বাছুরের নাভি ফোলা রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

বাছুরের নাভি ফোলা রোগ

বাছুরের নাভি ফোলা রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি। নবজাতক বাছুরের জন্য নাভি ফোলা বা নাভী পাকা (Naval ill of Calf) রোগ একটি একটি মারাত্বক রোগ। সাধারণত বাছুর জন্মের ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়। বাছুরের নাভি ফোলা রোগের শুরুতে নাভী স্বাভাবিকের তুলনায় ফুলে যায়। এটি প্রথমে শক্ত আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে বাছুরের নাভিতে ঘা ও পুঁজ সৃষ্টি হয়। একে নাভি পাকা, নাভি পঁচা, নাভি ফোলা ইত্যাদি বলা হয়।

রোগ পরিচিতি

রোগের নামনাভি ফোলা রোগ
(Naval ill of Calf)
রোগের ধরণব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ
জীবাণুর নামস্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া
সংক্রমণগরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি
মৃত্যুর হারবেশি
সংক্রমণের বয়স২-৪ সপ্তাহ
চিকিৎসাচিকিৎসায় প্রাণি সুস্থ্য হয়।
স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া
স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) ব্যাকটেরিয়া

বাছুরের নাভি ফোলা রোগের কারণ

বাছুরের নাভি ফোলা রোগ সাধারণত স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এছাড়াও Escherichia coli, Proteus Spp এবং Corynebacterium pyogenes জীবাণুগুলো ব্যাকটেরিমিয়া বা স্থানীয় সংক্রমণ যেমন বাছুরের পায়ের সন্ধি, মেনিনজেস, চক্ষু, এন্ডোকার্ডিয়াম, পা, কান ও লেজের ধমনীতে ক্ষত ও ব্যাথা সৃষ্টি করতে পারে।

নাভিপ্রদাহ (Omphalitis) সাধারণত নাভির বাহ্যিক অংশের প্রদাহ বা সংক্রমণকে বোঝায়। বাছুরের জন্মের ২-৫ দিনের মধ্যে এ রোগ হয়ে থাকে।

বাছুর জন্মের ৪-৬ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। গাভীর জিহবা দ্বারা বাছুরের নাভি চাটার কারণে, অনেক সময় কুকুর বা কাক বাছুরের নাভীতে কামড় বা ঠোক দিলে ক্ষত সৃষ্টির মাধ্যমে সংক্রমন হয়। বাছুরের নাভি ভেজা ও স্যাঁতস্যাতে থাকলে এ রোগ দেখা যায়।

  1. জন্মের পর বাছুরের নাভি যদি সঠিক নিয়মে কাটা না হয়।
  2. বাছুরকে সবসময় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে রাখা হলে।
  3. বাছুরের নাভি কাটার জন্য ব্যবহৃত ব্লেড বা ছুরি জীবাণুমুক্ত না হলে।
  4. গাভী অধিক পরিমাণে বাছুরের নাভি চাটার সুয়োগ পেলে।
বাছুরের নাভি ফোলা রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

বাছুরের নাভি ফোলা রোগের লক্ষণ

  • বাছুরের শরীরের তাপমাত্রা ১০৫-১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট হয়।
  • বাছুরের নাভী ফোলা, ভেজা-ভেজা, গরম ও শক্ত অনুভব হয়।
  • চাপ দিরে রক্ত মেশানো তরল এবং পেকে গেলে পুঁজ বের হয়।
  • বাছুর নাভিতে ব্যাথা অনুভুত হয়।
  • আক্রান্ত বাছুর নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • নাভীতে ক্ষত থাকার কারণে ক্ষত স্থানে মাছি ডিম পাড়ে এতে নাভিতে পোকা হতে দেখা যায়।
  • বাছুর বার বার আক্রান্ত স্থান চাটতে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

  • জন্মের পর নাড়ী নতুন ব্লেড বা ছুড়ি দিয়ে কেটে ক্ষত স্থানে জীবাণুনাশক লাগাতে হবে। গাভীকে বাছুরের নাভি চাটা থেকে বিরত রাখতে হবে।
  • নাভি পেকে গেলে Scalpel দ্বারা কেটে পুঁজ বের করে দিতে হবে। ক্ষত স্থান দিন দুেই বার জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • নাভির ভিতর পোকা হলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। চিমটা দিয়ে পোকা বেরকরতে হবে। নাপথলিন গুড়া করে ক্ষত স্থানে পরপর ২-৩ গজ ডুকাতে হবে।
  • বাছুরকে ব্যাথা নাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
  • শক্তিশালী এন্টিবায়টিক প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রাথমিক অবস্থার নাভি পাকা রোগের জন্য টেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন যেমন Renamycin, Tetracycline এর যে কোনো একটি ইনজেকশন মাঝারি ওজনের বাছুরের জন্য ৩-৪ মিলি. করে মাংসে দিনে একবার করে ৫-৭ দিন দিতে হবে। এছাড়াও পেনিসিলিন গ্রুপের ওষুধ যেমন: Pronapen, Strepto P ইত্যাদি যেকোনো একটি মাঝারি বাছুরকে ১ ভায়াল করে মাংসপেশীতে দিনে একবার করে ৫-৭ দিন দিলে নাভি ফোলা রোগ ভালো হয়।
  • বাছুরকে সবসময় যত্নে রাখতে হবে।

বাছুরের নাভি ফোলা রোগ খুব মারাত্বক হরেও সঠিক যত্ন ও চিকিৎসায় এই রোগ ভালো হয়।

আরো পড়ুন: বাছুরের সাদা উদরাময় রোগ, রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা