গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও বীজ দেওয়ার নিয়ম। গাভী হিটে আসার লক্ষণ সমূহ সকল ডেইরি খামারিদের জন্য অবশ্যই জানা দরকার। বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে গাভী পালন করা হচ্ছে। গাভী পালন করে লাভবান হওয়ার জন্য সঠিক সময়ের মধ্যে বাচ্চা উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। আর উন্নত জাতের বাচ্চা উৎপাদনের জন্যই গাভীকে উন্নত জাতের বীজ প্রদান করা হয়। আসেন প্রথমে যেনে নেই গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও হিটে আসার ধাপ গুলো সম্পর্কে।
গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও ধাপ
আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ খামারির গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও এর ধাপ বা পর্বগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তারা সময়মতো গাভিকে বিজ দিতে ব্যর্থ হয় ফলে গাভী কনসিভ করে না বা বীজ রাখতে পারে না।
যদি খামারী ভাইয়েরা গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও এর পর্বগুলো সম্পর্কে ধারনা নিতে পারে তাহলে অনেকাংশে সফল হবে।
গাভী হিটে আসার চারটি ধাপ বা পর্ব রয়েছে। যথাঃ
- প্রস্তুতি পর্ব (Pro-Estrous)
- উত্তেজনা পর্ব (Estrous)
- কাম উত্তেজনা পর্ব (Meta-Estrous)
- নিষ্ক্রিয় পর্ব (Di-Estrous)
প্রস্তুতিপর্ব বা pro-Estrous
গাভী হিটে আসার লক্ষণ গুলোর প্রথম টি হলো এটি। গাভী হিটে আসার লক্ষণেএর ৩ দিন পূর্বে থেকে এই প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়। হিটে আসার পূর্বের এই সময় কে প্রস্তুতি পর্ব বলে। গাভী হিটে আসার প্রস্তুতি পর্বের লক্ষণ গুলো হলো-
- গাভী খাওয়া-দাওয়া কম করবে।
- ঝিমানি ভাব থাকবে।
- গাভীর যোনি মুখ দিয়ে স্বচ্ছ পাতলা ঝিল্লি বের হবে।
যৌন উত্তেজনা পর্ব বা Estrous
গাভী হিটে আসার লক্ষণ এর এটি দ্বিতীয় পর্ব। এই উত্তেজনা পর্ব ১ দিন বা ২৪ ঘন্টা স্থায়ী থাকে। আর আমাদের খামারি ভাইয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পর্বেই বিজ দিয়ে থাকেন। এই পর্বে বিজ দিলে কন্সেপ্ট না করার হার ৯৮%। সুতারাং এই ধাপে কখনোই গাভীকে বীজ বা সিমেন দেওয়া যাবে না। গাভী হিটে আসার উত্তেজনা পর্বের লক্ষণঃ
- গাভী ঘন ঘন প্রসাব করবে।
- পাশে থাকা অন্য গাভির উপর লাফিয়ে উঠবে।
- অন্য গাভীর যৌনাঙ্গ শুকতে থাকবে।
- দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
- গাভী ডাকতে থাকবে।
কামত্তোর পর্ব বা Meta _ Estrous
গাভী হিটে আসার লক্ষণ এর এটি তৃতীয় পর্ব। এটিই হলো গাভীকে বীজ দেওয়ার সঠিক সময়। এই পর্বের স্থায়িত্ব কাল ১ থেকে ২ দিন। এই সময় বিজ দিলে কনসিভ করার হার ৯৯%।
- গাভীর যোনি পথ দিয়ে অনেক সময় রক্ত মিশ্রিত ঝিল্লি বের হয়।
- গরু খাওয়া কমিয়ে দেয়।
- গাভী ছটফট করে।
- অনবরত ডাকতে থাকে।
নিস্ক্রিয় পর্ব বা Di-Estrous
গাভী হিটে আসার লক্ষণ এর শেষ ধাপটি থাকে ১৫ দিন। যদি গাভিকে বীজ না দেওয়া হয় তাহলে গাভির জরায়ু থেকে বের হওয়া ডিম্বানু গুলো মারা যাবে এবং গাভির সমস্ত জনন অঙ্গ স্বাভাবিক হবে। এর পর কয়েক দিনের মধ্যে আবার হিটে আসার ধাপ গুলো শুরু হবে। এসময় কে নিস্ক্রিয় পর্ব বলে।
গরুর সাইলেন্ট ডাক
ইদানিং অনেক গরুতে দেখা যায় গরু মুখে ডাকে না। এক্ষেত্রে গরুর আচরণ দেখে খামারিকে বুঝতে হয় য়ে গাভী হিটে এসেছে। এসময় গরু হিটে আসার অন্যান্য যে অন্যান্য যে লক্ষণ ও আচরণ গুলো আছে সেগুলো করতে থাকবে।
আর তাই প্রজননক্ষম গাভী বা বকনা থাকলে তার আচরণের উপর নজর রাখতে হবে। গরুর ঘরে দীর্ঘ দিন একা ভাবে পালন করলে গাভী ডাক আসলে মুখে ডাকতে দেখা যায় না।
বাকি গাভী হিটে আসার লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।
গরুর উন্নত জাতের বীজের নাম
আমাদের দেশে প্রাপ্ত কিছু উন্নত জাতের সিমেন বা বীজের নাম হলো-
- শাহীওয়াল 75%
- শাহীওয়াল 87.5%
- শাহীওয়াল 100%
- ফ্রিজিয়ান 75%
- ফ্রিজিয়ান 87.5%
- ফ্রিজিয়ান 100%
- গির 100%
- ফ্লেকভি 100%
- ব্রাহমা
- রেড চিটাগাং 100%
আগনার গাভরি জাত ও ওজন অনুযায়ী উপরের যে কোন একটি ব্রিড আপনি আপনার গাভীর জন্য প্রদান করতে পারবেল।

গাভী গরুকে বীজ দেওয়ার নিয়ম
গাভী হিটে আসার লক্ষণ বুঝে গাভী বা বকনাকে সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে বীজ দিতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন এমন একটি বিষয় যা সঠিক ভাবে করতে না পারলে গরুর প্রজনন স্বাস্থ্যে ইনফেকশন সহ নানা রকম অসুস্থতা সৃষ্টি হয়। হিটে আসা গাভী বা বকনা কে বীজ দেওয়ার সময় নিম্নোক্ত বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
- অভিজ্ঞ কৃত্রিম প্রোজনন কর্মি দ্বারা সঠিক সময়ে বীজ দিতে হবে।
- ডাক বা হিট সঠিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
- কামত্তোর পর্ব বা Meta _ Estrous সময়ের মধ্যে প্রজনন ঘটাতে হবে।
- বীজ দেওয়ার পর গরুকে গোছল করাতে হবে।
সরকারী প্রশিক্ষিত কৃত্রিম প্রজনন কর্মী গণ ও ব্রাকের প্রজনন কর্মী গণ দক্ষতার সাথে বীজ দিতে পারে। তবে এডিএল, এসিআই ও লালতীরের কিছু কিছু কর্মীর ও দেখলাম কৃত্রিম প্রজনন ও গরুর প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা ও দক্ষতা আছে।
কৃত্রিম প্রজনন কর্মী যে প্রতিষ্ঠানের হোক না কেন আগে একটু জাচাই করবেন তার দক্ষতা ও অভিগতা কেমন।
এক জন দক্ষ্য প্রজনন কর্মী একটি উন্নত জাতের বীজ দ্বারা আপনার খামার কে অনেক দুর এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
