাসির ওজন- ৬০-৭০ কেজি পূর্ণবয়স্ক ছাগীর ওজন- ৪০-৪৫ কেজি হয়ে থাকে |
আদি বাসস্থান | ভারত ও পাকিস্তান |
প্রাপ্তিস্থান | ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল সহ পৃথিবীর নানা দেশ |

বিটল ছাগলের বৈশিষ্ট্য
- আকারে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চেয়ে বড় ও যমুনাপারী ছাগলের চেয়ে ছোট হয়।
- শরীরের রং কালো, সাদা, বাদামি, বাদামির সাথে সাদা ফোটা যুক্ত প্রভৃতি হয়।
- বিটল জাতের ছাগলের কান লম্বা ও ঝুলানো হয়। অনেকটা যমুনাপারী ছাগলের মত দেখতে হয়।
- বিটল জাতের ছাগলের শিং লম্বা ও পেছনে বাঁকানো হয়।
- খাসি ও পাঠি উভয় ছাগলের শিং থাকে।
- ছাগলের পা তুলনামুলক লম্বা হয়।
- পুরুষ ছাগলের শরীরের লোম ছোট ছেটা হলেও মহিলা ছাগলের শরীরে লম্বা লম্বা লোম থাকতে দেখা যায়।
- বিটল ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।
- সব ধরনের পরিবেশে এই ছাগল পালন করা য়ায়।
বিটল ছাগল পালন পদ্ধতি
বানিজ্যিক ভাবে মাংস উৎপাদন খামারে বিটল জাতের ছাগল পালন করা যেতে পারে। বিটল ছাগল পালন করা খুবই সহজ। এই জাত কষ্ট সহিন্শু ও রোগ প্রতিরোধি।
সকল আবহাওয়ায় পালন করা যায়। ছাগল পালনের যত পদ্ধতি রয়েছে সকল পদ্ধতিতেই পালন করা যায়। মুক্ত বা ছাড়া অবস্থায় পালন করার পাশাপাশি আবদ্ধ এবং স্টর ফিডিং পদ্ধতিতে পালন করা যায়।
এই জাতের ছাগলের গ্রোথ বা বৃদ্ধির হার বেশি ফলে দ্রুত বাড়ে। পারিবারিক বা ছোট খামার গুলোতেও খুব সহজে বিটল জাতের ছাগল পালন করা যায়। বাংলাদেশে বিটল ছাগল পারন বেশ জনপ্রীয় হয়েছে।
বিটল ছাগলের খাদ্য
এই ছাগল সাধারণ ঘাস ও পাতা খেয়ে থাকে। এর জন্য স্বাভাবিক ছাগলের খাদ্যই যথেষ্ট। তবে ছাগলের সুস্থ্যতা ও ভালো বৃদ্ধির জন্য সুষম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে। ছাগলের শরীরে যেন কোন ভিটামিন বা মিনারেলের অভাব না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস ও পাতা খেতে দিতে হবে।
প্রজনন ক্ষমতা
এই ছাগল ১২-১৫ মাস বযসে ম্যাচুয়র্ড হয়। এই জাতের ছাগল প্রায় দুই বছর বয়সে প্রথম বার বাচ্চা প্রদান করে। বছরে এক জোরা বাচ্চা প্রদান করে এবং বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ খেতে পারে। বিটল জাতের ছাগল প্রতিদিন ৩-৪ লিটার দুধ দিতে পারে। এই ছাগল বছরে একবার বাচ্চা প্রদান করে।

বিটল ছাগলের কোথায় পাওয়া যায় ও দাম
এই জাতের ছাগল দেখতে সুন্দর ও আকারে বড় হওয়ায় বাংলাদেশ সহ সকল দেশে সবসময় বেশি দামে বিক্রি হয়। ছাগল পালন খামারিদের কাছে এই ছাগলের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে খুব বেশি এভেলেবল পাওয়া যায় না। সত্তিকার অর্থে আমাদের দেশে ছাগলের জাত উন্নয়ন নিয়ে খুব বেশি খামারি কাজ করে না। তারপরও অনেক খামারি দেখতে পায় যারা উন্নত জাতের ছাগল পালন সহ জাত উন্নয়নে কাজ করছে।
এরকম বেশ কিছু খামারে এই ছাগল পালন করা হচ্ছে। এবং তারা বিভিন্ন সময় এই ছাগল বিক্রিও করে থাকে। ছাগরের বড় হাঁট বা বাজারে যাদের নিয়মিত যোগাযোগ তারা হাটে থেকেও কিনতে পারবেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে খোজ করলে এধরণের উন্নত ছাগল পালনকারীর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন ও খামার থেকে ন্যায্য দামে বিটল ছগল সংগ্রহ করতে পাবেন। এই জাতের একটি পাঠা ১ লক্ষ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।
বিটল জাতের ছাগল মাংসের জন্য পালন করা হলেও কুরবানির ঈদের বাজারে এই ছাগলের দাম ও চাহিদা অনেক বেশি থাকে। আর তাই বিটল ছাগলের বৈশিষ্ট্য দেখে খামার থেকে ক্রয় করতে হবে। খামারে একটি বিটল জাতের পাঁঠা তৈরি করতে পারলে সে খামারির আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এর জন্য সুষম দানাদার খাদ্য, পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস ও পরিষ্কার পানি পানের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: হরিয়ানা ছাগলের অজানা তথ্য