গবাদি পশুর নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা জনিত রোগ, চিকিৎসা ও ঔষধ

গবাদি পশুর নিউমোনিয়া

গবাদি পশুর নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা জনিত রোগ, চিকিৎসা ও ঔষধ। শীতকালে গবাদি পশুর মধ্যে ঠান্ডা কাশি ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গবাদি পশুর নিউমোনিয়া (pneumonia in cattle) বলতে ফুসফুসের প্রদাহ এবং তার সংঙ্গে ব্রংকিউলের প্রদাহকে বুঝায়।

গবাদি পশুর নিউমোনিয়ার কারণ

  • গবাদি পশু বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। যেমন- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ইত্যাদি।
  • শ্বাসনালীতে খাবার, পানি ও ঔষধ জাতীয় পদার্থ ঢুকলে এসপাইরেশন নিউমোনিয়া রোগ হয়।
  • অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, বৃষ্টিতে ভেজা, অতিরিক্ত ঠান্ডা ইত্যাদির থেকে এরোগ হতে পারে।

নিউমোনিয়ার লক্ষণ

  • অল্প জ্বর ও ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ।
  • ঘন ঘন কাঁশি দেয় ও পাঁজরে ব্যাথা পায়।
  • নাক দিয়ে সাদা সর্দি বের হতে দেখা যায়।
  • আক্রান্ত পশু অনেক সময় কাশতে থাকে।
  • আক্রান্ত প্রাণির বুকের মধ্যে গড় গড় শব্দ হয় ও খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয়।
  • শরীরের তাপমাত্রা এক পর্যায়ে কমে যায়, পশু শুয়ে পড়ে এবং শেষে শ্বাসকষ্টে মারা যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

এন্টিবায়টিক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। সেক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড ভেটেরীনারি ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ প্রয়োগ করাতে হবে। অধিকাংশ সময় ডাক্তারেরা সেফট্রাইএক্সন অথবা অন্য কোন শক্তিশালী এন্টিবায়টিক ইনজেকশন সাজেস্ট করেন। এছাড়াও জ্বর ও ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। সেই সাথে কফ রিলিজ করার জন্য ব্রোমোহেক্সিন হাইড্রোক্লোরাইড জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়।

গবাদি পশুর নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা জনিত রোগ

বাছুরের নিউমোনিয়ার চিকিৎসা

গবাদি পশুর মধ্যে বাছুরের নিউমোনিয়া বেশি হতে দেখা যায়। বাছুরের নিউমোনিয়া হলে মৃত্যুর ঝুকি বেশি থাকে। আর তাই বাছুর জন্মের পর থেকে জীবাণু মুক্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বাছুরের নিউমোনিয়ার চিকিৎসা হিসাবে যা বলা প্রয়োজন তা হলো বাছুরকে দ্রুত উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যেতে হবে। এতে ডাক্তার বাছুর পর্যবেক্ষন করে চিকিৎসাপত্র প্রদান করবে।

গরুর নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা

  • শক্তিশালী এন্টিবায়টিক যেমন- ট্রাইজন ভেট/ট্রাইজেক্ট ভেট/এসিসেফ-৩/মারবো ভেট ইত্যাদির যেকোন একটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে ফাস্ট ভেট/এসিটামল ভেট/ এইচ ভেট বোলাস ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে।
  • গলায় আটকে থাকা কফ্ বেরকরার জন্য কোল্ড কেয়ার ভেট বোলাস খাওয়ানো যেতে পারে।

ছাগলের ঠান্ডা লাগলে করণীয়

ছাগল মাটির মেঝেতে পালন করা হলে ছাগলের ঠান্ডালাগা রোগ হওয়ার ঝুকি বেশি থাকে। আর তাই ছাগলকে মাটি থেকে ৩ ফুট উচুতে মাচায় পালন করতে হবে। ছাগলের বাচ্চার ঠান্ডা লাগার প্রবনতা বেশি থাকে কেননা এ সময় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। ছাগলের ঠান্ডা লাগলে করণীয় হলো ছাগলকে প্রথমে শুষ্ক ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জ্বরের জন্য ছাগলকে প্যারছিটামল জাতীয় ঔষধ দিতে হবে। সেই সাথে কাশির সিরাপ ও এমক্সাসিলিন অথবা সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় এন্টিবায়টিক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়তে পারে।

ছাগলের নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা

সাধারণ ঠান্ডা ও কাশির পাশাপাশি ছাগলের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। ছাগলের নিউমোনিয়া হলে শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। ফুসফুসে ব্যাথা হয়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ছাগলের মৃত্যু হতে পারে। ছাগলের নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা গরুর নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসার অনুরূপ করা যেতে পারে। একজন অভিগ্য প্রণি চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। বাজারে অনেক প্রকারের ছাগলের ঠান্ডার ওষুধ পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন: গবাদি পশুর ম্যাস্টাইটিস বা ওলান পাকা রোগ (Mastitis in cows)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *