গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ- ট্যাবলেট ও ইনজেকশন

গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ

ছাগল গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ- ট্যাবলেট, সিরাপ ও ইনজেকশন পাওয়া যায়। গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ও ইনজেকশন জাতীয় ঔষধ সম্পর্কে খামারিদের একটি পূর্নাঙ্গ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে এই পোস্টে। আলোচনা করতে চাই ক্যালসিয়াম এর সাথে সম্পর্কিত ফসফরাস ও ভিটামিন ‍ডি৩ নিয়েও। গাভীর ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা ও অভাব জনীত সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তর কথা বলার চেষ্টা করবো আশাকরি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন।

গরুর ক্যালসিয়াম

ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। ক্যালসিয়াম এর সাথে ফসফরাস শব্দ টি সব সময়ই চলে আসে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সকল গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি ও মাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল বা খনিজ উপাদান। পোষা প্রানীর শরীরে সবচেয়ে বেশি যে মিনারেল সমুহ সোপ্লিমেন্ট হিসাবে সরবলাহের প্রয়োজন তা হলো ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। আমাদের দেশের বেশির ভাগ ছাগলের ও গরুর অভাব জনীত সমস্যা থাকে।

গবাদিপ্রানীর খাদ্যে যথেষ্ট পরিমান এই মিনারেল দুটির অভাব থাকলে প্রানীর রোগ প্রোতিরোধ ক্ষমতা ও উৎপাদন দুটোই কমতে থাকে। সর্বোপরি গরু নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকে।

ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাবজনীত রোগ

ক্যালসিয়াম এর অভাবে গবাদিপশুতে বিভিন্ন রোগ ও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে-

  1. গাভীর শরীরে এর অভাবে দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিবার (milk fever) বা হাইপোক্যালসিমিয়া (hypocalcemia) রোগ দেখা যায়।
  2. পূর্ণ বয়স্ক প্রানীতে এর অভাবে অস্টিওম্যালাসিয়া (Osteomalacia) বা অস্থি কমোলতা রোগ দেখা য়ায়।
  3. ফসফরাসের অভাবে গবাদিপশুর পিকা (Pica) রোগ বা ক্ষুধা মন্দা রোহগ দেখা যায।
  4. এই মিনারেলের অভাবে গবাদিপশুর হাঁড়ের ভঙ্গুরতা দেখা যায় এবং পশুর হাটতে ও পায়ের উপর ভর দিয়ে দাড়াতে অসুবিধা হয়।
  5. বাড়ন্ত গবাদিপশুর দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়।
  6. গরু বা অন্যান্য প্রানীতে প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় এমন কি প্রজন্ন ক্ষমতা একেবারে নষ্টও হয়ে যেতে পারে।

গবাদিপশুর শরীরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা

গবাদিপশুর শরীরে এই তিনটি উপাদানের একটি নির্দিষ্ট ব্যালেন্স থাকা প্রয়োজন হয়। এর ব্যতিক্রম হলে খাদ্যে যথেষ্ট পরিমান ক্যালসিয়াম থাকা সত্যেও গবাদিপশুর শরীর তা গ্রহণ করতে পারে না। দেখা যায় পশুর শরীরে ৩:১ মাত্রায় ক্যালসিযাম ও ফসফরাস থাকা দরকার। আর এজন্য শুধু ক্যালসিয়াম সরবরাহ না করে সাথে ফসফরাস ও ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট হিসাবে সরবরাহ করতে হয়। গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।

গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ

গাভীর ক্যালসিয়াম প্রয়োজনীয়তা

গাভী গরুর জন্য সবচেয়ে বেশি যে মিনারের বা খনিজ উপাদান প্রযোজন হয় তা হলো ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। গাভীর বাছুরের হাঁড়ের গঠন মজবুত করতে ক্যালসিযাম ও ফসফরাস প্রধান ভুমিকা পালন করে।

গাভীর দুধে প্রচুর পরিমানে এই দুইটি মিনারের থাকে যা গাভীর শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে গাভীর শরীরে এই দুটি মিনারেল সহ নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলর অভাব দেখা যায়।

গাভী সচারচার কাঁচা ঘাস ও সুষম দানাদার খাদ্য থেকে দরকারি মিনারেল গ্রহণ করে। যার ফলে দেখা যায় গাভী গরুকে কাঁচা কম পরিমান সরবরাহ করলে দুধের উৎপাদন কমে যায়।

গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ

গরুর সকল বয়সেই এই খনিজ উপাদান শরীরে প্রযোজন হয়। গরুকে তার খাদ্যের মাধ্যমেই সচারচার ক্যালসিয়াম সরবরাহ করা হয়। গরু বা ছাগল যদি দানাদার খাদ্যের মাধ্যমে এই মিনারেলের সঠিক মাত্রায় সরবরাহ না পায়।

কাঁচা ঘাসের অভাব থাকে তাহলে অবশ্যই ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট হিসাবে গরু বা ছাগল সহ অন্যান্য গবাদিপশুকে মাঝে মাঝে প্রযোগ করতে হবে। গরু বা ছাগলের এই মিনারেলের ঘাটতি পুরণের জন্য বিভিন্ন কম্পোজিশনে বিভিন্ন ফর্মে বাজারে এই ঔষধ পাওয়া যায।

গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, সিরাপ, ফিড গ্রেড, ইনজেকশন ইত্যাদি।

ফিড গ্রেড ক্যালসিয়াম

গবাদিপশুর খাদ্যের ক্যালসিয়মের চাহিদা পুরণে ফিড গ্রেড ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। ফিড গ্রেড এই সকল সাপ্লিমেন্টের মধ্যে লাইমস্টোন বা চুনাপাথর, ঝিনুকের গুড়া, ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট (DCP), মনো-ক্যালসিয়াম ফসফেট (MCP) ইত্যাদি ব্যবহার হয়।

লাইমস্টোন বা চুনাপাথরে ৩৮% ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। কিন্তু এতে ফসফরাস পাওয়া য়ায় না। অপরদিকে ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেটে ২২% ক্যালসিয়াম ও ১৮% ফসফরাস পাওয়া য়ায়।

  1. ডিসিপি প্লাস ১ কেজি, ৫ কেজি ও ১০ কেজি (অপসোনিন ফার্মা:)
  2. ডিসিপি গোল্ড ১ কেজি, ৫ কেজি ও ১০ কেজি (এসিআই এসিমেল হেল্থ)
  3. স্কয়ার ডিসিপি ২৫ কেজি (স্কয়ার )

ওরাল সাসপেনশন বা সিরাপ

ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি৩ এর অভাব জনীত কারণে সবচেয়ে বেশি যে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার হয় সেটি এই ওরাল সাসপেনশন। এই সিরাপ টি গবাদিপশুর শরীরে দ্রুত ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য দরকারি ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে।

মিল্ক ফিবার সহ অন্যান্য অভাব জনীত রোগে এই সলুশন বা ওরাল সাসপেনশন টি ব্যাপক ব্যবহার হয়। বাজারে প্রায় সকল ভেটেরিনারি ঔষধের দোকানে এই প্রোডাক্ট টি রয়েছে। অবশ্যই ভেজাল পন্য থেকে সাবধান হতে হবে।

বিশ্যস্ত প্রতিষ্ঠাণের উৎপাদিত পন্য ব্যবহার করতে হবে।

  • সানক্যালভেট ওরাল (Suncalvet Oral)- ১ লিটার ও ৫ লিটার (এলানকো)
  • রেনাক্যাল-পি (Renacal-P)- ৫০০ মিলি, ১ লিটার ও ৫ লিটার (রেনাটা)
  • সিপি-ভেট (CP-Vet)- ৫০০ মিলি, ১ লিটার ও ৫ লিটার (একমি)

গরুর ক্যালসিয়াম ইনজেকশন ও পাওডার

গরুর ক্যালসিয়াম ইনজেকশন গরুর শরীরে বা রক্তে দ্রুত ক্যালসিয়াম সরবরাহের জন্য ব্যবহার হয়। গরুর মিল্ক ফিবার বা অন্যান্য অভাবজনীত রোগে গরুর শরীরে দ্রুত ক্যল: সরবরাহের প্রওয়াজন হয় তখন গরুর ক্যালসিয়াম ইনজেকশন শিরায় বা রগে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। বাজারে এই ইসজেকশন প্রায় সকল ছোট বড় ভেটেরিনারি ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। কিছু গরুর ক্যালসিয়াম ইনজেকশনের নাম উল্লেখ করা হলো-

ক্যালডি ম্যাগ (Cal-D Mag)- রেনাটা, ম্যাজিক্যাল (Magical)- এসকেএফ। পাওডার ফর্মেও এই গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ টি পাওয়া যায়। এই পাওডার ওয়াটার সলিবল বা পানিতে দ্রবণিয় হওয়ায় পানির সাথে মিশিয়ে গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারে ব্যবহার করা হয়।

এই ঔষধ টির ব্যবহার লেয়ার মুরগির খামারে বেশি হতে দেখা যায়। কেননা লেয়ার মুরগির ডিমের গঠন ও ডিমের প্রোডাকশন ঠিক রাখতে প্রচুর পরিমানে এর প্রয়োজন হয়ে থাকে।

গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট

ছাগল গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট মার্কেটে পাওয়া গেলেও এর ব্যবহার খুব কম দেখা যায়। কেননা খামারি গবাদিপশুকে বোলাস বা ট্যাবলেট আকারে খাওয়ানোর চেয়ে ওরাল সলুশন আকারে পানি বা খাদ্যের সাথে ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে।

ছাগল গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটের দাম তুলনামুলক কম হওয়ায় স্বল্প খরচে খাগল বা ভেড়ার জন্য বেশি ব্যবহার হয়। মুলত গরুর শরীরে চাহিদা অনেক বেশি থাকায় ইনজেকশন বা ওরাল সাসপেনশন আকারে প্রয়োগ করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

সিপি-ভেট প্লাচ (CP_Vet Plus Tablet) ট্যাবলেট (একমি)

বিভিন্ন কোম্পাণির ক্যালসিয়াম ঔষধের তালিকা

নংকোম্পাণির নামঔষধের নাম
০১এলানকো বাংলাদেশসানক্যাল পি
০২রেনেটা লিমিটেডরেনাক্যাল পি
০৩একমি ল্যাবরেটরিসসিপি ভেট
০৪স্পীড কেয়ার ক্যালডি সল
০৫ইয়নমেগাফস
০৬অপসোনিনমেগাক্যাল পিডি
০৭অরিয়নএভিক্যাল
০৮এসিআইক্যালভেট পি / বোনাক্যাল পি
০৯স্কয়ার ক্যাল পি / ক্যালভিট পি
১০গ্লোব ফার্মাজি ক্যাল পি

আরো পড়ুন: সয়াবিন মিল- পশু-পাখির প্রোটিনের প্রধান উৎস