পাংগাস মাছের খাদ্য তালিকা ও ফিড তৈরির উপাদান পাঙ্গাস মাছ চাষীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিলেট খাদ্য বানিয়ে পাঙাশ মাছকে সরবরাহ করা হলে পাঙাশ মাছ খুব দ্রুত শারীরিকভাবে বৃদ্ধি পায়। একই সাথে এই খাদ্য প্রদানের ফলে পাঙাশ মাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। আর তাই অধীক দামে রেডি ফিড না কিনে নিজেই তৈরি করুন পাংগাস মাছের খাদ্য।
বানিজ্যিক পাংগাস মাছের চাষ একটি লাভজনক প্রকল্প। অন্যান্ন সাদা মাছের সাথে মিশ্র পদ্ধতিতেও এই মাছ চাষ করা যায়।
পাংগাস মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম
পালন-পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার ১-২ দিন পর থেকে পরিপূরক খাদ্য দিতে হয়। প্রথম ৭ – ১০ দিন পর্যন্ত মাছের মোট ওজনের শতকরা ৩ ভাগ খাবার সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে দিতে হয়। সারা দিনে এই সময় ও এক বারই খাবার দেওয়া হয়।
এর ৭ – ১০ দিন বাদ থেকে খাবারের পরিমাণ বাড়ানো হয়। মাছের ওজনের শতকরা ৫ – ৮ ভাগ পর্যন্ত খাবার প্রয়োগ করা হয়। এই খাবার আস্তে আস্তে ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হয়। এদের ৯০ – ৯৫ দিন বয়স পর্যন্ত এই হারেই খাবার দেওয়া হয়। মাছের গায়ে চর্বি আসা অবধি এই ভাবে খাদ্য প্রদান করতে হবে।
মাছের ওজন ৪০০ – ৫০০ গ্রাম হলে বা মাছের শরীরে চর্বি জমতে শুরু করলে (২ – ৩ মাস বয়সের পর থেকে) খাদ্য মাছের মোট ওজনের ২-৩ ভাগ সরবরাহ করতে হয়। এবং খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ফ্যাট বজায় রাখতে হয়।
উন্নত উপায়ে অর্থাৎ ভালো পানিতে, সঠিক পরিচর্যা করে, উপযুক্ত ও সঠিক পরিমান খাবার প্রয়োগ করলে মাছের গুণমান ও বৃদ্ধি অনেক বেড়ে যায়। এতে মাছের গায়ের রং, মাংসের রং, স্বাদ ও গন্ধ ভালো হয়।
পাংগাস মাছের খাদ্যের পুষ্টিমান
মাছের জাত ও বয়স ভেদে খাবারের পুষ্টিগুণের কিছুটা পার্থক্য থাকে।
পাঙ্গাস স্টর্টার
- প্রোটিন- ৩২-৩৫%
- ফ্যাট- ৪-৫%
- ফাইবার-
- ক্যালসিয়াম-১-২ %
- ফসফরাস- ০.৫-১ %
- মেটাবলিক এনার্জি- ৩০০০-৩১০০ কিলোক্যালারী/কেজি
- আদ্রতা- ১১-১২ %
পাঙ্গাস প্রোয়ার
- প্রোটিন- ২৫-২৮ %
- ফ্যাট- ৫-৬ %
- ফাইবার- ৭-৮ %
- ক্যালসিয়াম- ১-২ %
- ফসফরাস- ০.৫-১ %
- মেটাবলিক এনার্জি- ৩৩০০ কিলোক্যালোরি/কেজি
- আদ্রতা- ১১-১২ %
পাঙ্গাস ফিনিসার
- প্রোটিন- ২৬-২৭ %
- ফ্যাট- ৫ %
- ফাইবার- ৭-৮ %
- ক্যালসিয়াম- ১.৫ %
- ফসফরাস- ০.৬%
- মেটাবলিক এনার্জি- ৩২০০ কিলোক্যালরী/কেজি
- আদ্রতা- ১১-১২ %

পাংগাস মাছের খাদ্য তৈরির উপাদান
এই মাছের খাদ্য তৈরিতে নিম্নক্ত খাদ্য উপাদানের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
- শর্করা (কার্বোহায়ড্রেট) জাতীয়- ভুট্টা, গম, খুদ বা চাউল ইত্যাদি।
- আমিষ (প্রোটিন) জাতীয়- ফিসমিল, পোল্ট্রি মিল, মিট এন্ড বোন মিল, বিভিন্ন ডাইল, শরিষার খেল, নারিকেলের খৈল, তিলের খৈল ইত্যাদি।
- তেল (ফ্যাট)- সয়াবিন তেল, ফুল ফ্যাট সয়াবিন, সয়াবিন তেল, তেল জাতীয় ফসলের খৈল ইত্যাদি।
- ফাইবার জাতীয়- চাউলের কুরা, ডিওআরবি ইত্যাদি।
- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয়- লআইমস্টোন, ঝিনুক চুর্ণ, ডিসিপি ইত্যাদি।
- ভিটামিন ও মিনারেল জাতীয়- ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স, কড লিভার ওয়েল ইত্যাদি।
পাংগাস মাছের খাদ্য তালিকা বা ফিড তৈরির নিয়ম
পাঙাশ মাছের খাদ্যকে পিলেট মেশিনের সাহায্যে পিলেট ও শুষ্ক বানিয়ে খাওয়ানো সবচেয়ে ভাল। পাঙাশ মাছকে খাদ্য তৈরির জন্য ১০০ কেজি হিসেবে নিচে একটি তালিকা বা ফরমুলেশন চার্ট দেওয়া হল-
নং | খাদ্য উপাদান | পরিমান | মেটাবলিক এনার্জি | প্রোটিন | ফ্যাট | ফাইবার |
০১ | ভুট্টা | ৪০ | ১৩২৮ | ৩.৫৬ | ১.৫২ | ০.৮৮ |
০২ | রাইচ পলিশ | ১০ | ২৮৫ | ১.২ | ১.২ | ০.৬২ |
০৩ | সয়াবিন মিল | ২০ | ৪৫০ | ৮.৭ | ০.২২ | ১.৫৬ |
০৪ | তিলের খৈল | ১০ | ২২৩ | ২.১৭ | ১.২৩ | ০.৬২ |
০৫ | প্রোটিন মিল ৬০% | ১০ | ২৮৬ | ২.৭৫ | ৬ | ০.৮১ |
০৬ | পোল্ট্রি মিল/ মিট মিল | ১০ | ৩১৩.৪ | ৪.৮০৪ | ১.২৭৫ | ২.২৪৫ |
০৭ | সয়াবিন তেল | ০.৫ | ৪৪ | — | ০.৫ | — |
০৮ | লাইমস্টোন | ৩ | — | — | — | — |
০৯ | ডিসিপি | ০.২ | — | — | — | — |
১০ | রেনা গ্রোয়ার | ০.১৫ | — | — | — | — |
১১ | লবন | ১ | — | — | — | — |
১২ | মিথিওনিন | ০.১ | ৫ | ০.০৫৭ | — | — |
১৩ | লাইসিন | ০.১ | ৪.৫ | ০.১২ | — | — |
১৪ | টক্সিন বাইন্ডার | ০.২ | — | — | — | — |
১৫ | এনজাইম | ০.১ | — | — | — | — |
১৬ | প্রোবায়োটিকস | ০.০৫ | — | — | — | — |
— | মোট- | ১০৫ কেজি | ২৯৩৮ | ২৭.৬১ | ৬.৭৫ | ৫.৯২৫ |
এই খাদ্য উপাদানের সাথে চিটাগুড়ও দেওয়া যেতে পারে। উপরোক্ত উপায়ে পিলেট খাদ্য বানিয়ে পাঙাশ মাছকে খাওয়াতে হবে।
আরো পড়ুন- গরু মোটাতাজাকরণ খাদ্য তালিকা।