গরুর যত্ন- মোটাতাজাকরণ করতে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন

গরুর যত্ন

গরুর যত্ন- মোটাতাজাকরণ করতে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। প্রিয় খামারি ভাই আপনি নিশ্চয় জানেন যে মোটাতাজাকরণ গরুর বাড়তি কিছু যত্নের প্রয়োজন হয়। বাড়তি যত্নই মোটাতাজাকরণ করার প্রধান হাতিয়াট। গরুর যত্ন বলতে শুধুমাত্র বাড়তি খাবার নয়। থাকা, খাওয়া ও বিশ্রাম সবই ভালো ও নিয়ম মাফিক হতে হবে।

গরু মোটাতাজাকরণ করতে গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ সকল প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সঠিক সময়ে প্রদাণ করতে হবে। গরুকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য থাকতে হবে। গরুর শরীরে কোন ভিটামনি ও মিনারেলের ঘাটতি থালে চলবে না।

গরুর যত্ন

  1. প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রাণিকে শরীর মেজে গোসল করাতে হবে এবং সঙ্গে  ব্রাস করলে ভালো হয়।
  2. যেহেতু খাদ্য পরিবেশনার উপরও গরুর খাদ্য গ্রহণের তারতম্য হয় সেহেতু খাদ্য পরিবেশনে কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেমন- নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করা, গরুর সম্মুখে সর্বদা খাদ্য রাখা, খাদ্য সরবরাহের আগে অবশ্যয় পাত্র পরিষ্কার করা, দানাদার খাদ্য ভিজিয়ে বা সিদ্ধ খেতে অভ্যস্ত হলে সেভাবে দেওয়া, খাদ্য অবশ্যয় মাটি/বালি না থাকা ও খাদ্য পচা, বাসি, অতি পুরাতন না হওয়া।
  3. প্রয়োজনের অতিরিক্ত নড়াচড়া বা লাফালাফি করতে না দেওয়া।
  4. প্রাণিকে কোন প্রকার কাজে খাটানো যাবে না এবং উত্তেজিত বা বিরক্ত করা যাবে না।
  5. মশা-মাছি, আটালী সহ সকল অন্তঃ ও বহিঃ পরজীবি থেকে প্রাণিকে রক্ষা করতে হবে।
  6. প্রাণির কাছে সবসময় পর্যাপ্ত টিউবয়েলের টাটকা পানি রাখতে হবে যাতে চাহিদা মত পানি পান করতে পারে।
  7. বাসস্থান সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে।
  8. সপ্তাহে অন্তত একদিক বাসস্থান, খাবার পাত্র জীবাণুনাশক ঔষধ দ্বারা পরিষ্কার রাখতে হবে।
  9. প্রাণিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আলো বাতাস যুক্ত ঘড়ে রাখতে হবে।
  10. খাদ্য সংরক্ষণের জায়গা ও পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও রোগ সৃষ্টিকারি পোকামাকর থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
  11. নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ দিতে হবে। সঠিক নিয়মে কৃমিনাশক করতে রেজিস্ট্রার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  12. বাহিরের লোকজনকে গরুর কাছে যেতে দেওয়া যাবে না।
  13. প্রাণি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিতে হবে।

গবাদিপশু বা গরু মোটাতাজাকরন করতে বাড়তি যত্ন ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ এই দুটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাই ইনজেকশন বা হরমন ব্যবহার না করে জৌব পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করুন।

সাবধানতা

গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ করতে যে সকল সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে-

  • কম গ্রথের বা কম বয়সী গরু ক্রয় করা যাবে না।
  • দ্রুত বর্ধণশীল ষাঁড় ক্রয় করতে হবে।
  • কম খরচে সবচেয়ে ভালো মানের খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। খাদ্য খরচ বেশি হওয়া চলবে না।
  • চিকিৎসা খরচ কম হতে হবে।
  • গরুকে সবসময় সুস্থ্য থাকতে হবে।
  • অসুস্থ্য হলে দ্রুত ভেটেরিনারি ডাক্তারের সেবা গ্রহণ করতে হবে।
  • পুষ্টি ও ঔষধের ক্ষেত্রে ভালো মানের পুষ্টি ও ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।

খাদ্য খরচ কিভাবে কমাবেন?

গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ একটি অতি লাভজনক প্রকল্প হওয়া সত্যেও খামারিরা ইদনিং খুব একটা লাভ করতে পারছে না। তার কারণ গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি। ২০২০ সালে যখন এই পোস্টি আপডেট করছি তখন খড় বা বিছালির আঁটি ৬৫০০ টাকা হাজার।

অর্থাৎ প্রতি আঁটি কড়ের দাম ৬ টাকা ৫০ পয়সা। কেউ কল্পানাও করেনি কখনো। দানাদার খাদ্যের দামও একই ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গরু মোটাতাজাকরণ বলেন আর দুগ্ধ খামার বলেন সকল খামারে কম দামে খাদ্য ব্যবস্থাপণা নিশ্চিৎ করতে আমাদের কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

তবেই সেটি সম্ভব। এরকম কয়েকটি প্রযুক্তি তুলেধরা হলো।

গরুর যত্ন
গরুর যত্ন
  • কাঁচা ঘাস ও সাইলেজ– খড়ের ব্যবহার কমাতে কাঁচা ঘাস অথবা সাইলেজ ব্যবহার করতে হবে। ভুট্টার সাইলেজ বা কাঁচা ঘাস জমিতে উৎপাদন করলে প্রতি কেজি ২-৪ টাকা খরচ হয়। এছাড়াও কিছু অপ্রচলিত খাদ্য যেমন- খেসারির নাড়া, গমের রাড়া ইত্যদির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
  • দানাদার খাদ্য- দানাদার খাদ্যের খরচ কমাতে ভুট্টা, ধান, গম, মসুর ডালের ভুসি, কালায়ের ভুসি ইত্যমি মিশিয়ে ২৫-২৬ টাকার মধ্যে দানাদার খাদ্য তৈরী করতে হবে। দানাদার খাদ্যের সাথে ফার্মান্টেড ভুট্টা খাওয়ালে উৎপাদন খরচ কম পরবে।
  • ইউ,এম,এস- খাদ্য খরচ কমানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো গরুকে ইউ,এম,এস খাওয়ানো। খুব সামান্য খরচে এই পদ্ধতিতে খড়ের পুষ্টিগুণ বহুগুণ বৃদ্ধি করে খামারের খাদ্য খরচ কমানো সম্ভব।

শেষ কথা

পরিশেষে গরু পালনকারি ভাইদের উদ্যেশে বলতে চাই, যত্নই আসল। তবে সঠিক নিয়মে যত্ন নিতে হবে। গরুর যত্নের নিয়ম না জানা থাকায় আমরা ভালো ভেবে ক্ষতি করে থাকি।

আরো পড়ুন- গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি