বাছুরের সাদা উদরাময় রোগ (Calf Scour)। বাছুরের জন্মের প্রথম মাসেই যে উপসর্গটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হলো কাফ স্কাউর বা বাছুরের সাদা উদরাময় রোগ। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশের অনেক বাছুর অকালে মারা যায়। এই রোগটিকে বাছুরের সাদা পায়খানাও বলা হয়। এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
বাছুরের সাদা উদরাময় রোগের কারণ
ইসচিরিয়া কোলাই (Escherichia coli) নামক গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এই রোগ হয়। তাছাড়া ই-কলাই এর সাথে বিভিন্ন ভাইরাস (যেমন- রোটাভাইরাস, করোনা ভাইরাস), প্রোটোজোয়া (যেমন- ক্রিপটোস্পোরিডিয়া, কক্সিডিয়া) ইত্যাদির সম্পর্ক থাকতে দেখা যায়। বর্ষার সময় দূষিত খড়, পচা লতাপাতা, পচা পানি, পচা খাদ্য খেয়ে এ রোগ হতে পারে।

বাছুরের সাদা উদরাময় রোগের লক্ষণ
- বাছুর চাউল -ধোয়া পানির মত সাদা রঙের দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা করে।
- বাছুর ঘন ঘন পায়খানা করে ও লেজে পাতলা পায়খানা লেগে থাকে।
- পায়খানায়র মধ্যে বায়ু থাকায় পায়কানায় ফেনা হয়।
- মলদ্বারের চারিদিকে পাতরা পায়খানা লেগে থাকে। অনেক সময় পায়খানার সাথে রক্ত দেখা যায়।
- রোগের লক্ষণের শুরুতে জ্বর থাকে এবং কিছু সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নেমে যায় (বাছুরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১০১.৩-১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট)।
- পরে বাছুর নিস্তেজ হয়ে মাটিতে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। অবশেষে মারা যায়।
- এ সময় বাছুরের চোখ কোঠরে বসে যায় এবং পিঠ বাঁকা হয়ে যায়।
রোগ থেকে প্রতিকার
- গাভী ও বাছুরের খাবার পাত্র, পানির পাত্র ইত্যাদি স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে পরিস্কার করতে হবে।
- গাভীকে সঠিক পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
- বাছুর জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে ২ লিটার ও পরবর্তী ১২ ঘন্টার মধ্যে আরো ২ লিটার শাল দুধ খাওয়ানো উচিৎ। কমপক্ষে প্রথম ১২ ঘন্টার মধ্যে ২ লিটার শাল দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরী।
- জন্মের পর পরই বাছুরের জন্য উষ্ণ, পরিচ্ছন্ন ও ঠিকমত প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল করে এমন বাসস্থানের ব্যবস্থা করা উচিৎ।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- সদ্যজাত বাছুরকে জন্মের আধা ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে শালদুধ খাওয়াতে হবে।
- বাছুরকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হবে।
- পরিষ্কার টাটকা খাদ্য খাওয়াতে হবে।
- বাচ্চা জন্মের পরই ২% আয়োডিন দিয়ে নাভি মুছে দিতে হবে।
- জন্মের পর ২ ঘন্টার মধ্যে কলস্ট্রাম সিরাপ খাওয়াতে হবে।
- জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।
- দূর্বলতা বেশি থাকলে ২৫% ডেক্সট্রোজ স্যালাইন ৫০-১০০ মি.লি. জগুলার শিরায় দিতে হবে। সাথে এমাইনো এসিড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
- মারবো ভেট ইনজেকশন বা বোলাস প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- ব্যাথানাশক হিসাবে টাফনিল ভেট বোলাস / ইনজেকশন অথবা প্যারাসিটামল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- বাছুরকে সবসময় স্যালাইন পানি খেতে দিতে হবে।
- সহকারি চিকিৎসা হিসাবে জিংক সাসপেনসন খাওয়ানো যেতে পারে।
- সালফার ড্রাগ ও মেট্রোনিডাজল খাওয়াতে হবে।
- নিকটতম পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
আরো পড়ুন: বাছুরের নাভি ফোলা রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি