কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল-বীজ। কাজু গাছ থেকে কাজু ফল ও কাজু বাদাম পাওয়া যায়। ফলের নিচের দিকে বীজটি বের হয়ে থাকে যা কাজু বাদাম নামে পরিচিত। এটি অনেক দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরি ফসল। এই গাছের আদি নিবাস ব্রাজিল। সারাবিশ্বে বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে এটি চাষ হয়।
কাজু গাছ পরিচিতি
উদ্ধিদের নাম | কাজু (cashew) |
মাছের বৈজ্ঞানিক নাম | Anacardium occidentale |
প্রচলিত নাম | — |
দৈহিক গঠন | এরা বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছ ঝাকড়া হয় ও এর শাখা-প্রশশাখায় ফল ঝুলতে থাকে। পাতা গাড় সবুজ ও কিছুটা লেবুর মত গোলাকার। আমের মুকুরের মত প্রথমে ফুল ও পরে ধারাবাহিক ভাবে ফল ধরতে থাকে। জানুয়ারী মাসে গাছে ফুল আসতে দেখা যায়। সাধারণত রোপনের ১ বরছ থেকে ফল ও বাদাম পাওয়া যায়। |
প্রাপ্তি স্থান | ব্রাজিল ও এর আশেপাশের দেশগুলো, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও এর আশেপাশের দেশ গুরোতে পাওয়া যায়। তবে শীত প্রধান দেশে এই গাছ জন্মাতে দেখা যায় না। |
উৎপাদন | একটি গাছ ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বেচে থাকে এবং ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল ও বাদাম পাওয়া যায়। গাছ থেকে ভালো কাঠ পাওয়া য়ায়, কাজু ফল থেকে জুস, ভিনেগার, এলকোহল, গাম ইত্যাদি তৈরি করা হয়। |
চারা/প্রজনন | বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। এভাড়াও এর কলম বেশ জনপ্রীয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এই গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকে। |
চারার দাম | এই গাছের প্রতিটি চারার দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এর মত হয়ে থাকে। |
কাজু ফল
কাজু ফল দেখতে কিছুটা জামরুরের মত তবে আকারে আপেলের মত বড় হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের দেখায় পাকলে হলুদ বা গোলপী রঙের হয়ে থাকে। এই ফল খেতে হালকা টক যুক্ত এবং স্বুসাদু। ফল থেকে জুস, ভিনিগার এবং অ্যালকোহল তৈরি করা যায়।
কাজু বাদাম
স্বাস্থ্য সচেতন ব্যাক্তিদের কাছে কাজু বাদাম গুরুত্বের সাথে বিবেচনা হয়। বিভিন্ন মিষ্টি দ্রব্যে এই বাদামের ব্যবহার খাবারের স্বাদকে একটি ভিন্নতা প্রদান করে।

কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ
মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জাতীয় পুষ্টি উপাত্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুসারে, ১ আউন্স কাঁচা কাজু (২৮.৩৫ গ্রাম) রয়েছে:
- ক্যালরি- 157 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট- 8.56 গ্রাম
- চিনি- 1.68 গ্রাম
- ফাইবার- 0.9 গ্রাম
- প্রোটিন- 5.17 গ্রাম
- মোট চর্বি- 12.43 গ্রাম
- ক্যালসিয়াম- 10 মিলিগ্রাম (মিলিগ্রাম
- আয়রণ- 1.89 মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম- 83 মিলিগ্রাম
- ফসফরাস- 168 মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম- 187 মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম- 3 মিলিগ্রাম
- জিংক- 1.64 মিলিগ্রাম
প্রাপ্ত ভিটামিন
ভিটামিন এ, থায়ামিন (বি১), রাইবোফ্লেভিন (বি২), নায়াসিন (বি৩), প্যানটোথেনিক, অ্যাসিড (বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (বি৯), ভিটামিন বি১২, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে ইত্যাদি ভিটামিন বিভিন্ন পরিমানে পাওয়া যায়্
প্রাপ্ত খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম, কপার, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, জিংক ইত্যাদি খনিজ বিভিন্ন পরিমানে পাওয়া যায।
কাজু বাদামের উপকারিতা
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের নানাবিধ উপকারে আসে। হাড়ের জন্য অনেক উপকারী, ওজন কমাতে, হার্টকে ভালো রাখতে এবং ডায়বেটিস রোগে এটি দারুন উপকারি।
- এই বাদামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
- এই বাদামের ম্যাগনেসিয়াম মানুষের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্টকে সুরক্ষিত রাখে। সুস্থ হার্টের জন্য কাজু বাদামের ভুমিকা অপরিসিম।
- এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে।
- ডায়াবেটিস রোগের জন্যও উপকারী হিসেবে কাজ করে এই বাদাম।
- এই বাদামে উপস্থিত কপার চুলের গোড়াকে শক্ত করার পাশাপাশি চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে কাজুবাদামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষার্থীদের মেধাশক্তি বৃদ্ধিতে এবং বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য চিকিৎসকরা কাজুবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- কাজুবাদামের ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের টিস্যুর শক্তি বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটিকে ব্রেনের পাওয়ার বুস্টারও বলা হয়ে থাকে।

খাওয়ার নিয়ম
কাজু বাদাম চিবিয়ে ও রান্না করেও খাওয়া যায়। এটি রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে ফিরনি, সেমাইয়ে অনন্য স্বাদ যোগ করে। এবার জানবো কাজু বাদাম কিভাবে খেতে হয়, শারীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজু বাদামের মাহাত্ম সর্বজন স্বীকিৃত।
দিনে ৩-৪ টি কাজু বাদাম খেলে শরীরে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়। এতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন থাকার কারনে অনেকেই একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট বলে থাকেন।
কাজু বাদামের দাম
বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকায় স্বল্প পরিসরে আবাদ হলেও দেশের চাহিদার প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে আমদানীর উপর আর একারনেই কাজু বাদামের দাম কখনো স্থীতিশীল থাকে না এবং স্থান-কাল ভেদে দামের পার্থক্য দেখা যায়।
করোনা পরবর্তি সময়ে কাজু বাদাম খুচরা দোকানে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দামে এটি বিক্রি হতে দেখা যায়। শহরের পাইকারী দোকানে এর দাম রাখা হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দেশের চাহিদার বেশির ভাগই আমদানী হয় ভারত ও ব্রাজিল থেকে।
চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশের জলবায়ু কাজু বাদাম চাষের জন্য উপযোগী। পাহাড়ি অঞ্চল বিশেষ করে চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন জেলায় কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এলাকায় অল্প মূল্যে প্রচুর জমি পাওয়া যায়, যা এই বাদাম চাষের জন্য উপযুক্ত।
রোপণ পদ্ধতি
বীজ থেকে খুব সহজেই চারা তৈরি করা যায় এবং গুটি কলম, জোড় কলম, চোখ কলম ইত্যাদি পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করা যায়। চারা রোপণের আগে ৭-৮ মিটার দূরত্বে পরিমান মত গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তে জৈব সার ও রানায়নিক সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ভরাট করতে হবে। ১৫ দিন পর বীজ বা চারা রোপন করতে হবে।
সার ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনা
এই গাছে খুব একটা সার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। তবে ভাল ফলনের জন্য গাছে ফুল আসার আগে প্রতিটি ফলন্ত গাছের জন্য গোবর সার-৪০ কেজি, ইউরিয়া সার-১ কেজি, টিএসপি সার-১ কেজি এবং এমপি সার-১ কেজি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পাতা শোষক পোকার আক্রমন হয় এবং পাতা খেয়ে গাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত করে। তাই বছরে অন্তত ১ বার কীটনাশক প্রয়োগ করে কীটপতঙ্গ দমন করতে হবে। বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
বাদাম সংগ্রহ
সাধারণত মে থেকে জুন মাসে বাদাম পরিপক্ব হয়। এর পরপরই এ বাদাম সংগ্রহ করতে হয়। বাদাম পরিপক্ব হলে ফল থেকে পড়ে যায়। কাঁচা অবস্থায় ফল থেকে বাদামটি বেশ বড় এবং নরম থাকে। ফল পাকার ফলে বাদামটি ছোট এবং পরিপুষ্ট হয়। তখনই ফল সহ বাদাম সংগ্রহ করা হয়। অপরিপক্ব ফল থেকে কখনই মানসম্পন্ন কাজু বাদাম পাওয়া যায় না।
আরো পড়ুন- কালোজিরা- উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম