গবাদিপশুর ফুট রট রোগ, লক্ষণ ও চিকিৎসা। ফুট রট (Foot Rot) গবাদিপশুর পায়ের ক্ষুরের চারপাশে ও ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যুর প্রদাহজনিত একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রামক রোগ। সাধারণত খামারের পরিবেশ স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে ও পায়ে ক্ষত থাকলে গরুর ফুট রট রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সকল শ্রেণীর সব বয়সের পশুই (গাভী, বলদ, ষাঁড়, বকনা ইত্যাদি) এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগ পরিচিতি
রোগের নাম | ফুট রট রোগ (Foot Rot) |
রোগের ধরণ | ব্যাকটেরিয়া ঘটিত |
জীবাণুর নাম | ফুসোব্যাকটেরিয়াম নেক্রোফোরাম (Fusobacterium necrophorum) নামক ব্যাকটেরিয়া |
সংক্রমণ | গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি |
মৃত্যুর হার | — |
সংক্রমণের বয়স | সকল বয়সে |
চিকিৎসা | চিকিৎসায় ১০০ ভাগ প্রাণি সুস্থ্য হয়। |

ফুট রট রোগের কারণ
এই রোগ সাধারণত ফুসোব্যাকটেরিয়াম নেক্রোফোরাম (Fusobacterium necrophorum) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমনের ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া যেমন Bacterorides melaninogenicus এর সংক্রমনে এ রোগ হয়।
ফুট রট রোগ কিভাবে ছড়াই?
সাধারণত আক্রান্ত প্রাণি থেকে এই রোগের বিস্তার ঘটে। আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষুরের ক্ষত স্থান থেকে নির্গত পদার্থ ও রস প্রচুর ব্যাকটেরিয়া বহন করে এবং এ থেকে সুস্থ প্রাণী সহজেই আক্রান্ত হয়।
গরুর পায়ের দুই ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যুতে কোনো ভাবে আঘাতের ফলে ক্ষত সৃষ্টি হলে এবং সর্বদা কাদা-পানি বা গোবরের মাঝে, স্যাঁতস্যেঁতে পরিবেশে পা রাখলে ক্ষতস্থান দিয়ে রোগজীবাণু সহজেই প্রবেশ করে এ রোগে সংক্রমিত হয়। গরুর পা যদি সব সময় ভেজা থাকে তাহলে ক্ষুরের মাঝে ক্ষত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অস্বাস্থ্যকর গোয়াল ঘর থেকে রোগের সংক্রমণ বেশি হয়।
এছাড়াও শক্ত স্থান, ধারালো পাথরের নুড়ি অথবা চারণক্ষেত্রের শক্ত ধান বা গমের মুড়া থেকে ক্ষুরের নরম টিসু্য আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেখান থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। যে কোনো কারণেই হোক না কেন পা যদি সব সময় ভেজা থাকে তাহলে ক্ষুরের মাঝে ক্ষত হবার সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয়। অস্বাস্থ্যকর গোয়াল ঘর হলে রোগের সংক্রমণ বেশি হতে পারে।

লক্ষণ
- আক্রান্ত প্রাণিকে আকষ্মিকভাবে খোঁড়াতে দেখা যায়। সাধারণত এক পায়ে ব্যাথা হলেও তা অধিকাংশই মারাত্বক হয়।
- দেহের তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট থাকে।
- ক্ষুদা মন্দা দেখা যায় ও গাভীর দৈহিক ওজন এবং দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।
- আক্রান্ত ষাঁড় গরু সাময়িকভাবে অনুর্বর হয়ে থাকে।
- গরুর পায়ে ঘা হয়।
- অনেক সময় পায়ের ক্ষতে পুঁজ হয় ও নেক্রসিস হয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দুর্গন্ধ বের হতে থাকে।
- অস্থিসন্ধি, সাইনোভিয়া ও টেন্ডনের প্রদাহ দেখা দেয় ফলে আক্রান্ত গরু মাটিতে শুয়ে পড়ে, আর ওঠে না।
- ক্ষুর খসে যেতে পারে ও গরু স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- আক্রান্ত প্রাণিদেরকে শুকনো পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে এবং ক্ষত স্থান জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
- ব্যাথানাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। যেমন- টাফনিল ভেট বোলাস / ইনজেকশন, কিটো এ ভেট বোলাস / ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
- ব্যাকটেরিযার ধ্বংসের জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্য এন্টিবায়টিক যেমন- সেফট্রাএক্সন বা মারবোফ্লক্সাসিন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
- ক্ষত স্থানে ৫% কপার সালফেট বা ৫% ফরমালিন দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে ১০% জিংক সালফেট ব্রাশের মাধ্যমে প্রয়োগ করলেও উপকার হয়।
আরো পড়ুন: বোভাইন এফিমেরাল ফিভার রোগ ও চিকিৎসা