গরুর বীজের দাম
গাভী হিটে আসার লক্ষণ প্রকাশ হলে খামারির প্রথম চিন্তা টি হলো বীজের দাম। গরুর বীজের দাম বাংলাদেশে তুলনামুলক বেশি না। গরুর বীজের দাম যাই হোক বর্তমান বাংলাদেশ এখন ডেইরী শিল্পে অনেক দুর এগিয়েছে এই উন্নত জাত ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে।
সরকারী সিমেন বা বীজের দাম তুলনামুলক কম হবে এটাই স্বাভাবিক।
একজন কৃত্রিম প্রজনন কর্মী আপনার খামারে যেয়ে শাহীওয়াল বা প্রিজিয়ান জাতের বীজ দিয়ে যদি ৫০০ টাকা দাম না পায় তাহলে সেটা সেই খামারির ব্যার্থতা।
গরুর বীজ বা সিমেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান
বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫ টি প্রতিষ্ঠাণ উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন, আমদানী ও বিপননের সাথে কাজ করছে-
- সরকারী কৃত্রিম প্রজনন বীজ
- ব্রাক ক্রিত্রিম প্রজনন বীজ
- এসিআই কম্পাণীর বীজ
- এডিএল কম্পাণীর বীজ
- লাল তীর কম্পাণীর বীজ
আপনার গাভীকে উন্নত জাতের বীজ দিয়ে আপনার খামার কে লাভজনক করতে এই প্রতিষ্ঠাণ গুলো নিরস্তণ কাজ করে যাচ্ছে।
গাভীকে বীজ দেওয়ার পরেও গর্ভধারণ না হওয়ার কারণ
গাবকে প্রজনন করানোর সময় অবশ্যই জাত উন্নয়নের বিষয় টি মাথায় রাখতে হবে। তবে জাত উন্নয়ন করতে যেয়ে যেসকল বিষয় বিচনা করতে হবে সেটা প্রজনন কর্মীর সাথে কথা বলে নিলে ভালো হয়। কেননা যে গাভী বা বকনা কে বীজ দিবে তার জাত ও বডি ওয়েটের মাধ্যমেই নির্নয় করতে হবে।
দুগ্ধখামার এ হিটে আসা গাভীকে বীজ দেওয়ার পরও গর্ভধারণ না হওয়া বা বীজ ধরে না রাখতে পরার পিছনে অনেকগুলো কারন রয়েছে। নিম্নে কিছু কারণ সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলো
গাভীর ডাক বা হিটের সময় পার হয়ে গেলে এবং গাভীকে বীজ বা সিমেন দিলে গাভী গর্ভবতী হয় না। কোন কারণে গাভীর জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ থাকলে সেই গাভীকে যদি বীজ দেওয়া হয় তাহলে গাভী গর্ভবতী হয় না। গাভীর শরীরে অধিক কৃমি দ্বারা আক্রান্ত থাকলে গাভীকে বীজ দেওয়ার পরও অনেক সময় গাভীর গর্ভধারণ হয় না।
গাভী পুষ্টিহীনতায় বা অধিক দূর্বলতায় ভুগলেও অনেক সময় গাভী গর্ভবতী হয় না। গাভীর স্থায়ী ভাবে ডিম্বক্ষরণ প্রক্রিয়া নষ্ট বা বন্ধা হয়ে গেলে গাভী গর্ভবতী হয় না। একই গরুর ঘরে বা পাশাপাশি প্রজননক্ষম গাভী বা বকনা ও ষাঁড় পালন করলে অনেক সময় গাভী বা বকনা ডাক বা বীজ রাখে না। সিমেন স্ট্র বা বীজে হিমায়িত শুক্রানু মৃত হলে গাভী পাল রাখে না। অনভিজ্ঞ কৃত্রিম প্রজনন কর্মী দ্বারা বীজ দেওয়া হলে অনেক সময় গাভী বীজ রাখে না।
আরো পড়ুন- গাভী হিটে না আসার কারণ ও হিটে আনার উপায়