গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর রোগঃ কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর

গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর রোগঃ কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি। গাভীর মিল্ক ফিভার (milk fever) ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত একটি নিরব ঘাতক রোগ। সাধারণত বেশী দুগ্ধ উৎপাদনশীল গাভী এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। গাভীর বাচ্চা প্রসবের ৭২ ঘন্টা আগে বা পরে এ রোগ হয়। বিপাকীয় রোগ গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে মারাত্বক। চিকিৎসায় দেরি হলে গাভীর প্রাণহানি হতে পারে।

গর্ভকালের বিভিন্ন পর্যায়ে সঠিক অনুপাতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সরবরাহ না করায় এবং রক্ত ও হাড়ের মাঝে ক্যালসিয়াম প্রবাহ বন্ধ হবার কারণে এ রোগ হয়। সাধারণত একাধীক বার বাচ্চা দেবার পর বয়ষ্ক গাভীর এ রোগ হয়।

গাভীর মিল্ক ফিভার রোগের কারণ

  1. রক্তে ক্যালসিয়াম কমে গেলে গাভীর মিল্ক ফিভার রোগ হতে পারে। সাধারণত ১০০ সিসি রক্তে ৯ মিলিগ্রামেরও বেশি পরিমান ক্যালসিয়াম থাকতে হয়। আনেক কারণে এই মাত্রা উল্যেখযোগ্য হারে কমে যেতে পারে, এমনকি তা ৩-৪ মিলিগ্রামে নেমে আসে। আর তখনই এই রোগের সৃষ্টি হয়।
  2. গাভীর দেহে বিভিন্ন খনিজের ঘাটতির ফলে স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়ার জন্যও এ রোগ হতে পারে।
  3. প্রসবের পর পালান একবারে খালি করে দুধ দোহন করা হলেও মিল্ক ঢিভার রোগ হতে পারে।
  4. গাভী গর্ভকালীন নিজের রক্ত থেকে ক্যালসিয়াম বাচ্চার (ফিটাসের) দেহে পাঠায়। প্রায় প্রতি ঘন্টায় ০.২৫ গ্রাম বা প্রতিদিন ১০ গ্রাম এবং প্রসবের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রতি ঘন্টায় ১ গ্রাম বা সারাদিনে সর্বোচ্চ ৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রসবকালীন দুধে বের হয়।

এসকল কারণেই গর্ভকালীন এবং প্রসবোত্তর উপযুক্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামের সরবরাহ না থাকলেই এ রোগ বেশি হয়।

গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর
গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর

গাভীর মিল্ক ফিভার রোগের লক্ষণ

এ রোগের নামে জ্বর থাকলেও আসলে পশুর জ্বর হয় না। দুগ্ধজ্বরে আক্রান্ত গাভীর উপসর্গগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

প্রথম পর্যায়

  1. মৃদু উত্তেজনা ও অনৈচ্ছিক পেশির খিঁচুনি দেখা দেয়।
  2. স্নায়ুবিক দুর্বলতা, অতিসংবেদনশীলতা, ক্ষুধামান্দ্য ও দুর্বলতা।
  3. হৃদগতি বৃদ্ধি পায় এবং দেহের তাপমাত্রা সামান্য কিছু বৃদ্ধি পায।
  4. এ পর্যায়ে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে আসে।

দ্বিতীয় পর্যায়

  1. গাভী মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং আর উঠে দাঁড়াতে পারে না।
  2. আংশিক পক্ষাঘাত ও অবসাদ প্রকাশ পায় এবং রক্তে ক্যালসিয়াম অধিক মাত্রায় হ্রাস পায়।
  3. গাভীর দেহের প্রান্ত বিশেষ করে কান ও নাক ঠান্ডা থাকে এবং দেহের তাপমাত্রা ৯৬-১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট হয়ে থাকে।
গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর

তৃতীয় পর্যায়

  1. প্রাণি অবসাদগ্রস্ত থাকে, দেহের এক পাশে মাথা গুঁজে শুয়ে থাকে। এই বিশেষ ভঙ্গি দুগ্ধজ্বর বা মিল্ক ফিভার রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
  2. গবাদি পশুর পেট ফেঁপে যায়।
  3. চিকিৎসা বিহীন গাভীর মৃত্যু ঘটে।
  4. রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমান সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।
  5. প্রসব পূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসবের সময় মিল্ক ফিভার বা দুধ জ্বর হলে প্রসব আরম্ভ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

গাভীর মিল্ক ফিভার রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর প্রতিরোধে গাভীকে নিয়মিত ক্যালসিয়াম সাপ্নিমেন্ট খাওয়াতে হব। গাভীর দানাদার খাদ্যে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্যে ডিসিপি প্লাস / ডিসিপি গোল্ড মেশানো যেতে পারে।

  • গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই নিয়মিত ক্যালসিযাম সাসপেনশন ওরালি খাওয়াতে হবে।
  • প্রসবের পর ম্যাজিকাল ওবি ভেট সাসপেনশন খাওয়াতে হবে।
  • চিকিৎসায শিরার মাধ্যমে ম্যাজিকাল ২৮ ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে।

আরো পড়ুন: লাম্পি স্কিন ডিজিজঃ চিকিৎসা, ঔষধ ও ভ্যাকসিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *